বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিপন্ন পরিবেশে ওরা ‘ভাল’ নেই
শফিউল আলম : মাঘের শেষ দিকে এসে শীতঋতুর বিদায়লগ্নে আর বসন্তের আগমনের প্রাক্কালে দেশের সমগ্র উপকূলজুড়ে অতিথি পাখির মেলা বসেছে। সর্বদক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙ্গর, পতেঙ্গা, হালিশহর, সীতাকু-, মিরসরাই, কর্ণফুলী নদীর মোহনা, আনোয়ারা, কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, বদরখালী, বৃহত্তর চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, উড়িরচর, নোয়াখালীর হাতিয়া নিঝুমদ্বীপ, ভোলা চরফ্যাসন, চরকুকরি-মুকরি হয়ে দক্ষিণে পাথরঘাটা, মহিপুর, দুবলার চর, সুন্দরবন, রায়মঙ্গল পর্যন্ত ৭১৫ কিলোমিটার সুদীর্ঘ বঙ্গোপসাগরের তটরেখা বরাবর এখন অতিথি পাখিদের মিলন মেলা জমে উঠেছে। হরেক জাত-প্রজাতির পাখ-পাখালীর ঝাঁক সমুদ্র সৈকতের আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সাগর কৈতর (কবুতর), সী-গাল, হাঁসসহ অসংখ্য প্রজাতির দেশি ও বিদেশি পাখিদের রাজ্য এ মুহূর্তে পুরো উপকূলজুড়ে।
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। নাতিশীতোষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলে এদেশের অবস্থান। শীতঋতুর শুরুতেই দেশের সমগ্র দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব সমুদ্র উপকূলভাগ জুড়ে এখন অপরূপ সাজে নির্জন প্রকৃতি। বাংলাদেশের অনতিদূরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা, সুদূর সাইবেরিয়া ও মেরু অঞ্চল ছাড়াও শীতপ্রধান দেশগুলোতে হিমশীতল মওসুম চলছে। এমনটি সময়ের হাঁড়-কনকনে শীত মানুষ ও অন্যসব প্রাণিকুলের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সাইবেরিয়া ও মেরু অঞ্চলের থরথর হাঁড়কাঁপানো শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় বিপর্যস্ত। শুধু তাই নয়, পশুপাখি, কৃষি-খামারসহ সবক্ষেত্রে পড়েছে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন ও শীতার্ত বৈরী আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
হিমালয় অঞ্চল, উত্তরের সাইবেরিয়া ও মেরু অঞ্চলে আবহাওয়ার বৈরী অবস্থায় বিচিত্র আকার, রঙ ও বর্ণের পাখ-পাখালী ঝাঁকে ঝাঁকে হাজার হাজার মাইল আকাশপথ ডানায় পাড়ি দিয়ে খানিকটা উষ্ণতার খোঁজে ছুটে এসেছে এবং এখনও আসছে বাংলাদেশে। অগুণতি সেসব অতিথি পাখির কলতানে দেশের সুবিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠেছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য বর্তমান সময়ের বাড়তি আকর্ষণ পাখিদের এই চোখ জুড়ানো মেলা। সমুদ্রের বুকে ঢেউয়ের আগায় জোয়ারের তালে তালে আনন্দে নেচে বেড়ায় হাজারো পাখ-পাখালী। সে এক অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য।
উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগরের বিশাল পানিরাশিতে দ্রবীভূত লোনা পানির হার অত্যধিক। মিঠা পানির চেয়ে সাগরের পানির ঘনত্বও বেশী। তাই দিনের বেলায় অধিক হারে তাপমাত্রা সঞ্চয়ন এবং উষ্ণতা বিকিরণ হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক নিয়মের ধারায় বৈজ্ঞানিক এ কারণে সাগর ও উপকূলে অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশী তাপমাত্রা বজায় থাকে। শীতঋতুতে বেশিরভাগ সময়ই কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাপমাত্রা দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশীই হয়ে থাকে। তাই শীতপ্রধান দেশের পাখিরা একটু উষ্ণতার পরশ খুঁজে পেতেই এখানে প্রতিবছর সেখানে ছুটে আসে। গ্রীষ্মকাল আসার আগেই আবার হাজার মাইল দূরের দেশে দেশে ফিরে যায়।
গাছ-গাছালির উপর বাসা ছেড়ে এসে খুব ভোর বেলায় হাজারো পাখি এখানকার স্বাস্থ্যোপযোগী আবহাওয়ায় সাগরবক্ষে কিংবা চরের ভেজা ও উষ্ণ মাটিতে গা এলিয়ে দেয়। আর দিনভর খাদ্যের অন্বেষণে চর, দ্বীপগুলোতে দল বেঁধে পাখিরা ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা লগ্নেই নীড়ে ফেরে।
এদিকে উপকূলে নির্বিচারে প্যারাবন ধ্বংসের কারণে অতিথি পাখিদের বাসস্থান সংকট, সমুদ্র সৈকত বরাবর ভেসে আবর্জনা ও বর্জ্যতেলের বিষাক্ত আস্তর জমে ওঠা, চোরা পাখি শিকারিদের অপতৎপরতা, জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত নিত্যনতুন সংকটের কারণে দেশের উপকূলবাসীর মতো শীতের পাখিরাও এখন আর ভাল নেই। সমুদ্রে দেশি-বিদেশি জাহাজ, ট্রলার, নৌযান থেকে জ্বালানি তেলের বর্জ্য নিঃসরণের কারণে জোয়ারের সময় তা সৈকতের কাছাকাছি জমাট বাঁধছে। আঠালো বর্জ্যতেল অতিথি পাখিদের পা, ডানায়, গায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। দূষিত ও পোড়া তেলের কার্বনে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অসংখ্য পাখি মারাও যাচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে উপকূলীয় এবং অতিথি পাখিদের বসবাসের পরিবেশ। তাছাড়া শীতের এ সময়ে চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চল, বন-বাদাড়, জলাশয়ে চোরা শিকারিদের হাতে অবাধেই চলছে হরেক প্রজাতির অতিথি পাখি শিকার। প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে পাখিদের নিরাপদ আবাস।
শীত ও বসন্তকালের অতিথি পাখিদের প্রতি সদয় না হলে অর্থাৎ পরিবেশ-প্রতিবেশ-বান্ধব সম্মিলিত প্রচেষ্টা না নেয়া হলে অতিথি পাখিদের আগমন বছর বছর হ্রাস পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।