হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর : ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তি কামনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, আসিতেছে শুভ দিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ ।... গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ঋণ অনেক জমা হয়েছে। আশাভঙ্গের বা বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। একসময় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান অনেকটাই নির্বাচনহীন পরিবেশে দেশ চালিয়েছিলেন। তার ক্ষমতায়ন দশম বর্ষপূর্তির পরপরই সব কিছু ভেঙে খান খান হয়ে যায়। বাংলাদেশে নানা তেলেসমাতি করে এইচ এম এরশাদ নয় বছর দেশ চালিয়েছেন। অবশেষে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে স্থান করে নিয়েছেন। এবারের আলোচনায় পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সেই ঐতিহাসিক মুন সিনেমা হলের মামলার কথা। হলটির মালিক মামলা করেছিলেন তার সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য। দেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হলেও সেই মামলায় এখন পর্যন্ত মুন সিনেমা হলের মালিক তার সম্পত্তি ফেরত পাননি। আর হয়তো পাবেনও না। কারণ উচ্চতর আদালত তার সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। সম্পত্তি ফেরত পান বা না পান বিষয়টি যে হারিয়ে যায়নি সেটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ সাত খুনের মামলার রায় এবং উচ্চতর আদালতের কিছু নির্দেশনার পর গুম হওয়া মানুষেরা ফিরতে শুরু করেছে। এরা ফিরে যা বলছে তার একটি বিবরণ অন্য বিবরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই অনেক আগে শ্রমিক ধর্মঘটের ভয়ে ছেড়ে দেয়ার পর ফিরে আসা একজন যেভাবে বলেছিলেন, অনেকদূরে নিভৃতে কোথাও রাখা হয়েছিল, বর্তমান সময়েও যারা ফিরে আসছে তারাও বলছে অনুরূপ কথাই। সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে হারানো মানুষ ফিরে আসছে।
একটি গণতান্ত্রিক সমাজে পুলিশকেই সাধারণের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে মনে করার কথা থাকলেও বর্তমানে ঘটছে তার বিপরীত। পুলিশ জনগণের বন্ধুর পরিবর্তে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এটাই হচ্ছে এখনকার গণতন্ত্রের প্রধান সূচক। যে তন্ত্রে পুলিশ, সাধারণ মানুষের সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছে সে তন্ত্রকে কল্যাণমূলক বলা যাবে না। এক্ষেত্রে কার দায় কতটুকু তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। বারবার সংশ্লিষ্টরা পুলিশকে মানবিক হতে আহ্বান জানাচ্ছেন আবার সেই পুলিশ দিয়েই গণতন্ত্রের আন্দোলন নস্যাৎ করছেন। বোধকরি দেশের পুলিশরা এখন ভুলেই গেছে যে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত কিছু দিনে পুলিশকে এতটাই ক্ষমতায়িত করা হয়েছে যে, এদের কেউ কেউ ধরাকে সরাজ্ঞান করতে শুরু করেছে। পুলিশ সপ্তাহকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের একান্ত কিছু বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়। এ বছরও তাতে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধার কিছু প্রসঙ্গ থাকলেও মৌলিক একটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ বাতিল চেয়েছে পুলিশ। পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে এটি তুলে ধরা হয়। আইনটির বাতিল চেয়ে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন কিংবা মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার বিধান রেখে একটি বেসরকারি বিলের মাধ্যমে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু আইন নামে আইন জারি করা হয়েছে। আইনটিতে নির্যাতনের সংজ্ঞায় মানসিক কষ্টকেও নির্যাতন বলা হলেও তা নির্ণয়ের কোনো মানদ- নেই। ফলে যে কেউ এ আইনে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের যে কোনো অভিযোগ তদন্ত ব্যতিরেকে আবশ্যিকভাবে এ আইনের অধীনে তদন্তকারী কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ বা কমান্ডিং অফিসারের বিরুদ্ধে সুয়োমটো মামলা নেয়ার জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার মতে, এ আইন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যকে দায়িত্ব পালনের সেফগার্ডের অধিকার খর্ব করেছে। প্রধানমন্ত্রী আইনটি বাতিলের কোনো আশ্বাস দেননি। তিনি বলেছেন, এটা প্রাইভেট মেম্বার বিল। এটা এখনই বাতিল করা যাবে না। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশনামূলক রায় সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এ ধরনের রায় কেন দিল তা জানি না। যেহেতু আদালতের রায় আমাদের হাত-পা-মুখ বন্ধ, কিছু বলতে পারি না। কিন্তু আমরা কি আইন-শৃঙ্খলা, মানুষের জানমাল রক্ষা করব না? তিনি আরো বলেছেন, পুলিশের হাত-পা যদি বেঁধে দেয়া হয় তাহলে পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করবে কীভাবে? প্রকৃত বিবেচনায় পুলিশের সংখ্যা জনসংখ্যানুপাতিক হিসাব করে বা পুলিশের ক্ষমতা বাড়িয়ে শান্তির বিধান সম্ভব নয়। ব্যাপারটি আস্থা ও আনুগত্যের। যে রায় নিয়ে কথা উঠেছে তার পুরনো ইতিহাসে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু এটুকু বলা দরকার, ডিবি কার্যালয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী রুবেল নির্যাতনে মারা যাওয়ার পরই এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সে সময়ের প্রকাশিত বিবরণে বলা হয়েছিল, ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী একজন আওয়ামী লীগ নেত্রীর ফোনে রুবেলকে ধরে নেয়া হয়েছিল। এই মামলার মূল বিষয় ছিল ৫৪ ধারা। অর্থাৎ পুলিশের বেপরোয়া ক্ষমতা। সেই মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপলি করেছিল সরকারপক্ষ। মামলাটি খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্ট। চূড়ান্ত রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ পুলিশের এ ধরনের ক্ষমতাকে সংবিধানবহির্ভূত বলে উল্লেখ করেন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর আদালত থেকে বের হয়ে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন জানান, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ হওয়ার ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকল। রিটকারীর আইনজীবী ড. কামাল হোসেন আপিল শুনানিতে বলেন, হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়িত হলে এ ধরনের হেফাজতে মৃত্যু কমে যেত। এর আগে ইউনিফর্ম ছাড়া (সাদা পোশাকে) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তারের ঘটনা গুরুতর বিষয় বলে উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির উল্লিখিত ধারা সংশোধনের নির্দেশনা দিয়ে ১৩ বছর আগে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ শুনানিতে আপিল বিভাগ এক পর্যায়ে উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন। এদিকে ওই শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের রায়ে যেসব নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে, তা দেশের সামাজিক বাস্তবতায় সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, আইনের কঠোর প্রয়োগ না হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। শুনানির একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, পুলিশ যেভাবে অভিযোগপত্র তৈরি করে তার বেশির ভাগ গৎবাঁধা। এখানে তারা কোনো ‘অ্যাপ্লিকেশন অব মাইন্ড’ প্রয়োগ করে না। পুলিশ ও রাষ্ট্রপক্ষ এত ভুল করে, এটাই আদালতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আপিল বিভাগের রায়ের ফলে একটি বহুল বিতর্কিত ধারার অবসান হয়েছে। এ ধারাটি যে একটি স্বাধীন দেশের অনুপযোগী সে কথা ইতোপূর্বে প্রধান বিচারপতির শুনানিতে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এটি একটি কলোনিয়াল ধারা। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বস্তুত সংবিধানে নাগরিকদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা এবং বাক ব্যক্তি, তথা মত প্রকাশের যে অধিকার দিয়েছে তার সাথে এই ধারা কার্যত সাংঘর্ষিক। দেশের চলমান বাস্তবতায় উচ্চতর আদালত যে রায় দিয়েছেন তাকে ইতিবাচকতায় দেখা ছাড়া কোনো উপায় নেই। চূড়ান্ত রায় প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে চলব। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন। এরপর আরো একধাপ এগিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার রায় বেরিয়েছে। এ রায়েও বিচারক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে দুর্র্বৃত্তদের যোগসাজশকে গুরুতর বিবেচনায় দেখেছেন। এতসব যা কিছু ঘটছে তা মূলত দেশে যে গণতন্ত্র নেই তারই ফল।
পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ বেশ পুরনো। সাম্প্রতিক সময়ে এ অভিযোগ আরো বেড়ছে। এ নিয়ে লেখালেখিরও অন্ত নেই। বাস্তবতা হচ্ছেÑ আইন থাকা সত্ত্বেও এ অপকর্ম থামানো যাচ্ছে না। যে কোনো কারণেই হোক অপকর্মকারীরা কেন যেন আইনকে তোয়াক্কা করতে চাইছে না। নিয়মকানুন ছাড়াই যখন তখন যে কাউকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, তুলে নেয়ার পর আর কোনো স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো মহলই তা স্বীকার করছে না। ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে টাকা অদায়, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, নিরপরাধ মানুষের পকেটে ইয়াবা পুরে দিয়ে ফাঁসানো এ জাতীয় ঘটনাও ঘটাচ্ছে একশ্রেণির পুলিশ। ছিনতাই, রাহাজানি, প্রতারণার সাথেও কারো কারো নাম উঠে এসেছে। এ সংক্রান্ত মামলাও কম নেই। অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। তবে সেখানেও নানা প্রশ্ন রয়েছে। যত কিছুই হোক, যে আইনটির বিরোধিতা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা সেই আইনটি মানবাধিকারের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত। এই আইন জনগণের জানমালের নিরাপত্তার সাংবিধানিক অধিকারকে সংরক্ষণ করছে। সে বিবেচনায় আইনটি বাতিলের দাবি বা আলোচ্য রায় নিয়ে কোনো ভিন্ন আলোচনা কোনো বিবেচনাতেই সঙ্গত নয়। পুলিশের কাজে যে ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে একটি স্বাধীন দেশে তার ব্যত্যয় অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। এখানেই আশার আলো রয়েছে। আদালতের কঠোর অবস্থানের ফলে কিছুটা হলেও জনমনে স্বস্তি ফিরে আসতে পারে। যারা এই অপপ্রবণতার সাথে যুক্ত তারা হয়তো আইনের ভয়ে শান্ত থাকতে পারে। বাস্তব অবস্থাও সেটাই। গত কিছু দিনে কিছুটা হলেও পূর্বাবস্থার অবসান হয়েছে।
একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে সোচ্চার দেশের রাজনৈতিক মহল। এই বাস্তবতায় ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যে আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন তা শেষ করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে পুনরায় সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে রাতে দুজনের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন। প্রধান বিচারপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে শপথ পড়াবেন। রাষ্ট্রপতি যেরূপ নির্ধারণ করবেন কমিশনারগণের কর্মপদ্ধতি সেরূপ প্রতিপালিত হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে কোনো আইন নেই। এ যাবৎ যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেউই আইন বা আইনের অধীনে কোনো বিধান করেননি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিমিত্তেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল। এর মূল কারণ হিসাব এটা মনে করা হয়, একটি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এ প্রক্রিয়ায় একাধিক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও উচ্চতর আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণার পর নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। পুনরায় রাজনৈতিক সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কার্যত তা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো গ্রহণযোগ্যতাই পায়নি। এই বাস্তবতায় নতুন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা স্থান করে নিলে মূলত একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের আলোচনা সামনে চলে আসে। সে পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের আইনের আলোচনাও অগ্রাধিকার পায়। এ নিয়ে ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নে গুরুত্ব দেন। নতুন নির্বাচন কমিশন আইনের অধীনে গঠিত না হলে সেটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হবে বলেও দেশের বিজ্ঞ আইনজীবীর অভিমত ব্যক্ত করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, প্রস্তাব ও মতামত বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সেই পুরনো বিষয়ই সামনে এসে গেছে। গতবারে যিনি সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন এবারও তিনি। তার সাথে আরো যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের সম্পর্কেও ব্যাপক কোনো আস্থার ভিত্তি নেই। গঠিত কমিটি নিয়ে বিজ্ঞ আইনজীবী শাহদীন মালিক মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যাদের নিয়োগ দেয়া হবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের চেয়ে অধস্তনদের মনোনয়নের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। সদস্যদের সম্পর্কেও আপত্তি তোলা হয়েছে। সে বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট যেভাবে আশ্বস্ত করেছিলেন এবং তাতে যতটা বিশ্বাস করার ব্যাপার ছিল কমিটি দেখার পর অবস্থা সেখানে নেই। তবে এরপরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এখন কেবলমাত্র কোন দল বা গোষ্ঠীর নয় বরং এর সাথে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থ জড়িত।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।