Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাক্ষ্য দিতে সাজেদা আমু তোফায়েলকে সমন

‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ মামলা

| প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ২৯ বছর আগে চট্টগ্রামের লালদীঘিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে এসে পুলিশের গুলিতে হাসান মুরাদ ও স্বপন কুমার বিশ্বাস মারা গিয়েছিলেন বলে আদালতে সাক্ষ্যে বলেছেন তাদের স্বজনরা।
তারা বলেন, শেখ হাসিনার জনসভায় যাওয়ার পথে পুলিশ তাদের গুলি করে হত্যা করে। এসময় খুনের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবি করে তারা আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে গতকাল (মঙ্গলবার) সাক্ষ্য দেন নিহত হাসান মুরাদের মা হাসনা বানু এবং নিহত স্বপন কুমার বিশ্বাসের ভাই অশোক কুমার বিশ্বাস। এদিকে পিপির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আলোচিত এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে সমন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আদালতে হাসান মুরাদের মা হাসনা বানু সাক্ষ্য দেয়ার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্না করতে করতে তিনি সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন।
আদালতে হাসনা বানু বলেন, ঘটনার দিন তিনি পাথরঘাটার নজু মিয়া রোডের বাসায় ছিলাম। বেলা আড়াইটার দিকে মুরাদের এক বন্ধু বাসায় এসে খব দেয়Ñ পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন এলাকায় পুলিশের গুলিতে মুরাদ মারা গেছে।
তিনি বলেন, এ খবর পেয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরিবারের লোকজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মুরাদের লাশ দেখতে পায়। পরদিন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পোস্টমর্টেম করে আমাদেরকে লাশ দেয়। ঘটনার সময় নিহত হাসান মুরাদ ছিলেন নগরীর লামার বাজার এএস পৌর কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
ওই দিনের ঘটনায় নিহত স্বপন কুমার বিশ্বাসের বড় ভাই অশোক কুমার বিশ্বাসও আদালতে সাক্ষ্য দেন। আদালতে স্বপন বলেন, আমার ভাই শেখ হাসিনার জনসভায় গিয়েছিল। পুলিশ গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করে। খোঁজ নিয়ে আমরা হাসপাতালে যাই। জেনারেল হাসপাতালে পোস্টমর্টেম করে পরদিন বিকালে আমাদের কাছে লাশ দেয়। সেদিন সন্ধ্যায় শ্মশানে নিয়ে তাকে দাহ করি। তখন ভাইয়ের মাথায় গুলির চিহ্ন দেখতে পাই।
দুই সাক্ষী জবানবন্দী দেয়ার পর তাদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা। আদালত আগামী ১৫ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের শেষ দিকে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নগরীর লালদীঘি ময়দানে এক জনসভায় যাওয়ার পথে তার গাড়িবহরে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়।
নিহতরা হলেনÑ মো: হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো: কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।
এরশাদের সামরিক শাসন অবসানের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মরহুম মো: শহীদুল হুদা বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় গত ২০ বছরে মোট ৪৩ জন সাক্ষ্য দিলেন। এর মধ্যে গত বছরের ২০ জানুয়ারি মামলাটি বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আসার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত আটজন সাক্ষ্য দিলেন।
এ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন জারি করতে রাষ্ট্রপক্ষে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। আবেদনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের আগামী ১৫ মার্চ সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আদালতে আসার জন্য সমন জারি করতে বলেছেন আদালত।
বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহউদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনজন আওয়ামী লীগ নেতা, তিনজন নিহতের স্বজন এবং চারজন প্রত্যক্ষদর্শীসহ মোট ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন জারির আবেদন করেছিলাম। আদালত আবেদন গ্রহণ করে ১৫ মার্চ তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করে সমন জারি করতে বলেছেন। সাজেদা চৌধুরী বর্তমান সংসদের সরকারি দলের উপনেতা এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামÐলীর দুই সদস্য আমির হোসেন আমু শিল্প মন্ত্রণালয় এবং তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাক্ষ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ