Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেরেনার ইতিহাস

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১৯৯৯ সালের ইউএস ওপেনের ফাইনালে সে সময়ের নাম্বার ওয়ান সুইস নারী মার্টিনা হিঙ্গিসকে হারিয়ে টেনিস দুনিয়ায় হই চই ফেলে দেন ১৭ বছরের অখ্যাত এক তরুণী। যা ছিল উন্মুক্ত যুগে তার দেশ আমেরিকার প্রথম কোন গ্রান্ড সø্যাম জয়। সেদিনের সেই তরুণীই আজকের সেরেনা উইলয়ামস। আগমনী বার্তাতেই যেন জানান দিয়েছিলেন টেনিস বিশ্বকে শাসন করতে আসেছেন তিনি।

ইমামুল হাবীব বাপ্পী : সম্প্রতি একটা জরিপ চালায় ব্রিটিশভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসি স্পোর্টস। ভক্তদের সবচেয়ে বেশি মেজর শিরোপাজয়ী সাতজন টেনিস তারকার একটা তালিকা তৈরি করতে বলে গণমাধ্যমটি। স্বভাবতই জরিপের ৪৯ শতাংশ ভোটারই তাদের সেরা টেনিস খেলোয়াড় হিসাবে বেছে নেন সেরেনা উইলয়ামসকে। নিকটতম স্টেফি গ্রাফ ভোট পান ৩৫ শতাংশ, ১৮টি গ্র্যান্ড সø্যামের মালিক মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা ১০ শতাংশ ভোট পেয়ে ঠাই পান তালিকার তৃতীয় স্থানে।
উন্মুক্ত যুগে রেকর্ড ২৩টি গ্র্যান্ড সø্যাম জয়ী টেনিস কিংবদন্তি সেরেনাকে আলাদা করেছে বেশ কয়েকটি কারণ। এর মধ্যে অবশ্যই বয়স অন্যতম। ৩৫ বছর বয়সে এসে গত সপ্তায় জিতেছেন সপ্তম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। ২০০২ সালের জুলাইয়ে প্রথম র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠা তারকা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালে এসেও সপ্তমবারের মত আবারো ফিরেছেন নিজ সিংহাসনে। একসময় স্টেফি গ্রাফের রেকর্ডে ভাগ বসিয়ে সাথে টানা ১৮৬ সপ্তাহ ছিলেন র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে। সব মিলে তার রেকর্ডটা ৩১০ সপ্তার। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শুরু করেছিলেন র‌্যাংকিংয়ে বেশ পিছিয়ে থেকে। কিন্তু একটা সেটও না হেরে শিরোপার পাশাপাশি র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানটাও দখলে নেন সেরেনা। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বছরের বাকি তিন গ্র্যান্ড সø্যামেও এমন অপ্রতিরোধ্য ধারাতেই দেখা যাবে আমেরিকান তারকাকে।
সেরেনাকে সর্বকালের সেরা উদ্বৃতি দেওয়ার লোকের অভাব নেই। বিবিসির স্পোর্টস উপস্থাপক ও সাবেক ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ী সু বার্কার এর কারণটাও জানালেন সহজভাবে, ‘সেরেনা হল সর্বকালের সেরা কারণ বর্তমান যুগে টেনিস আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ।’ সেরেনার বিশেষত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মুভমেন্ট ও শক্তি মিলে তার সার্ভিস সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে থেকে সর্বকালের সেরা, প্রতিদ্বন্দ্বীকে সে অবলীলায় পরাস্থ করে।’
এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালটা অবশ্য তার জন্য ছিল ভিন্ন অভিজ্ঞতার। ১৪ বছর আগে যাকে হারিয়ে আসরের প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন সেই বড় বোন ভেনাসের বিপক্ষে লড়তে হয়েছে তাকে। লড়াই বললে অবশ্য ভুল হবে, বয়সে এক বছরের বড় ভেনাসকে সরাসরি ৬-৪ ৬-৪ গেমে হারাতে সময় নেন মাত্র ৮২ মিনিট। এই শিরোপার মাধ্যমেই সেরেনা ছাড়িয়ে যান স্টেফি গ্রাফকে। উন্মুক্ত যুগে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড সø্যাম জয়ী নারীর নাম এখন সেরেনা উইলয়ামস। তবে সব সময়ের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ান মার্গ্যারেট কোর্টকে স্পর্শ করতে আরো একটি গ্র্যান্ড সø্যাম জিততে হবে এই মার্কিনকে।
১৯৯৯ সালের ইউএস ওপেনের ফাইনালে সেসময়ের নাম্বার ওয়ান সুইস নারী মার্টিনা হিঙ্গিসকে হারিয়ে টেনিস দুনিয়ায় হইচই ফেলে দেন ১৭ বছরের অখ্যাত এক তরুণী। যা ছিল উন্মুক্ত যুগে তার দেশ আমেরিকার প্রথম কোন গ্রান্ড সø্যাম জয়। সেদিনের সেই তরুণীই আজকের সেরেনা উইলয়ামস। আগমনী বার্তাতেই যেন জানান দিয়েছিলেন টেনিস বিশ্বকে শাসন করতে আসেছেন তিনি।
আরো অনেক বিশেষত্বই অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে সেরেনাকে। নারী ও পুরুষ এককে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি বছরের চার গ্র্যান্ড সø্যামের মধ্যে তিনটি জিতেছেন নুন্যতম ছয় বার। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ইউএস ওপেন জিতেছন রেকর্ড ৭বার করে। দুটি ভিন্ন দশকে ১০টি করে গ্র্যান্ড সø্যাম জয়ী একমাত্র খেলোয়াড়ও তিনি। হার্ডকোর্টে তার ১৩টি গ্র্যান্ড সø্যামও সর্বকালের রেকর্ড। পুরুষ ও নারী একক মিলে কোন গ্র্যান্ড সø্যামে সর্বোচ্চ ৩১৬টি ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও তার দখলে।
শুধু এককে নয়, বড় বোন ভেনাসের সাথে দ্বৈতে ১৪টি গ্র্যান্ড সø্যাম আছে সেরেনার। কোন গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে ওঠা মানেই যেন তাদের নিশ্চিত জয়। এখন পর্যন্ত এই বোনদ্বয়কে কোন জুটিই ফাইনালে হারতে পারেনি। দ্বৈতের গ্র্যান্ড সø্যাম সংখ্যায় অবশ্য তারা তিন নম্বরে। তবে অলিম্পিকে দ্বৈতে সর্বোচ্চ ৩টি স্বর্ণের রেকর্ড ভেনাসের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সেরেনা। এককেও স্বর্ণ জিতেছেন একবার।
শুধু টেনিস কোর্টে নয়, ফ্যাশন জগতেও আছে সেরেনার সফল পদচারণা। আছে নিজের নামে অনেক ব্র্যান্ড। সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা নারী ক্রিড়াবিদের তালিকাতেও শীর্ষদেশেই থাকে সেরেনার নাম। গেল বছরও তার প্রাইজমানি ছিল ২৮.৯ মিলিয়ন ডলার! বয়সকে শুধুমাত্র একটা সংখ্যা বানিয়ে টেনিস বিশ্বকে এখনো অনেক কিছুই দেবেন সেরেনা এমনই আশা টেনিস প্রেমীদের।


সেরেনা উইলয়ামসের যত গ্র্যান্ড সø্যাম
আসর    সাল
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন    ২০০৩, ২০০৫, ২০০৭, ২০০৯, ২০১০, ২০১৫, ২০১৭
ফ্রেঞ্চ ওপেন    ২০০২, ২০১৩, ২০১৫
উইলম্বডন    ২০০২, ২০০৩, ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৫, ২০১৬
ইউএস ওপেন    ১৯৯৯, ২০০২, ২০০৮, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন