পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720453448](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘পুরান চাল ভাতে বাড়ে’ প্রবাদের মতোই বয়োবৃদ্ধ এবং সত্তুরোর্ধ্বরাই প্রশাসনিক কাজে সাফল্য দেখাচ্ছেন। মন্ত্রিসভা এবং প্রশাসনিক কাজে দেখা যাচ্ছে প্রবীণরা নিজেদের প্রজ্ঞা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, ডিগনিটি বজায় রেখেই চৌকসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক আমলারা কোথাও দায়িত্ব পেলে অতীত কর্মের অভিজ্ঞতার আলোকে বৈধ-অবৈধ নানা চাপ উপেক্ষা করার সক্ষমতা রাখেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ় হন। বর্তমান মন্ত্রিসভার দিকে তাকালেই সেটা চোখে পড়ে। অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীর কর্মতৎপরতার দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়। তাদের সবার বয়স ৭০-এর ওপর। দু-একজন ব্যতিক্রম হলেও ৭০-এর নিচের বয়সের মন্ত্রীদের চেয়ে সত্তুরোর্ধ্ব মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি বেশি। তাদের মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিও কম হয় বলে প্রচারণা রয়েছে। বর্তমান মহামান্য প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ এবং বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বয়স প্রায় ৭৩ বছর। অথচ সার্চ কমিটি নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে বয়সসীমা বেঁধে দিচ্ছে ৭০ বছর!
কয়েক বছর আগেও মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬০-এর ঘরে। বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭১ বছর। অথচ সার্চ কমিটি নতুন নির্বাচন কমিশনে দেশের প্রশাসনিক প্রজ্ঞাবানদের সেবা ৭০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছেন কেন?
দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে আগামীতে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানুষের ভোটের অধিকার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র কার্যত গৃহবন্দী। বদ্ধ পুকুরের পানির মতোই গণতন্ত্র চর্চার গুমোট রাজনীতি। প্রেসিডেন্টের বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের উদ্যোগে কিছুটা গুমোট রাজনীতিতে কিছুটা সুস্থির বাতাস বইতে শরু করেছে। নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির দক্ষ-প্রাজ্ঞ-দলনিরপেক্ষ ব্যক্তির অনুসন্ধানে টানেলের শেষ প্রাপ্তে আশার আলোর ঝিলিক দেখা দেয়। নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির ‘৭০ বছর বয়সের সীমাবদ্ধতায়’ যেন সে আলো নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সন্দেহ বাতিক জাতির মধ্যে শুরু হয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। সার্চ কমিটি ইতোমধ্যেই ২০ জনের নামের তালিকা প্রণয়ন করেছে এবং ৭০ বছর বয়সের অধিক বয়সীদের নতুন ইসিতে না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। নতুন ইসিতে ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সীদের না নেয়ার ইঙ্গিতে সর্বত্রই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সুশীলসমাজ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী এবং আমজনতা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন সার্চ কমিটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ইসি গঠনে দক্ষ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ব্যক্তির অনুসন্ধান করছেন; নাকি পর্দার আড়ালের কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগী হচ্ছেন? জাতির প্রয়োজনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারেন এমন ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে নতুন ইসি সময়ের দাবি। যারা ক্ষমতাসীনদের চাপ উপেক্ষা করে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রেখে প্রশাসনিক প্রাজ্ঞতা ও নিজস্ব স্বকীয়তায় জাতিকে নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবেন এমন ব্যক্তিদ্বয়ের প্রয়োজন ইসিতে। প্রাজ্ঞ এবং প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বয়স বাধা হতে পারে না। বিশ্বের বহু দেশে ৮০ থেকে ৯০ বছর বয়সী ব্যক্তিত্বরাও সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় স্বার্থে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নতুন ইসিতে যদি ৭০ বছরের অধিক বয়সী যোগ্য, প্রাজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন সবার গ্রহণযোগ্য করা যায় তাহলে বাধা কোথায়? নাকি পর্দার আড়ালের কাউকে খুশি করতে ব্যক্তিবিশেষের পছন্দের কারো ইসিতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে ৭০ বছর বয়সসীমা বেঁধে দেয়া হচ্ছে? বর্তমান মন্ত্রিসভায় অনেক সদস্য রয়েছেন যাদের বয়স ৭৫ থেকে ৮৩ বছর। তুলনামূলকভাবে কম বয়সের মন্ত্রীদের চেয়ে তাদের পারফরম্যান্স ভালো। তাদের অভিজ্ঞতাই মন্ত্রণালয়ের কাজে গতিশীল করছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্ম ১৯৩৪ সালে। তার বর্তমান বয়স প্রায় ৮৪ বছর। এ বয়সে তিনি যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন মন্ত্রণালয় পরিচালনায়। বয়স তার কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতায় বাধা হতে পারেনি। মহামান্য প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের পয়লা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধানে না থাকার পরও তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমাতে সবার সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করেন। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৯৪৪ সালের ১৮ মে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৭২ বছর সাড়ে ৮ মাস। প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নেয়ার পর তাকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর জন্ম ১৯৪০ সালের পয়লা জানুয়ারি। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স ৭৭ বছর। প্রবীণ এই রাজনীতিক শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বয়স কাজে তার কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। ৭৮ বছর বয়সে তিনি দক্ষভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা নন; তিনি বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালে। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৮৮ বছর। এ বয়সে তিনি রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালনের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন।
এ ছাড়াও বর্ষীয়ান রাজনীতিক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালে, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের জন্ম ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৮ মে, ভূমিমন্ত্রী শামসুল রহমান শরিফের জন্ম ১৯৪০ সালের ১০ মার্চ (’৫২ ভাষা আন্দোলনের কর্মী), প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহীর জন্ম ১৯৪৫ সালে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর জন্ম ১৯৪৩ সালে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর জন্ম ১৯৪২ সালের ৩০ জুন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের জন্ম ১৯৪৫ সালের ৫ জুলাই, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন। যেসব মাননীয় মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করা হলো তাদের সবার বয়স ৭০ বছরের ওপরে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে এসব মন্ত্রীর বয়স কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং অনেক কম বয়সী মন্ত্রীর চেয়ে প্রতিদিন বেশি সময় কাজ করেন তারা। তারা দিনে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা মন্ত্রণালয় ও দলীয় কাজ করেন। মন্ত্রীরা ৭০ বছর বয়সের বেশি বয়সে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা দেখাতে পারলে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক পদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে ৭০ ঊর্ধ্বে ব্যক্তিদের নিয়োগে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে কেন?
সার্চ কমিটির সদস্য মহাহিসাব নিরীক্ষক মাসুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে আমরা যোগ্য, দক্ষ, মেধাবী এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চৌকস ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করব। সবার কাছে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যই শুধু নয়; পাশাপাশি চাপ উপেক্ষা করার সক্ষমতা রাখেন এবং সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ডিগনিটি দেখাতে পারেন তেমন ব্যক্তিকেই ইসিতে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করা হবে। নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির এই সদস্যের চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটবে সে প্রত্যাশা দেশবাসীর। গণতন্ত্র বিপন্ন। জাতির সামনে এ মুহূর্তে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সে নির্বাচন করতে নতুন ইসি গঠনে যোগ্য, মেধাবী ও দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা হতে পারে না। দেশের ১৬ কোটি মানুষ এ প্রত্যাশাই করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।