Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিলুপ্তি

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. মুজাক্কির হোসাইন সিদ্দিকী : মিয়ানমারে গণতন্ত্রের পথে যিনি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তার নাম অং সান সুচি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ছিলেন আপোসহীন নেত্রী। সামরিক জান্তার হাত থেকে মিয়ানমারের জনগণকে তিনি বাঁচাতে চান। তারপরেও কি তিনি মিয়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন? অং সান সুচির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এন এল ডি)১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৯ সালে সামরিক সরকার তাকে গৃহবন্দী করে। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে (এন এল ডি) বিপুল ভোটে জয়লাভ করে কিন্তু সামরিক সরকার এই ফলাফলকে মেনে নিতে পারেনি। তার ঠিক পরের বছর সুচি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ২০১০ সালের নির্বাচনের পর তাকে গৃহবন্দী থেকে মুক্তি দেয়া হয়। অনেক কষ্ট ও স্বপ্ন পূরণের জন্য অং সান সুচি কাজ করে যাচ্ছেন। যাতে নিজের দেশে সামরিক সরকারের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায়। অবশেষে সামরিক সরকার যারা ৫৪ বছর সেনাবাহিনী ও সেনাবাহিনী-সমর্থিত ক্ষমতায় ছিল তারা গত নভেম্বরে নির্বাচন দেয় এবং ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ মিয়ানমারের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। ৮ নভেম্বর ২০১৫ সাল অং সান সুচি তথা মিয়ানমারের নবযুগের সূচনা হয়। ১৯৬২ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন হয় যেখানে অং সান সুচি বিজয় লাভ করেন। ৬৬৪ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্ট অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সদস্য রয়েছে ৩৯০ জন। এবং সেনাবাহিনীর রয়েছে ১৬৬ জনের। পালামেন্ট সেনা-সমর্থিত দলের সদস্য রয়েছে মাত্র ৪১ জন। বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম থেইন সেইন।
এই তো শেষ হলো নিবার্চন ও ফলাফলের প্রক্রিয়া কথা। তারপর শুরু করি দ্বিতীয় প্রক্রিয়া- ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এন এল ডি)৮০ শতাংশের বেশি আসন পেয়ে পার্লামেন্টে নিরঙ্কুস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। তার পরও অং সান সুচি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালনা করতে পারবেন? দেশ পরিচালনার জন্য চাই রাষ্ট্রপতি পদ না হয় প্রধানমন্ত্রীর পদ। কিন্তু হতাশ হওয়ার বিষয় হলো তিনি রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পদ পাবেন না। কিন্তু কেন? উনি কি এই পদের জন্য যোগ্য না? এইসবের একটাই জবাব তা হলো সংবিধানের ধারা যা তাকে এই পদ পেতে বাধা সৃষ্টি করছে। প্রথম প্রশ্ন:-তিনি কেন রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না? কারণ হলো-সংবিধানের ৫৯(চ)অনুচ্ছেদের স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যার স্ত্রী/স্বামী বা সন্তানরা বিদেশি নাগরিক এমন কেউই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হতে পারবেন না। কিন্তু দেখা যায় এই সংগ্রামী নেত্রীর স্বামী ও দু সন্তান ব্রিটিশ নাগরিক। তাই তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। তবে সুচি জোর দিয়ে বলেছেন, “তিনি প্রেসিডেন্ট হন বা না হন ক্ষমতার চাবি তার হাতেই থাকবে”। এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে কেন পারবেন না? কারণ হলো সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর পদটি বিলুপ্ত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী মিয়ানমারে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার বিদ্যমান। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর পদই নেই তাহলে তিনি কি অন্য কোন উপায়ে রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন? হ্যাঁ। তা হলো যদি সংবিধানে ৫৯(চ)অনুচ্ছেদের পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু কীভাবে সংবিধানের ৫৯(চ) অনুচ্ছেদটির পরিবতন করা যাবে। কিন্তু পরিবর্তনের জন্য সেনাবাহিনীর সমর্থন ব্যতীত তা রহিত করা যাবে না। কারণ পার্লামেন্ট দুই-তৃতীয়াংশ ভোটেই কেবল ঐ অনুচ্ছেদের আইনত অপসারণ করতে পারবে। কিন্তু পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর হাতে শতকরা ২৫ ভাগ মনোনীত আসন রয়েছে। তাই ইচ্ছা করলেই এনএলডি নিজের উদ্যোগে ৫৯(চ)অনুচ্ছেদটি রহিত করতে পারবে না। কিন্তু সুচি বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট নাও হলে তবুও তিনি দৃশ্যের বাইরে থেকে দেশ শাসন করবেন। যেমনটা দেখা যায় সোনিয়া গান্ধীর ক্ষেত্রে। সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী না হয়ে মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী ছিলেন সকল ক্ষমতার অধিকারী।
এখন অং সান সুচির করণীয় হলো তিনি সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা। না হলে হয়তো ৭০ বছর বয়সী এই সংগ্রামী নেত্রীর প্রত্যক্ষ দেশ পরিচালনা দেখা যাবে না। তাই অং সান সুচির উচিত হবে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া। এবং বিভিন্ন রোহিঙ্গা সমস্যা যেমন তাদের নাগরিকত্ব দেয়া, তাদের চলাচলের বাধা-নিষেধ তুলে নেয়া। এবং তাদের বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করা। এটাই সবাই প্রত্যশা করবে নতুন সরকারের কাছ থেকে। তাহলে প্রমাণিত হবে সত্যিই অং সান সুচিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া যুক্তিযুক্ত ছিল। এবং তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি কী ব্যবহার করেন তাও দেখার বিষয় কারণ এই প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের পার্লামেন্টে কোন মুসলিম প্রতিনিধিত্ব নেই। এটা মুসলমানদের আতঙ্ক হবার মতো একটি ঘটনা। তারপরও সবার প্রত্যাশা থাকবে তিনি সকল সমস্যা দূর করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করবেন।
ষ লেখক : শিক্ষার্থী, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিলুপ্তি
আরও পড়ুন