Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঁচ বছরে রিজার্ভের ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গঠিত হবে ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জনস্বার্থে যে কোনো কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্তসহ মন্ত্রিসভার অনুমোদন
বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ‘অলস’ অর্থ থেকে পাঁচ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই তহবিল গঠিত হলে সরকার এর অর্থ ‘জনস্বার্থে যে কোনো কাজে’ ব্যবহার করতে পারবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনে অর্থ বিভাগের প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
শফিউল আলম জানান, এই তহবিলের অনুমোদিত মূলধন হবে ১০ বিলিয়ন ডলার। বছরে দুই বিলয়ন ডলার করে পাঁচ বছরে এই ১০ বিলিয়ন ডলার হবে। এই তহবিল গঠনে আইন তৈরির পাশাপাশি কাঠামোও তৈরি করা হবে।
প্রাথমিকভাবে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এই তহবিল গঠন করা হবে। আমাদের রিজার্ভ যিদি ৩০-৩২ বিলিয়ন ডলারের হয়, ওখান  থেকে আমরা দুই বিলিয়ন ডলার নিলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না। অনেক দেশেই এ ধরনের তহবিল আছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, এটা আমাদের বড় প্রয়োজন হয় যখন বিদেশিদের সাথে ম্যাচিং ফান্ড করি, আমাদের ডলার দিতে হয়। দেখা গেল যে, কোনো বিদেশি ব্যাংক আমাদের লোন দিলো এবং বলা হল যে সরকার এত পারসেন্ট সমপরিমাণ ডলার  দেবে, তখন এটা সাপোর্ট দেয়ার জন্য আমাদের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এটা যদি হয় তাহলে আমাদের জন্য একটা ভালো সুবিধা হবে যে, আমরা এখান থেকে ওই টাকাটা পুনর্ভরণ করতে পারব।
এই তহবিলের বহুমুখী ব্যবহার হতে পারে জানিয়ে সচিব বলেন, সরকার ‘জনস্বার্থে’ যে কোনো বিনিয়োগে এর অর্থ ব্যবহার করতে পারবে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে তা কাজে লাগানো যাবে।
আইন ও কাঠামো তৈরি হলে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের এই প্রস্তাব পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, বর্তমানে বাইরের ব্যাংক থেকে ইনফরমালি লোন নেয়া হয়। এখন একটা সিস্টেমের মধ্যে আসবে। আইন হলে বিস্তারিত জানা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ উত্তরোত্তর বাড়ছে, গতকাল সোমবার এর পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
বৈঠকে কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৯৮৫ সালের এই আইনে শিরোনামে ‘কৃষিকাজ’ শব্দটি উল্লেখ ছিল না। এই আইন লঙ্ঘন করলে ১০ ধারায় শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। আগের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল দুই হাজার টাকা জরিমানা। নতুন আইনে দুই হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি সাত দিনের কারাদ- অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষিকাজে নলকূপের লাইসেন্স প্রদানে স্থানীয় কমিটির অনুমোদনসহ বিভিন্ন নিয়মকানুন বহাল রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের আইনে বলা ছিল, উপজেলা চেয়ারম্যানের লিখিত অভিযোগ ছাড়া এ আইনের অপরাধ আমলে নেয়া যাবে না। তবে নতুন আইনে সংক্ষিপ্ত বিচারের (সামারি ট্রায়াল) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এছাড়া মন্ত্রিসভায় মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ইভালুয়েশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া এবং এর ফলাফল মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্সের  ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা উন্নত অনেক দেশের সমান। এ থেকে বলা যায় যে, বাংলাদেশে কোনো প্রকার মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন হয় না। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০১৬’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৯৬১ সালের ইংরেজি এ আইনটি এখন বাংলায় রূপান্তর করতে হবে। তবে বর্তমানে বাণিজ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেগুলোকে নতুন এ আইনে অন্তর্ভুক্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংসহ আবারও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস আইন-২০১৭-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৯৭২ সালের আইনটি ১৯৭৭ ও ১৯৮৬ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে সংশোধন করা হয়। এ জন্য আইনটি পরিমার্জন করে বাংলায় অনুসরণ করা হয়েছে। এ আইনে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা যুক্ত করতে হবে। তবে এ আইনের পুরাতন ৫ নম্বর ধারাটি বাতিল করে নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। নতুন ধারায় বলা হয়েছেÑ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস ইনস্টিটিউটে অ্যাসোসিয়েট ও ফেলো অ্যাসোসিয়েট নামে দুই ধরনের সদস্য থাকবেন। আর ৬(৪) ধারায় বলা হয়েছে, সনদ বাতিল ও মুলতবি করার ক্ষমতা থাকবে ইনস্টিটিউটের। এখানে ২৫ জনের কমিটি থাকবে। ভুয়া সদস্য ও ভুয়া সনদ প্রমাণিত হলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, তিন বছরের কারাদ- বা উভয় দ- হতে পারে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) কর্তৃক প্রবর্তিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য কন্ট্রোল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অব শিপস’ ব্যালেন্সড ওয়াটার অ্যান্ড সেডিমেন্টস (বিডব্লিউএম)-২০০৪ এর খসড়া অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
 দশম জাতীয় সংসদের আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে  মন্ত্রিসভা বৈঠকে একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম শফিউল আলম মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে  মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের শুরুতে দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়।
তিনি জানান, বৈঠকে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারুদ্ধ অবস্থায় নিহত জাতীয় চার নেতার একজন এ এইচ এম কামরুজ্জামানের স্ত্রী জাহানারা জামানের মৃত্যুতেও একটি শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।



 

Show all comments
  • Fazlul Haque ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ২:২১ এএম says : 0
    Khub valo uddog
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ ব্যাংক

২৫ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ