Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এলাকাবাসী স্বাগত জানালেও বিরাজ করছে উচ্ছেদ আতঙ্ক

বনভূমিতে ওপেন কারাগার

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : সরকার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাগলিরবিল এলাকায় ৩২৫ একর বনভূমিতে ওপেন কারাগার স্থাপন করতে যাচ্ছে। এটি হবে মালয়েশিয়ার কমিউনিটি রিহ্যাবেলিটেশন প্রোগ্রাম (সিআরপি)-এর আদলে ক্ষুদে অপরাধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বা ওপেন কারাগার। এলাকাবাসী সরকারের ওপেন কারাগার স্থাপনের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেও উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে ওপেন কারাগার স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া এলাকাটিতে। সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ১৯৩৫ সালের গেজেট নোটিফিকেশনে রক্ষিত এই বিস্তীর্ণ বনভূমির একটি ব্যাপক অংশ জুড়েই রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষেত, খামার, বনজ-ফলদসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান, গবাদি পশুর খামার ও মাছের ঘের। যুগ যুগ ধরে এলাকার বাসিন্দারা এই বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এলাকার কমপক্ষে ২০০ পরিবার এ জমি নিয়েই জীবনধারণ করে থাকেন। এখন নানাভাবে এলাকাবাসীকে সরে যেতে বলা হচ্ছে বলে বাসিন্দারে অভিযোগ। তবে এলাকাবাসীর তাদের সহায় সম্পদ রক্ষা করে খালি জমিতে ওপেন কারাগার স্থাপনের পক্ষেই মত দিয়েছেন তারা। জানা গেছে, সরকার বনভূমির এই জমিতে (পরবর্তীতে খাসে রূপান্তরিত জমি) মালয়েশিয়ার কমিউনিটি রিহ্যাবেলিটেশন প্রোগ্রাম (সিআরপি)-এর আদলে ক্ষুদে অপরাধীদের পুনর্বাসন (ওপেন কারাগার) কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাগলিরবিল মৌজার আরএস দাগ নম্বর-৬০২ এবং তুলনামূলক বিএস দাগ নম্বর-৮০৩ এর পাহাড় শ্রেণী বনভূমি রয়েছে ৩২৫ একর। এখানে ১৯৬১ সালে তৎকালীন সরকার সেগুন গাছের বাগান সৃজন করলেও তা ১৮৫ সালের দিকে উজাড় হয়ে যায়। কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির জানিয়েছেন, এ পরিমাণ জমি ১৯৩৫ সালের গেজেট নোটিফিকেশন নম্বর ৪৯টি মূলে অন্যান্য ভূমির সাথে উক্ত ভূমিকে রক্ষিত বনভূমি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। জাতীয় বন নীতিমালা ১৯৯৪ অনুযায়ী বনায়ন ভিন্ন অন্য কাজে বনভূমি ব্যবহারের জন্য সরকার প্রধানের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া এ বনভূমি পাহাড়/টিলা শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেটি বন্দোবস্ত বা অধিগ্রহণের সুযোগ নেই। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গত ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিতভাবে আরো জানিয়েছেন, বনভূমিতে প্রাকৃতিক সেগুন বাগানসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন গাছপালা রয়েছে। স্থানটি উঁচু পাহাড় ও জংগলে পরিপূর্ণ। সেখানে রয়েছে বন্যপ্রাণীও। রক্ষিত বনভূমিতে কোন আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। ১৯৩৫ সালের গেজেট নোটিফিকেশন মূলে রক্ষিত বনভূমি হওয়ায় বন বিভাগের বনজায়গীরদারসহ স্থানীয় লোকজন বনভূমি সংরক্ষণের বিনিময়ে এসব ভূমি ব্যবহার করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বন বিভাগ বনজায়গীরদারদের বনভূমি সংরক্ষণের বিনিময়ে মাথাপিছু পাঁচ একর করে বনভূমি বরাদ্দ দিয়ে থাকে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য। এভাবে বনজায়গীরদারদের পরিবারের লোকজনও বংশানুক্রমে বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণসহ সরকারের বন বিভাগের সহায় সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে বনভূমিতে হালচাষ ও ক্ষেত-খামার এবং বাগান করে জীবিকা নির্বাহ করছে। পরবর্তীতে দেখা যায়, ১৯৩৫ সালের গেজেট নোটিফিকেশনের বনভূমির ৩১০ একর পাহাড় শ্রেণীর বনভূমি এক নম্বর খাস খতিয়ানে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। বনভূমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হবার পরই এখানে ওপেন কারাগার স্থাপনের পরিকল্পনার কথা উঠে। এলাকার বাসিন্দা ও বনজায়গিরদার মকতুল হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান- তাদের এলাকায় ওপেন কারাগার স্থাপিত হলে এই এলাকারই জীবন-যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। উপকৃত হব ওই এলাকাবাসী। কিন্তু তাদের দাবী হচ্ছে- এলাকার বাসিন্দাদের গড়ে তোলা ক্ষেত-খামার, বাগান ও মৎস্য খামার নষ্ট না করে খালি জমিতেই গড়ে তোলা হোক ওপেন কারাগারটি। সরকারি খাস জমিতে ক্ষেত-খামার ও বাগান করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার পিতা বনজায়গিরদার ছিলেন। তিনিও বন জায়গিরদার হিসেবে বন বিভাগের পাঁচ একর জমি পেয়েছিলেন। এতে তিনি অনেক টাকা খরচ করে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছের বাগান গড়ে তোলেছেন। সেখানে তিনি করেছন ১০টি মাছ চাষের পুকুর। সেখানে রয়েছে ২৫ হাজার হাই ব্রিড চিকন পাতা ও বড় পাতার গাছ। আম, লিচু ও সফেদা গাছ রয়েছে দুই হাজার মত। ৫/৭ একর ভূমিতে রয়েছে বাঁশ বাগান। এই ভূমি থেকে তারা উচ্ছেদ হয়ে গেলে তাদের আর কোন সহায় সম্পদ থাকবে না। তদুপরি এ জমি ছিল বন বিভাগের গেজেট করা বনভূমি। এ জমি খাস হবার তথ্য এলাকাবাসীর নিকট জানা ছিল না। মকতুল হোসেন আরো জানান- তিনি ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ একর জমিজুড়ে বিভিন্ন ফলজ সহ নানা প্রজাতির গাছের বাগান করেছেন। করেছেন ক্ষেত-খামার ও মাছের ঘের। এসব নিয়েই তিনি জীবন ধারণ করে থাকেন। ২৫/৩০ বছর ধরে তিনি এই জমি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। সেখান থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হলে তার কি হবে? জাফর আলম নামের ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তার কয়েক একর জমিজুড়ে আম বাগান রয়েছে। ক্ষেত-খামারও রয়েছে। এসব নিয়েই তার সংসার চলে। মামুনুর রশিদ ও সিরাজুল হকসহ অন্য বাসিন্দারা জানান- তাদের প্রত্যেকেরই এ জমিতে ক্ষেত-খামার রয়েছে। এলাকার কমপক্ষে ২০০ পরিবারের লোক এ জমির ফসল নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তারা সবাই ওপেন কারাগার চায়। তবে সেই কারাগারটি স্থাপন করা হোক যেখানে জমি খালি রয়েছে সেখানে। জানা গেছে, পাশে আরো ৪শ একর ভূমি খালি পড়ে আছে। এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করেই পাশে আরো যে বিস্তীর্ণ খালি জায়গা রয়েছে সেখানে ওপেন কারাগারটি স্থাপনের জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ