যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
ফেদেরারই বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মেজরে কমপক্ষে ৫টি করে ট্রফি জিতেছে। ৫টি করে জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ও ইউএস ওপেনে। আর ৭টি জিতেছেন উইম্বলডন। এসব অর্জনের চেয়ে আরেকটা ব্যাপার নিশ্চয়ই
ফেদেরারকে বেশি স্ব^স্তি দিচ্ছে- নাদালজয়।
ইমরান মাহমুদ : একটা সময় ছিল যখন টেনিসের রোমাঞ্চকর ম্যাচ বলতে সবাই ধরে নিতেন রজার ফেদরার-রাফায়েল নাদাল দ্বৈরথের কথা। টেনিস কোর্টের মতো র্যাংকিংয়েও লড়াই চলত এই দুই টেনিস তারকার মধ্যে। কিন্তু লড়াইয়ে ভাটা পড়েছিল। গেল ছয় বছরে কোনো গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে দেখা যায়নি ফেদেরার-নাদালকে। অবশেষে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে দেখা হল এদের। যেখানে নাদালকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লেন ৩৫ বছর বয়সী ‘বুড়ো’ ফেদেরার। ৩৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বয়সী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে কোনো গ্র্যান্ড সø্যাম জিতলেন সুইজারল্যান্ডের এই টেনিস তারকা। এছাড়া নিজের শেষ গ্র্যান্ড সø্যাম জেতার পাঁচ বছর পর আবারও নিজের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিলেন রজার ফেদেরার।
সর্বশেষ ২০১২ সালে কোনো গ্র্যান্ড সø্যাম জিতেছিলেন ফেদেরার। টেনিস ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ও নিজের ১৮তম গ্র্যান্ড সø্যাম জেতার ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে সú্যানিশ টেনিস খেলোয়াড় নাদালকে ৬-৪, ৩-৬, ৬-১, ৩-৬, ৬-৩ গেমে হারান ফেদেরার। ২০০৭ সালের উইম্বলডন ওপেনের পর এই প্রথম নাদালকে হারিয়ে গ্র্যান্ড সø্যাম শিরোপা জিতলেন ফেদেরার। সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড সø্যাম জেতার রেকর্ড বেশ আগেই নিজের দখলে নিয়ে রেখেছিলেন ফেদেরার। পিট সাম্প্রাসের ১৪ গ্র্যান্ড সø্যাম জেতার রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন আট বছর আগেই। এবার ব্যবধানটা আরও বাড়িয়ে নিলেন ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় চলে আসা ফেদেরার।
এবারের অস্ট্রেলিয়া ওপেনের আগে নাদালের চেয়ে তিনটি বেশি গ্র্যান্ড সø্যামের মালিক ছিলেন ফেদেরার। ব্যবধানটাকে চারে নিয়ে গেলেন সর্বশেষ ২০১২ সালে উইম্বলডন ওপেনের শিরোপা জেতা ফেদেরার। দারুণভাবে ফিরে আসা নাদালের গ্র্যান্ড সø্যাম সংখ্যা তাই ১৪ তেই থেকে গেল। অথচ ক্লে কোর্টের রাজা বলা হয় নাদালকেই। এছাড়া ফেদেরারের সাথে আগের ৩৪ ম্যাচের ২৩টিতেই জয় পেয়েছিলেন নাদাল। রোববার মেলবোর্নেও আরেকটি জয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে সর্বশেষ গ্র্যান্ড সø্যাম জেতা নাদাল। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেই ধারায় থাকতে পারেননি তিনি।
সব রেকর্ডই রাফায়েল নাদালের পক্ষে ছিল। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ বার মুখোমুখি হয়েছেন দুজন, ২৩টি নাদাল জিতেছেন, ১১টিতে ফেদেরার। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নাদালকে কখনোই হারাতে পারেননি রজার ফেদেরার। ২০০৯ সালের সেই পাঁচ সেটের মহাকাব্যিক ফাইনালে ফেদেরারকে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিলেন নাদাল।
গত ১৫ মাসে কোনো ট্রফি জিততে পারেননি ফেদেরার। তাই এদিনের ফাইনালে পরিষ্কারভাবে ফেভারিট ছিলেন নাদাল। এই শিরোপা দীর্ঘ খরা ঘোচালেন তিনি। তা ছাড়া আট বছর হয়ে গেছে ফেদেরার সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন।
গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে নাদালের সঙ্গে মোট নয়বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে ফেদেরারের এটা তৃতীয় জয়। এর আগে সবশেষ ২০০৭ সালের উইম্বলডনের ফাইনালে জিতেছিলেন সুইস তারকা। গত দু’বছরে একাধিক ব্যর্থতার পর ফ্রেডিকে শুনতে হয়েছিল, ‘অনেক হলো। এবার আপনার বিদায় নেয়ার পালা।’ নাদালকে হারিয়ে এদিন সেইসব নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিলেন তিনি। আপ্লুত ফেদেরার ম্যাচ শেষে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। সেই সঙ্গে জানালেন, এই ট্রফি রাফার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান তিনি।
সুপার সানডেতে টেনিসের আকাশের দুই উজ্জ্বলতম নক্ষত্র নেমে এসেছিল মেলবোর্ন পার্কে। আর টক্করটা যখন সেয়ানে-সেয়ানে হয়, তখন উত্তেজনার পারদও থাকে তুঙ্গে। অন্যান্যবারের মতোই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনালও এক নজিরবিহীন ম্যাচের সাক্ষী থাকল। যেখানে জীবনের ১৮ তম মেজর খেতাব ঝুলিতে ভরে ইতিহাসে নাম লেখালেন ৩৫ বছর বয়সের এই সুইস তারকা।
এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়। প্রথম সেটের দখল নিলেন ফেদেরার, আবার দ্বিতীয় সেটেই বাজিমাত নাদালের। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়লেন না। আর ছুটির দিনে সেই টানটান হাইভোল্টেজ ম্যাচ উপভোগ করলেন দর্শকরা। নতুনদের ভিড়ে এই ম্যাচ যেন ছিল দুই তারকার কামব্যাকের লড়াই। দুনিয়ার কাছে আরও একবার নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ। বলাবহুল্য সেই মঞ্চে দু’জনেই সফল হলেন। প্রায় চার ঘণ্টা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইশেষে সú্যানিশ তারকাকে ৬-৪, ৩-৬, ৬-১, ৩-৬, ৬-৩ সেটে হারালেন ফ্রেডি। এই নিয়ে পঞ্চমবার অস্ট্রেলিয়া ওপেন চ্যাম্পিয়ন হলেন কিংবদন্তি ফেদেরার।
দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রথম সেটে নালাদকে ৬-৪ পয়েন্টে হারিয়ে দেন ফেদেরার। দ্বিতীয় সেটেই ঘুরে দাঁড়ান ৩০ বছর বয়সী নাদাল। দ্বিতীয় সেট জিতে নেন ৬-৩ ব্যবধানে। তৃতীয় সেটে আবার ফেদেরারের রাজত্ব। দাপটের সাথেই (৬-১) নাদালকে হারান এই সেটে। শিরোপা স^প্ন বাঁচিয়ে রাখার সেটে ফেদেরারকে ভালই ভুগিয়েছেন নাদাল। এই সেট জিতে নেন ৬-৩ ব্যবধানে। শেষ সেটটিও দারুণভাবে শুরু করেছিলেন নাদাল। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে হয়তো ১৫তম গ্র্যান্ড সø্যামের স^প্নই দেখছিলেন এই সú্যানিশ টেনিস তারকা। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেটা দাঁড়ায় ৩-৬। আর দারুণ এক জয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন ফেদেরার।
রাফায়েল নাদাল ও রজার ফেদেরার; সর্বকালের অন্যতম দুই সেরা টেনিস খেলোয়াড়ই অতীত হয়ে গিয়েছিলেন। দুই জনই ভুলে গিয়েছিলেন গ্র্যান্ড সø্যাম জিততে; কিন্তু এবারের অস্ট্রেলিয়া ওপেনে অতীত ফিরিয়ে এনে সেই নাদাল ও ফেদেরার উঠলেন ফাইনালে। এক ধ্রুপদি লড়াই দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলো বিশ্ব। বিশ্বকে একদম নিরাশ করেননি দুই জন। ম্যাচশেষে ফেদেরার বলেছেন, এই ট্রফিটা ভাগাভাগি হলে সেটাই সবচেয়ে মানানসই হতো!
তবে ফেদেরার যে রূপকথার জন্ম দিয়েছেন, তার কাছে এই লড়াইও মøান হয়ে গেছে। গত ছয় মাস ধরে ছিলেন কোর্টের বাইরে। ইনজুরির সাথে লড়তে থাকা ফেদেরার সর্বশেষ গ্র্যান্ড সø্যাম জিতেছিলেন ২০১২ সালে এবং সর্বশেষ এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন ২০১০ সালে। কার্যত, গত বছর পাচেক আগেই তার বিদায় দেখে ফেলেছিলো বিশ্ব। এই খেলাটা তরুণদের। তাই ইনজুরিতে জর্জরিত নাদাল এবং ফর্মহীনতা ও ইনজুরিগ্রস্তÍ ফেদেরারকে নিয়ে আর কোনো স্বপ্ন ছিলো না; কিন্তু সেই ফেদেরার, ছয় মাস ইনজুরি থেকে ফেরার পর প্রথম কোনো বড় টুর্নামেন্ট খেলতে নেমেই বাজিমাত করলেন। বুঝিয়ে দিলেন, ক্লাস আসলেই ‘পারমানেন্ট’।
এই ট্রফি জয়ের ভেতর দিয়ে নিজের অর্জনকে আরো উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেলেন ফেদেরার। টেনিস ইতিহাসের সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড সø্যামের মালিক আগে থেকেই তিনি; এখন সংখ্যাটা হয়ে গেলো ১৮। নিকটতম ১৪টি করে গ্র্যান্ড সø্যাম আছে নাদাল ও পিট সাম্প্রাসের। ফেদেরারের আরেকটি বিরলতম অর্জনও হলো। জিতলেন পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ট্রফি। ফেদেরারই বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মেজরে কমপক্ষে ৫টি করে ট্রফি জিতেছে। ৫টি করে জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ও ইউএস ওপেনে। আর ৭টি জিতেছেন উইম্বলডন। এসব অর্জনের চেয়ে আরেকটা ব্যাপার নিশ্চয়ই ফেদেরারকে বেশি স্ব^স্তি দিচ্ছে- নাদালজয়।
নিজের সময়ে অপরাজেয় থাকলেও এই নাদালই ছিলেন তার প্রধান কাঁটা। এর আগে ৮ বার দুই জন গ্র্যান্ড সø্যাম ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন; ৬ বারই জয় ছিলো নাদালের। এবার ইতিহাসটা সেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেই বদলালেন ফেদেরার। যেখানে একটি মাত্র ফাইনালেই জয় ছিলো নাদালের। অবশেষে ইতিহাস বদলালো, ইতিহাস নতুন করে লেখা হলো এবং ফিরে এলো টেনিসের এক অমর রূপকথা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।