Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডাকাত আতঙ্কে ঘুমহীন রাত কাটে ৫ গ্রামের মানুষের

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : ডাকাত পাহারায় ঘুমহীন রাত পার করছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের পুবেরগাঁও, গুতুলিয়া, চারিতালুক, করটিয়া, দিঘুলিয়া গ্রামের মানুষ। এসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষই হতদরিদ্র, তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে কৃষিকাজ ও গৃহস্থালী। এ এলাকার প্রধান মাধ্যম কৃষিকাজ ও গৃহস্থালী হওয়ার কারণে কিশোর, যুবক থেকে শুরু নারী-পুরুষ প্রায় সবাইকেই সারাদিন মাঠে কাজ করতে হয়। দিন শেষে মাঠের কাজ শেষ করে যখন তাদের বিশ্রাম করার কথা তখন তাদের ডাকাতের হাত থেকে নিজেরদের রক্ষা করার জন্য রাতভর পাহারা দিতে হয়। রাতভর পাহারার পর সকালে আবার তাদেরকে কাজ করতে মাঠে যেতে হয়। এভাবে বিশ্রামহীন দিন পার করছে ভোলাবসহ আশপাশের এলাকাগুলোর মানুষ। এছাড়া পাহারা দিয়েও ডাকাত দলকে থামানো যাচ্ছে না। সুযোগ বুঝে লুটে নিচ্ছে গবাদি পশু থেকে শুরু করে স্বর্ণালংকার, প্রতিবাদ করলেই হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, ডাকাতদের সঙ্গে গ্রামবাসীর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা এখন নিত্যদিনের। গত কয়েক দিনে এলাকাগুলোতে বেশ কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতেররা নিরীহদের নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও খামার থেকে গরু লুট করে নিয়ে সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। গভীর রাতে এসকল এলাকাগুলো দিয়ে চলাচল করলে মানুষকে ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাণিজ্যিকভাবে গবাদি পশু পালনকারীদের পাশাপাশি নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের সাধারণ দরিদ্র গবাদি পশু পালনকারীরা। তাদের ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের টাকায় কেনা গরু আবার কারো সখের সোনার হার বিক্রি করে কেনা গরুগুলো রাতের আঁধারে ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে ডাকাতদল। এতে করে নিঃস্ব হচ্ছে স্থানীয় খামারীরা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে ডাকাতের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি বাসা-বাড়ি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ বেশ কয়েকটি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। জানা, গভীর রাতে ডাকাত দল প্রায় প্রতি দিনই হানা দিচ্ছে কোন না কোন বাড়িতে। ক্ষতিগ্রস্ত গরুর খামারি, কৃষক ও এলাকাবাসী জানান, ৩ মাস আগে পূবেরগাঁও এলাকার ইকবাল মিয়ার বাড়ির কেচিগেট ও দরজা ভেঙে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়, গত সপ্তাহে একই এলাকার শুক্কুরের বাড়ি থেকে তাকে বেঁধে রেখে দুইটি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায়, কয়েকদিন আগে শহিদুল্লাহর বাড়ি থেকে তাকে মারধর করে ৫ ভরি স্বর্ণসহ নগদ ১ লাখ টাকা টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এছাড়া ফারুক নামে এক রিক্সা চালকের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ওই রাতেই ডাকাত দল পুবেরগাঁও এলাকার আমজাদ মিয়ার বাড়ি থেকে তাকে মারধর করে নগদ টাকাসহ ১ লাখ টাকার মামলাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়, স্বর্ণখালী এলাকার সুলতানের দোকান থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাত দল, গুতুলিয়া এলাকার গুলজারের বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে মারধর করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে তার খামার থেকে ৩টি গাভী ডাকাতি করে নিয়ে ডাকাতের দল, জয়নালের বাড়ি থেকে ৬টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাতের দল।। এসকল কর্মকা-ে এলাকগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই রাত জেগেই পাহারা দিতে হচ্ছে খামারিদেরকে। এছাড়া চারিতালুক থেকে স্বর্ণখালী যাওয়া রাস্তাটি জনশূন্য হওয়ার কারণে এ রাস্তাটিতে প্রতিদিনই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এসকল এলাকাগুলোতে ছোট পরিসরে গড়ে উঠা এসব খামারে ২টি থেকে শুরু করে ১২টি গরু একসাথে পালন করে মাংস ও দুধের চাহিদা মেটানোর কাজ করে আসছে একটু সচ্ছলতা পাবার আশায়। নিজ পরিবারের পাশাপাশি দেশের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণে সহযোগিতা করে ডাকাত দলের হানায় চরম নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন তারা। স্থানীয় এনজিও থেকে চড়া সুদের ওপর ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র খামারিদের কেউ কেউ অনুৎসাহিত হয়ে চরম মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু সচ্ছলতা ফিরে পাবার আশায় বাড়ির গৃহবধূর সৌখিন সোনার হার, কানের দুল ও নাকের ফুল বিক্রি করে কেনা গরুগুলো রাতের আঁধারে ডাকাতির কবলে পড়ায় তাদের দুঃখের শেষ নেই। সহায় সম্বলহীন হয়ে কেউ কেউ বাড়ির ভিটে বিক্রি করে ঋণের বোঝামুক্ত হতে হচ্ছে। খামারিদের অভিযোগ, বেশকয়েকবার পুলিশকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পুলিশ টহল বাড়ানোর কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পুবেরগাঁও, চারিতালুক, গুতুলিয়া, করাতিয়া এসকল এলাকাগুলোতে বেশকয়েকটি বিল রয়েছে। যেখানে রাত হলেই জমে উঠে জুয়া ও মাদকের আসর। এ বিলগুলোতে প্রতিদিন প্রায় লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হয়। এসকল জুয়াড়িরাই ডাকাতির কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকবার এ ব্যাপারে পুলিশকে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ভোক্তভোগী খামারি জয়নাল মিয়া জানান, রাত হলেই তাদের আতঙ্কে থাকতে হয় এই বুঝি ডাকাত দল দিল। তিনি একটি বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৬টি গাভী নিয়ে একটি খামার গড়ে তোলেন। গাভী পালনের মাধ্যমে তার পরিবারের সদস্যদের দুধের চাহিদা মোটানোসহ দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতো। গত এক সপ্তাহ আগে ১০/১৬ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার খামারে হানা দিয়ে তাকে মারধর করে বেঁধে রেখে তার খামারের ৬টি গরুই ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাতের দল। জয়নাল অস্ত্রের মুখে পড়ে বাধ্য হয়েই তার শেষ সম্বল ডাকাতদের হাতে তুলে দিতে হয়। তার শেষ সম্বল ডাকাতদের হাতে তুলে দিয়ে জয়নাল এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) শাহদাত বলেন, জুয়া ও মাদক স্পটের কথা শুনেছি। স্পটগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, মাদক ও জুয়ার ব্যপারে কোন ছাড় নেই। যদি আমাদের কেউ এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে এবং তদন্ত করে তা প্রমাণ মিলে তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ