Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতির অপারেশন করল তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উজিরপুর (বরিশাল) উপজেলা সংবাদদাতা : উজিরপুর উপজেলার উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণীর এক নারী কর্মচারী ডাক্তার সেজে অর্থালোভে প্রবাসীর স্ত্রী প্রসূতি সোনিয়ার পেটে অস্ত্রোপচার করে। এতে প্রসূতির প্রস্রাবের থলি ছিঁড়ে য়ায়। এরপর বরিশাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার করলে সেখানে তার চিকিৎসা হয়। এ বিষয় প্রসূতির পিতা মো. শহিদুল ইসলাম বিচার চেয়ে সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মহাপরিচালক অধিদপ্তর ঢাকা, বিভাগীয় পরিচালক বরিশাল, সিভিল সার্জন বরিশাল, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকটি দপ্তরে আবেদন করেন। যার প্রেক্ষিতে বিভাগীয় পরিচালকের নির্দেশে সিভিল সার্জন ডা. যতীন চন্দ্র রায়কে সভাপতি করে ডা. তানিয়া আফরোজকে (গাইনি) সদস্য ও ডা. মুন্সী মবিনুল হক সদস্য, এই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। গত ৬ জানুয়ারি রাত ৩টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলার সাকরাল গ্রামের মো. শহিদুল ইসলামের মেয়ে একই গ্রামের প্রবাসী মো. বিপ্লব রাঢ়ীর স্ত্রী প্রসূতি সোনিয়া বেগমের (২৪) প্রসব বেদনা শুরু হলে মা তানজিলা বেগম ও পিতা মো. শহিদুল ইসলাম রাত ১০টার দিকে মেয়েকে উজিরপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ (জুনিয়ার কনস্যালটেন্ট গাইনি) চিকিৎসক না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত এখানে সন্তান প্রসব করিয়ে থাকেন তারই বহিঃপ্রকাশ এ ঘটনা। জরুরি বিভাগে কর্মরত তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী দেবী রানী কাঞ্চিলাল ডাক্তার সব্যসাচী (সানি)কে ফোন করে রোগী ভর্তি করেন। রাত ৩টায় প্রসূতির প্রসব বেদনা বেড়ে য়ায়। এ সময় দেবী রানী প্রসূতির মা-বাবার সাথে ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে সেবিকা বুলবুল রায়কে সাথে নিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ত্রোপচার শুরু করে। দেবী রানীর টানা-হেচড়া সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করলে আমরা বাবার ডাক্তার ডাকতে বলি, না হয় বরিশাল রেফার করতে বলি। সে আমাদের কোনো কথা না শুনে গায়ের জোরে সন্তান ভূমিষ্ঠ করান। পরবর্তীতে যেমন রক্ত যায় তেমন ব্যথা স্যাকমো দেবী রানী বলেন ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি নিতান্ত গরিব, দিনমজুর তাই দেবী রানীর হাতে ৩২ শত টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে না পারার জন্য কয়েকবার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ায় সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে পরের দিন ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে আমাদের কোনো কথাই কর্ণপাত না করে দেবী রানী রোগীর নামকেটে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। উপায়ান্তর না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে গেলেও মেয়ের সঙ্কটাপন্ন অবস্থাদেখে বরিশাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করি। স্ত্রীরোগ বিশেষঞ্জ ডাক্তার তানিয়া আফরোজ জানান, প্রসূতির প্র¯্রাবের থলি ছিঁড়ে যাওয়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাই তাকে বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ বিষয় স্যাকমো দেবী রানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যা করেছি কর্মরত ডাক্তারের অনুমতিতেই করেছি, তবে রোগীর পরিবারের সাথে আমাদের সমন্বয় হয়েছে এবং তারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার কাছে লিখিত দিয়েছেন। সহযোগী সেবিকা বুলবুল রায় বলেন, দেবী রানীর স্বামী জলিলুর রহমান প্রধানসহ কারি (হেড ক্লার্ক) এরা এখানের স্থানীয় তাই দেবী রানীর দাপটের কাছে আমরা জিম্মি অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একাজে সাহায্য করতে গিয়ে আমি তাকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম কিন্তু সে আমার কোনো কথা না শুনে গায়ের জোরে সন্তান প্র¯্রব করান। সেবিকা প্রধান পুতুল রানী বড়াল বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না আর ওনারাও আমাকে কিছুই জানায়নি। তবে দেবী রানীর বিষয় আমি কিছুই বলিব না। ঐদিন কর্তব্যরত ডাক্তার সব্যসাচী সানী বলেনÑ ভর্তির পরের কোনো কিছুই আমি জানি না আর ওরাও আমাকে কিছুই জানায়নি। পরিচালক (স্বাস্থ্য) বরিশাল বিভাগ, বিনয় কৃষ্ণ বালা বলেন, প্রাথমিক পর্যায় দেখার দায়িত্ব সিভিল সার্জনের আমি তাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সিভিল সার্জন এএফএম শফীউদ্দিন বলেনÑ আমরা তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হইবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ একেএম শামছ উদ্দীন বলেন, রোগীর পিতা মো. শহিদুল ইসলাম সাতটি দপ্তর উল্লেখ করে আমার বরাবরে স্যাকমো দেবী রানী বিচার চেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের  প্রতিবেদন পেয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা যায়, অক্টোবর ২০০৭ সনে স্যাকমো পদে দেবী রানী কাঞ্চিলাল যোগদান করেন। তার স্বামী জলিলুর রহমান প্রধান সহকারী (হেডক্লার্ক) পদে যোগদান করেন ডিসেম্বর ২০০৬ সালে। একই স্থানে ১০ বছর স্বামী-স্ত্রী চাকরি করায় ও স্থানীয় ব্যক্তি হওয়ার দাপটে আইন-কানুন ও কর্তৃপক্ষকে তোয়াক্কা না করে অর্থলোভে কর্তৃপক্ষের কারো সাথে দেবী রানী ভালো সম্পর্ক রেখে কসাইখানায় পরিণত করেছেন হাসপাতালকে। এই হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়মের চিত্র একাধিকবার সংবাদকর্মীরা তুলে ধরেও ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। যার কারণে অনিয়ম মাথা উঁচু করে নিয়মকে ধ্বংস করে দিয়েছে  হাসপাতালের। রোগী ও স্থানীয়দের দাবি, এই উপজেলার অজপাড়াগায়ের  গরিব, অসহায় মানুষের এবং যোগাযোগ ও নিকটবর্তী হওয়ার কারণে বানারীপাড়া, আগৈলঝারা, গৌরনদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ  মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রাণকেন্দ্র এই হাসপাতালটি। এই হাসপাতালটি থেকে অনিয়মকে পদদলিত করে নিয়মকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ২ থেকে ৩ বছরের ঊর্ধেŸ থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করে নতুনদের নিয়োগ দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি একান্তই দাবি করেন।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ