পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাভাক : ২০১১ সালের মার্চে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ডেরা শহরের অধিবাসীদের দাবি ৬ বছর পর বিশ^শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাবে, তা কেউ ভাবেনি। কিন্তু কাজাখ রাজধানী আস্তানায় রাশিয়ার উদ্যোগে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে লড়াইরত পক্ষগুলোর মধ্যে শান্তি আলোচনা সফলভাবে সমাপ্তির মধ্য দিয়ে সে বিষয়টিই ঘটেছে।
এ আলোচনায় বিদেশি অংশগ্রহণকারীরা যারা উপস্থিত হয়নি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি এ আলোচনায় অংশ নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং প্রতিনিধি প্রেরণ না করে কাজাখস্তানে নিযুক্ত তার রাষ্ট্রদূতকে পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠায়। এটা হচ্ছে কৌশলগত মধ্যপ্রাচ্যে ওবামার হোয়াইট হাউসকে উপেক্ষা করার এক সন্দেহাতীত লক্ষণ। আস্তানা সম্মেলনে দেখা গেছে, ন্যাটোর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রকে পরিত্যাগ করছে এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অবসানে রাশিয়ার সাথে হাত মিলিয়েছে। এ ঘটনা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে বিশ^ ইতিহাসে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঘটনায় পরিণত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
এখনকার জন্য আস্তানা ঘটনা এক গর্বিত জাতীয়তাবাদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির পর মস্কোর প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঘৃণা বলিষ্ঠভাবে প্রতিহত করার সক্ষমতা দিয়েছে। “রাশিয়া হচ্ছে এক আঞ্চলিক শক্তি যে তার একেবারে কাছের প্রতিবেশীদের কাউকে কাউকে হুমকি দিচ্ছে, আর তা শক্তির বলে নয়Ñ দুর্বলতার কারণে।” মিত্র হিসেবে এক ন্যাটো সদস্যকে সাথে নিয়ে আস্তানা সম্মেলনে মধ্যমণি হয়ে রাশিয়া প্রদর্শন করেছে যে সে একটি পরাশক্তি।
দু’টি পর্যায়ে ক্রেমলিন এ মর্যাদা অর্জন করেছে। এক. ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে পতন থেকে বাঁচাতে সে সামরিক হস্তক্ষেপ করে। দুই. ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর পুতিন ছিলেন প্রথম বিদেশ নেতা যিনি তাকে টেলিফোন করেন ও অভিনন্দন জানান।
পরের মাসে এরদোগান তার ‘প্রিয় বন্ধু’ পুতিনের সাথে সাক্ষাতের জন্য সেন্ট পিটার্সবার্গে যান। ২০১৫ সালের নভেম্বরে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে একটি রুশ জঙ্গি বিমান গুলি করে নামানোর ঘটনায় দু’ দেশের সম্পর্কে ব্যাপক অবনতি হয়েছিল। তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ কেের পুতিন ঘোষণা করেন যে, আমরা সব সময় সংবিধানবহির্ভূত কোনো কর্মকারে দ্ব্যর্থহীন বিরোধী। তিনঘন্টাব্যাপী বৈঠকের পর দু’নেতা তাদের টানাপড়েনের শিকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক মেরামত করতে সম্মত হন। অন্যদিকে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈপরীত্যমূলক পদক্ষেপে এরদোগান বাশার আল আসাদের পদত্যাগের আহ্বান জানানো বন্ধ করেন। আস্তানা বৈঠক সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বিষয়ে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে জোট বন্ধনের দৃশ্যপট রচনা করে যে তুরস্ক আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের দৃঢ় সমর্থক ছিল।
২০১৫ সালের আগস্টে আসাদ দড়ির উপর হাঁটছিলেন। তার সৈন্যদের মনোবল একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। ইরানের অস্ত্র ও মিলিশিয়া এবং লেবাননের জঙ্গি গ্রুপ হেজবুল্লাহর সমর্থনও তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য অপর্যাপ্ত বলে প্রমাণিত হচ্ছিল যার সত্যতা মেলে সম্প্রতি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের কথায়। তিনি বলেন, মস্কো যদি সেপ্টেম্বরে হস্তক্ষেপ না করত তাহলে দু’ থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আসাদের পতন ঘটত।
জরুরি অস্ত্র সাহায্যের জন্য আসাদের সনির্বন্ধ অনুরোধের প্রেক্ষিতে ক্রেমলিনের সামরিক পরিকল্পনাকারীরা সিরিয়ার ধসে পড়া বিমান বাহিনীর কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা ফাঁক পূরণের সিদ্ধান্ত নেয় বিমান প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করে। সে সাথে ক্ষয়প্রাপ্ত ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান বহরকে শক্তিশালী করে তোলা হয়। এর বিনিময়ে সিরিয়া বিদেশে রাশিয়ার সর্বশেষ পদচিহ্নে পরিণত হয়। ভূমধ্যসাগর তীরের লাটাকিয়া বন্দরের বিমান ঘাঁটি একটি অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে রূপান্তরিত হয়। রাশিয়া সেখানে জঙ্গি বিমান, অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ট্যাংক, আর্টিলারি, সাঁজোয়া সৈন্যবাহী যান ও অত্যাধুনিক এস-৪০০ ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে।
সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপ যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রের সকল হিসেব নিকেশ পাল্টে দেয়। অক্টোবর ২০১৫ থেকে জুলাই ২০১৬-র মধ্যে উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা পুতিনের সাথে কথা বলতে মস্কো সফর করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সউদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, তারপর মোহাম্মদ বিন জায়েদ; সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক বাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক; কাতারের শাসক আমির তামিম বিন হামাদ আল সানি ও বাহরাইনের শাসক হামাদ বিন ইসা আল-খলিফা। বাহরাইন মার্কিন পঞ্চম নৌবহরের ঘাঁটি।
তুরস্কের ক্ষেত্রে পুতিন এরদোগানকে পুনরায় আশ^স্ত করেন যে, যে কোনো মূল্যে সিরিয়ার অখ-তা রক্ষা করা হবে। তার অর্থ হচ্ছে সিরিয়া ভূখ-ে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে পেন্টাগনের অভিযানে সমর্থন দিয়ে ওয়াশিংটনের সাহায্যে উত্তরপূর্ব সিরিয়ায় জাতীয়তাবাদী কুর্দিরা যে সিরীয় কুর্দি ছিটমহল সৃষ্টি করেছে এক পর্যায়ে তা আর থাকবে না।
এরদোগান কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রত্যাশার বিরোধী ও তা ব্যর্থ করে দিতে চায়। তুরস্ক আধা স্বায়ত্তশাসিত ইরাকি কুর্দিস্তান, তার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা ও সংলগ্ন সিরিয়ার কুর্দি ছিটমহল নিশ্চিত করতে চায় যাতে প্রথম মহাযুদ্ধের পর এ অঞ্চলের কুর্দিদের স্বপ্ন বৃহত্তর কুর্দিস্তান সৃষ্টির জন্য তারা একত্রিত না হতে পারে। কুর্দিদের প্রতি এরদোগানের লৌহকঠিন নীতি তার প্রতি জাতীয়তাবাদী অ্যাকশন পার্টির জোর অনুমোদন এনে দিয়েছে। তা গত ২০ জানুয়ারি এরদোগানের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির দিকে যেতে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য এরদোগানকে প্রয়োজনীয় সংসদের ৬০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেতে সাহায্য করে।
আস্তানা বৈঠকের শেষে রাশিয়া ২৯ ডিসেম্বর থেকে বলবৎ যুদ্ধবিরতি লংঘন মনিটর করার জন্য রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান একটি ত্রিপক্ষীয় কমিশন গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় সিরিয়া বিষয়ে জাতিসংঘ সম্মেলনের আগেই এ সংগঠনের বিশদ বিবরণ জানানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্রেমলিন জোর দিয়ে বলেছে যে সিরিয়া সরকার ও ১৪টি সিরীয় বিদ্রোহী গ্রুপের অংশগ্রহণভিত্তিক আস্তানা আলেনা জাতিসংঘ প্রক্রিয়ার পরিপূরক। এতে সিরিয়াবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্ট্যাফান ডি মিস্টুরার উপস্থিতি এবং রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান ও কাজাখস্তানের প্রতিনিধিদের সাথে আনুষ্ঠানিক ছবিতে তার অংশগ্রহণ রাশিয়ার নতুন নেতৃত্ব ভূমিকাকে তুলে ধরেছে।
আস্তানা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সবার মধ্যে সমঝোতার কারণে। প্রাথমিকভাবে উদারপন্থী ও উগ্রপন্থী বিদ্রোহীদের মধ্যে ওয়াশিংটনের পার্থক্য সৃষ্টিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। এভাবে তারা বাশারের বক্তব্যের সাথে একমত হয় যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র ধরবে তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। শেষে রাশিয়া উগ্রপন্থী জিহাদি গ্রুপগুলো ও অ-জিহাদি গ্রুপগুলের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করে। আস্তানা আলোচনার উদ্যোক্তারা শুধু আইএস ও জাবহাত আল নুসরাকেই (আল কায়েদার সাবেক শাখা সংগঠন আল নুসরা) বাদ দেয়নি, সিরীয় কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসকেও বাদ দিয়েছে যারা তুরস্কের মতে তুরস্কের কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র যাদের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে। যুদ্ধবিরতিতে আইএস ও জাবহাতের উপর সিরিয়া, রাশিয়া ও ইরানের হামলা বন্ধ রাখার কোনো কথা নেই।
সিরিয়া সরকার আলোচনায় শুধু বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর রাজনৈতিক প্রতিনিধিদেরই অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হবে বলে যে জেদ ধরেছিল তা পরিত্যাগ করে এবং বিরোধী উপদলগুলোর সামরিক কমান্ডারদের উপস্থিতি মেনে নেয়।
বাস্তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত পবির্তন ঘটে। তুর্কি উপপ্রধানমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক ২০ জানুয়ারি দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বলেন, তুরস্ক আসাদ ছাড়া আর কোনো সমাধানের উপর চাপ সৃষ্টি করবে না। আস্তানায় বিদ্রোহীদের প্রধান আলোচনাকারী মুহাম্মদ আলুশ স্বীকার করেন রাশিয়ানরা এ লড়াইয়ে পক্ষ হওয়ার পর্যায় থেকে সরে এসেছে এবং এখন নিশ্চয়তাদাতা হওয়ার চেষ্টা করছে। রাশিয়ানরা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে বাশার বিরোধী প্রতিনিধিদলকে একটি পজিশন পেপার দিয়েছে যাতে নয়া শাসন ব্যবস্থা, গণভোট ও নির্বাচনসহ প্রস্তাবিত সংবিধানের কথা রয়েছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের ৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে অগ্রগতির লক্ষণ আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে। যদি তা হয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তা হবে একটি বড় অভ্যুত্থান এবং পরিণতিতে তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে বিশ^শক্তি হিসেবে যখন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চাদপসরণ করবে।
* নিবন্ধকার দিলিপ হিরো ‘এ কমপ্রিহেনসিভ ডিকশনারি অব দি মিডল ইস্ট’ গ্রন্থের লেখক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।