Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জরাজীর্ণ ভবন ও ডাক্তার সংকটে মিলছে না চিকিৎসাসেবা

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রবিউল কবির মনু, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে : গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে সর্ববৃহৎ উপজেলা গোবিন্দগঞ্জের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল ৫০শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১০টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ ৩৮টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ২৯টি চিকিৎসক পদ খালি থাকায় কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। অপরদিকে আবাসন সংকটসহ প্রাইভেট প্রাক্টিসের পর্যাপ্ত ক্ষেত্র না থাকায় উচ্চতর প্রশিক্ষণের নামে এ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রেনিং পদে নিযুক্ত হয়েছেন। আর ষাটের দশকে ১০/১২ বেডের জন্য নির্মিত হাসপাতালের মূল ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পরিচ্ছন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়ার অযোগ্য হলেও দীর্ঘদিনেও নতুন ভবন নির্মাণে কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ১৯৬০/৬১ সালে তৎকালীন সরকার বৃহত্তর রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহুকুমার গোবিন্দগঞ্জ থানা সদরের গোবিন্দপুর মৌজায় ৪ দশমিক আট একর জমিতে একতলা বিশিষ্ট ১০/১২ বেডের একটি সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ৮০’র দশকে হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত হলে মূল ভবনের বাহির দিয়ে কলাম তুলে দুইতলা করা হয়। উপর তলায় রোগীদের বেড ওয়ার্ড ও নীচ তলায় জরুরি বিভাগসহ প্রশাসনিক দপ্তর করা হয়। ২০০৪ সালে পুরানো অবকাঠামোর মধ্যেই হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০০৬ সালে ১৯ বেডের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি দ্বিতল ভবণ নির্মাণ করা হলে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে ৫০শয্যার কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র মিলে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকের ৩৮টি পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ মাত্র ৬জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন বলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ মো. মজিদুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও)সহ গাইনী, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, নাক-কান-গলা, ডেন্টাল ও এ্যানেসথেসিয়া’র কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ১০ বছর থেকে এক্স-রে মেশিনটি মেরামতের অভাবে বিকল হয়ে আছে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ হাসপাতালের জন্য একটি এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দিয়েছেন। যা এখন ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছে। ডাঃ মো. মজিদুল জানান, এ হাসপাতালে আল্ট্রাসনো, ইসিজি, ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপসহ উন্নত ল্যাবসেবা প্রদান করা হয়। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে আমরা কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছি না। উপজেলায় সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকের ৩৮টি পদ থাকলেও এ হাসপাতালে মাত্র ৪জন চিকিৎসকের আবাসিক কোয়ার্টার থাকলেও সেগুলি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ৫০ শয্যার বিপরীতে বিগত বছরে বেড ফিলাপ ছিল শতভাগ। স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে হলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কোন বিকল্প নেই বলে যোগ করেন তিনি। গোবিন্দগঞ্জের স্বাস্থ্য সেবার চিত্র তুলে ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ সৈয়দ শরিফুল ইসলাম জুয়েল জানান, বিগত ২০১৬ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রায় ৭৭ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে আইএমসিআই ইউনিটে ৫বছরের নীচে শিশু ৩৯৫৮জন, টেলিমেডিসিন জরুরি বিভাগে ৪৭৮৯জন, হাসপাতালে ভর্তি সেবা ১১৩০৫জন, বর্হিবিভাগ (জরুরি) ৩৮৫০জন, বর্হিবিভাগ ৫৩৬৩২জন। মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগে হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৫৩ জন, স্বাভাবিক প্রসব ২৫৪৪জন এবং ৯৭০জন গর্ভবতী মায়ের সিজার করা হয়। এছাড়াও ১০টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৮ লাখ ২৯ হাজর ৭ জন শিশু, নারী ও পুরুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ১৬ হাজার ৯৭ জন, মাতৃত্ব ১৬ হাজার, সাধারণ রোগী কমিউনিটি ক্লিনিকে ৬ লাখ ৪৭ হাজার এবং উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯ শত ১০জনকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়েছে। এদিকে চিকিৎসা সেবার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষে গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ০৩-০৮-২০১৫ইং তারিখে দেয়া ডিও লেটারে ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করণের আবেদন করেছেন। যাহা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ৬৪৭৪ নং ডাইরীভুক্ত হয়েছে। সূত্রমতে, ৪৬০ বর্গ কিঃমিঃ এলাকা নিয়ে ৬ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এ উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা রয়েছে। ভারী শিল্প কারখানা রংপুর চিনিকল সহ মাঝারি ও ছোট অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে এ উপজেলায়। যেমন জুট মিল, অটোরাইস মিল, বায়োসার কারখানা, ফ্লাওয়ার মিল, ওয়েল মিল, কোল্ড স্টোরেজ। এছাড়াও কোচাশহর হোসিয়ারী শিল্পে কর্মরত রয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিক। উপজেলার মধ্যে দিয়ে ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক থাকায় প্রাই সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু শয্যা সংখ্যা কম থাকায় এবং ট্রোমা ইউনিট না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আহতদের রংপুর অথবা বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করতে হয়। ফলে প্রায়ই রোগীরা পথিমধ্যে মৃত্যু বরণ করেন। এছাড়াও উপজেলার ৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১০টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ১৬টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের রেফার্ড করায় কোন ভাবেই স্থান সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না। গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৬ সালে এ থানা এলাকায় ৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৭জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। আর গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জান গেছে, বিগত ২০১৬ সালে এ উপজেলায় ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬জন নিহত এবং ৫জন আহত হয়েছে। তাই দরিদ্রপীড়িত এ বৃহৎ জনগোষ্ঠি ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের চিকিৎসা সেবার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ