Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কিছু ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্যই নাগরিকত্ব আইন : মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীন দলের একটি বিশেষ পরিবার ও কিছু ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্যই সরকার ‘নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ খসড়া’ প্রণয়ন করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বিকালে এক ‘নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, এই আইনের উদ্দেশ কী? অনেকে আলোচনা করেছেন, তাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যেটা বুঝি, এই আইনের উদ্দেশ হচ্ছে, তাদের (শাসকদল) ক্ষমতাকে আরো বেশি সংহত করা, শাসক গোষ্ঠির নিরাপত্তা প্রদান করা। অনেকে আলোচনা করেছেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট পরিবার বা কিছু ব্যক্তি বা শাসকগোষ্ঠির কিছু মানুষকে শুধুমাত্র প্রটেকশন দেয়ার জন্যই এই আইন করা হচ্ছে। এটা পরিস্কার যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সুপরিকল্পিতভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে যাচ্ছে। সেখানে অন্যকোনো মত, অন্য  কোনো পথ থাকবে না। তাদের চিন্তার মানুষগুলোই থাকবে- সেই লক্ষ্যে তারা একটার পর একটা আইন করে চলেছে। সরকারের এরকম আইনের খসড়ার বিরুদ্ধে সারাদেশে জনমত গড়ে তোলার আহ্বানও জানান মির্জা ফখরুল।
গুলশানে ‘লেকশোর’ হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ খসড়া নিয়ে এই আলোচনা সভা হয়। এতে বিএনপির সমর্থিত শিক্ষাবিদ ও আইনজীবীসহ পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের চরিত্রটা কী? তারা চরিত্র একটিই যেকোনো উপায়ে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় এবং ক্ষমতাকে টিকে থাকার জন্যেই গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দেখেন- সংসদকে একটা রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত করেছে। এখানে কোনো জনপ্রতিনিধিত্ব নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠান তারা দখলে নিয়েছে। দেশে কোনো আইনের শাসন নেই। মিডিয়াও তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
তিনি বলেন, এই সরকারের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দেশকে বিভক্ত করে, সমাজ ও জনগণকে বিভক্ত করে ক্ষমতায় টিকে থাকা। সেজন্য তারা একের পর এক আইন হচ্ছে।
নাগরিকত্ব আইনের খসড়ায় প্রবাসীদের বিষয়ে প্রস্তাবনার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই খসড়ায় প্রবাসীদের কথা বলা হয়েছে যে, তারা দেশে ফিরে আসলে ৬ বছরের আগে কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারবে না, কোনো সংগঠন করতে পারবে না এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এরকম একটা অদ্ভুত আইন এটি। মানুষের অধিকার হরণের এই রকমের আইন হতে পারে  না- এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনা।
দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে যে ব্যবহার করা হয়েছে তা তুলে ধরেন ফখরুল ইসলাম।
যেখানে বেগম খালেদা জিয়া বলছেন, এই আদালতের প্রতি আমার আস্থা নেই, সেখানে জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সাজা দেয়া যায়, সেজন্য একটার পর একটা মামলা দেয়া হচ্ছে। একটা মামলাকে দুইটা ভাগ করা হচ্ছে। সেটার জন্য বিশেষ ট্রইব্যুনাল করা হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগ- রাজশাহীতে নিয়ে যাচ্ছে, চট্টগ্রাম বিভাগের মামলায় চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে যতরকমের নির্যাতনমূলক, নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, এই সরকার তা করছে।
দেশের মৌলিক অধিকার হরণ করছে সরকার অভিযোগ করে তিনি বলেন, নাগরিকত্ব আমার মৌলিক অধিকার। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও প্রকৃতিক অধিকার। যেখানে আমি জন্মগ্রহণ করবো, সেখানে আমার নাগরিকত্ব থাকবে। আজকে মানুষকে নাগরিকত্বহীন করা হচ্ছে। সরকার যে নাগরিকত্ব হরণ করার নীল নকশা নিয়ে এগুচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতার অর্জনকে বিনষ্ট করছে, তাকে রুখে দাঁড়ানোর একমাত্র পথ হচ্ছে জনগণকে সংগঠিত করে এই সরকারকে বাধ্য করা একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দেশে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আইনটির খসড়া দেখে মনে হচ্ছে এটি হয় অপরিপক্কতা না হয় অমনোযোগিতায় করা হয়েছে। তা নাহলে এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। তাদের মাইন্ডসেটে কি আছে, কি উদ্দেশে করেছেন, তা তো আমরা জানি না। এটা কী কমিশন, এটা কী ছেলে-খেলা? আমি বলব, যেহেতু এই বিলটি এখনো সংসদে উঠে নাই। তাই সরকারের একটা সুযোগ আছে, এটাকে জনগণের কাছে তুলে ধরা, আলাপ-আলোচনা করা ও মতবিনিময় করা। তখন দেখা যাবে আইন করতে হয়, তবে আইনটিকে আরো পরিশুদ্ধ ও অনেক উন্নতমানের করা যাবে। আইনের খসড়াটি ‘নেতিবাচক’ বলেও মন্তব্য করেন সাবেক আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এটা জনস্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী একটি বিল। এটা আমাদের উচিৎ হবে আরো বেশি জনসমক্ষে নিয়ে আসা। এই আইনটি অ্যাপলাই করার কারণে আওয়ামী লীগের আমার যারা বন্ধু-বান্ধব আছেন, তাদের অনেকে আমেরিকায়, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন, অনেকের নাগরিকত্বের সন্দেহ রয়েছে, আমার মনে হয়, নামের একটা তালিকা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিৎ এখনই, আইন পাস করার আগে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই সংসদের কোনো জনপ্রনিধিত্ব নেই। এই সংসদে যদি কোনো আইন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে এ্টা তা উচ্চ আদালতে টিকবে না। তবে আমি বলতে চাই, এই সেমিনার কিংবা আলোচনা সভার মাধ্যমে অবৈধ সরকারের আইন ঠেকানো যাবে না। এর ফয়সালা হয় আদালত না রাজপথেই করতে হবে।
সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, এই আইনটির উদ্দেশ হচ্ছে, একটি পরিবারের অনেক বিদেশী নাগরিক সদস্য রয়ে গেছেন, তাদের হয়ত নাগরিক বানাতে হবে। এমন অনেক নাগরিক আছেন, যাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করতে হবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই্। এটি হচ্ছে এই নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ এর মূল স্পিরিট। এরকম আইন অমানবিক আইনের খসড়া, আন্তর্জাতিক সনদেরও পরিপন্থি। এটা কোনো নির্বাচিত সংসদ এ ধরণের আইন করতে পারে না।
দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুুল মঈন খান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাইনুল আহসান খান, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামান, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ডিবেড ফর ডেমোক্রেসি‘র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
খসড়া আইনের ওপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান  মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, এডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।
এই নাগরিক ভাবনার আলোচনায় বিএনপির নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, আবদুল মান্নান, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, গোলাম আকবর খন্দকার, আবদুল হালিম, কাজী মাজহারুল আনোয়ার, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সুজাউদ্দিন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, হেলাল খান, শিরিন সুলতানা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, শায়রুল কবির খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ