Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরেন্দ্রের মাটিতে ফুটছে জার্বেরা

| প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাউটিয়া গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে জার্বেরা ফুল। সোসাইটি ফর আন্ডার প্রিভিলাইজড ফ্যামিলিস (সাফ) নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এই ফুলের চাষ করছেন। ভারতের পুণে থেকে কন্দ এনে তারা এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছেন। সংস্থার উদ্দেশ্য গোদাগাড়ীর কৃষকদের মধ্যে এই ফুল চাষ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং চাষে আগ্রহী করে তুলে কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা। একজন অন্যজনকে দেখে ফুল চাষে গোদাগাড়ীতে বিপ্লব ঘটে। কাঁকনহাটে অবস্থিত সাফ সংস্থার মানেজার এনামুল হক মাসুদ জানান, এই ফুলে চাষ ব্যয়বহুল হলেও লাভও কম নয়। বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কন্দ রোপণ করতে হয় আর এই কন্দগুলো অনেকটা আদার মতো দেখতে। একটি কন্দের দাম গড়ে ৪৫ টাকা বলে তিনি জানান। আর একটি কন্দ থেকে সাত থেকে আটটি শাখা বের হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, একবার চাষ করলে চার বৎসর একই গাছ ফুল দিতে থাকে। একটি গাছের ঝাড় হতে প্রতি বছর গড়ে ৪০টি অধিক ফুল পাওয়া যায় এবং বাজারে এক একটি ফুলের দাম বিশ টাকা। এক বিঘা জমিতে সার, কীটনাশক, বীজ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে দশ লক্ষ টাকা খরচ হয় বলে তিনি জানান। মানেজার বলেন, পাঁচ থেকে ছয়টি চাষ দিয়ে মাটি টুকরো করে বেড তৈরি করতে হয়। প্রতিটি পরিমাণ মতো বালি এবং ছাই ছিটিয়ে দেয়ার পর সত্তর থেকে আশি বস্তা নারকেলের গুঁড়া ছোবড়া মাটির সঙ্গে মিশ্রণ করতে হয় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ছোবড়া মাটিতে মিশ্রণ করলে ফুলের গাছের শেখর দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে গাছ সুন্দর, স্বাস্থ্যবান হয় এবং প্রতিনিয়ত ফুল দিতে থাকে। তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি পঞ্চাশ কেজি হাড়ের গুড়া, দুইশ’ কেজি কেঁচো সার, পঞ্চাশ কেজি টিএসপি সার, এমওপি পঞ্চাশ কেজি এবং রোবন ও দস্ত দুই কেজি করে প্রয়োগ করতে হবে। কন্দ রোপণের দশ থেকে বার দিন পূর্বে সকল প্রকার সার দিয়ে জমি তৈরি করে রেখে দিতে হবে বলে তিনি পরামর্শ প্রদান করেন। ফলে ফুলের গাছের কোনো ক্ষতি হয়না বলে তিনি জানান। রাসায়নিক সার গাছের পাতা গজানোর পরে দিতে বলে তিনি কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করেন। প্রতিমাসে একবার কিংবা প্রয়োজনে দুইবার দুই বস্তা কেঁচো সার, পনের কেজি হাড়ের গুঁড়া ও পঁচিশ কেজি ডিএপি সার প্রয়োগ করতে হবে এছাড়াও প্রয়োজনে ইউরিয়া সার ও পাঁচ থেকে সাত কেজি পটাশ সার দেয়া যেতে পারে বলে তিনি জানান। এছাড়াও সামান্য ইউরিয়া ও পটাশ সার দিয়ে পনের কেজি সরিষার খৈল ভিজিয়ে পচিয়ে সারিতে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সপ্তাহে একবার করে সেচ প্রয়োগ করতে হবে। সেচের পানি যেন জমিতে আকটে থাকেত না পারে তার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য তিনি পরামর্শ প্রদান করেন। সেইসাথে গাছ যেন অতিবৃষ্টি ও অতি খরায় নষ্ট হতে না পারে তার জন্য গাছের উপরে সেড তৈরি করে দিতে হবে তিনি জানান। তিনি বলেন, সেডের কারণে ফুলের রং কোনোভাবেই বিকৃত হয় না। বাঁশ কিংবা সিমেন্টের খুঁটি ও মোটা পলিথিন বা ঘন নেট দিয়ে এই সেড তৈরি করা যায় বলে তিনি জানান। মাসুদ বলেন, এই ফুলের রোগ-বালাই তেমন হয় না তবে কিছু ছত্রাক আক্রমণ করে থাকে। এই ফুলের বড় সমস্যা হচ্ছে মাইডস পোকা, যা কচিপাতা চুষে নেয় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায় তিনি সাবধান করেন। বাজারে প্রচলিত ছত্রাক নাশক দশ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে বলে তিনি জানান। সেইসাথে কীটনাশক বছরে দশ থেকে বারবার স্প্রে করতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। পাতা বেশি হয়ে গেলে তিন মাস অন্তর তা ভেঙে দেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। এতে ফুল বড় হয় বলে তিনি জানান। এই ফুলের গাছ বেশি পানি ও শুষ্ক সহ্য করতে পারে না বিধায় সবসময়ে হালকা করে ভিজিয়ে রাখতে হবে বলে তিনি পরামর্শ দেন। জার্বেরা ফুল বিশ্বে ত্রিশ রকমের হলেও বাংলাদেশে মাত্র পাঁচটি জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে বলে তিনি জানান। কোনো কৃষক এই ফুলের চাষ করতে চাইলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে পারবেন বলে মাসুদ জানান। তারা সর্বদা কৃষকদের উন্নয়ন ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে সচেতন করে তুলছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ