Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫৮ টাকার আলু বীজ ১ টাকা কেজি দরে বিক্রি

দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র

| প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোশাররফ হোসেন, নীলফামারী থেকে : দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতার কারণে যথাসময়ে ১৪০ টন আলু বীজ বিক্রি হয়নি। ফলে ৫৮ টাকা প্রতিকেজি মূল্যের আলু বীজ অবশেষে ১ টাকা ১০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে পরিচালক পরিকল্পনা (বিএনআর) জয়দেবপুর গাজীপুরের সোহেব হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম তদন্ত করছে। দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, কার্ডিনাল জাতের আলু বীজ ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রয়ের স্বাভাবিক দর ছিল। এ দামে আলু বীজ বিক্রয় না হলে ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ৪০ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়। এ দামেও বীজগুলো বিক্রয় না হওয়ায় ১৩ ডিসেম্বর ২৫ টাকা নতুন দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিক্রয় কমিটির সভাপতি প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশিষ কুমার সাহা বিক্রয় রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করায় সর্বশেষ দর ২৫ টাকা দরেও আলু বীজগুলো বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক আলু চাষি ১৪ টাকা কেজি দরে প্রজনন কেন্দ্রে রক্ষিত ১৪০ টন আলু বীজ ক্রয়ে রাজি হয়। এজন্য গত ১৫ ডিসেম্বর উক্ত কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশিষ কুমার সাহা বিক্রয় শীটে স্বাক্ষর না করায় আলু বীজ বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রির ব্যাপারে পরিচালক ও মহা-পরিচালকের অনুমতি থাকলেও পিএসও আশিষ কুমার সাহা তার দায়িত্বহীনতা ও ব্যক্তিস্বার্থের কারণে স্বাক্ষর করেনি বলে অভিযোগে প্রকাশ। এমনকি ক্রেতাকে তিনি তার ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন যাতে সে সরকারি বীজ ক্রয় না করে। এ সুযোগে তার ব্যক্তিগত ও শশুরের উৎপাদিত ২০০ টন বীজ আলু বিক্রি করেন। দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র এলাকার কৃষক ইবরাহীম হোসেন (৪৩) ও সিরাজুল (৩৮)সহ অনেকে  জানান, আমরা প্রতি বছর এখান হতে আলু বীজ ক্রয় করে আলু চাষ করি। এবারে বীজ ক্রয়ের আবেদন করলে আমাদের জানানো হয় যে, বিক্রয়ের জন্য কোন বীজ নেই। সব বীজ শেষ হয়ে গেছে। তখন আমরা বিভিন্ন দোকান থেকে নি¤œমানের আলুর বীজ ক্রয় করি। আবার অনেকে বীজের অভাবে অন্য ফসল চাষ করে। তারা আরো জানায়, এখন এই কেন্দ্রের চারিদিকে শুধুই পচা আলুর গন্ধ। এখন শুনছি পচা আলুর বীজগুলো নাকি এক টাকায় গরুর খাবারের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। ওই কেন্দ্রের শ্রমিক আব্দুল করিম জানান, গত বছর ১৫০ একর জমিতে আলু চাষ করা হয়। এবার আর্থিক সংকটে ৩০ একর কম জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। আর স্যারদের জেদের কারণে আলুর বীজগুলো বিক্রি করা হলো না। বীজগুলো বিক্রি হলে কিছুটা আর্থিক সংকট কাটানো যেত। এ ব্যাপারে দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আলু বীজ বিক্রয় কমিটির প্রধান ড. আশিষ কুমার সাহা জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী না হওয়ায় আমি উক্ত রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিনি। দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবেদ আলী জানান, কয়েক ধাপে দাম কমানোর পর আলু বীজগুলো বিক্রয় না হওয়ায় আমরা অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। এমন সময় পচে যাওয়ার উপক্রম হওয়া ১৪০ টন আলু বীজ ১৪ টাকা কেজি দরে সাইফুল নামে এক ব্যক্তি কিনতে চাইলে আমরা আলোচনা করে তা বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু বিক্রয় কমিটির প্রধান আশিষ কুমার সাহা রেজুলেশনে স্বাক্ষর করে নাই এবং তার লোকজন বাধা দেওয়ায় আলুর বীজগুলো আর বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, আর কিছু দিনের মধ্যেই নতুন আলু উঠবে। আলু বীজগুলো না সরালে নতুন আলু সংরক্ষণ করার জায়গা থাকবে না। এখন বীজগুলোর প্রায় পচে যাওয়ার অবস্থা। ওই বীজগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে আমরা মাত্র ১ টাকা ১০ পয়সা দরে ১৪০ টন পচা আলুর বীজ এক গরুর খামারির কাছে বিক্রয় করেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ