Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বাঘের পিঠে সরকার নামার কোনো উপায় নাই : মির্জা ফখরুল

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে তারা দাসখত লিখে এসেছে

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার বাঘের পিঠে। নামার কোনো উপায় নাই, নামলেই বাঘে খেয়ে ফেলবে। এজন্য কারো কথাই শুনে না। তিনি বলেন, ভণিতা করে, এদিক-ওদিক করে কোনো লাভ হবে না। জনগণ যেদিন জেগে উঠবে, সেদিন কোনো দিকে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সরকার ‘দাসখত লিখে এসেছে’ বলে তিনি অভিযোগ করেছেন ।
গতকাল শুক্রবার বিকালে এক প্রতিবাদ সমাবেশ বিএনপি মহাসচিব সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, বার বার জোর গলায় তারা (সরকার) বলছে, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতেই হবে। কেনো রে ভাই, এতো কিসের গরজ। গরজ কী শুধু বিদ্যুৎ দেবেন সেজন্য? নাকী কোথাও দাসখত লিখে এসেছেন সেজন্য। দাসখতই লিখে এসেছেন। তা নাহলে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য আপনারা এভাবে মরিয়া হয়ে, নগ্ন হয়ে নামতেন না। সারা পৃথিবী বলছে, এই প্রকল্প সুন্দরবনের ক্ষতি করবে আর উনারা কয়েকজন বলছেন, ক্ষতি করবে না। আমরা বলতে চাই, এভাবে বেশিদিন টেকানো যাবে না।
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে ঢাকাস্থ কিশোরগঞ্জ জাতীয়তাবাদী ফোরামের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। কিশোরগঞ্জের নেতা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলমের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
গত ২৬ জানুয়ারি রাজধানীতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা রাজধানীতে অর্ধদিবস হরতালে সরকারের আচরণের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, দেখেছেন, গত পরশু তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষার আন্দোলনের কিছু মানুষ, তারা নিবেদিত প্রাণ, যতই বলি, আমরা যা-ই বলি, তারা রাস্তায় নেমেছেন। বৃদ্ধ মানুষকে পুলিশ পেটাচ্ছে, একজন সাংবাদিক ভাইকে নির্মমভাবে প্রহার করছেÑ সেটাও তো এই সরকার সহ্য করতে পারে না। তারা কোনো রকম ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না।
গত বৃহস্পতিবার আবার সরকারি দলের এমপিকে দিয়ে ওই এলাকায় পক্ষেও কিছু লোক নামিয়েছেন। ওই সমস্ত বণিতা করে, এদিক-ওদিক করে কোনো লাভ হবে না। জনগণ যেদিন জেগে উঠবে, সেদিন কোনোদিকে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।
দলকে সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংগঠন শক্তি করতে হবে, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বন্ধ করতে হবেÑ এর কোনো বিকল্প নেই। শুধু দলের মধ্যে ঐক্য নয়, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ১৬ কোটি মানুষকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এখন জেলে যাওয়ার জন্য তৈরি হলে চলবে না, এখন জেল ভাঙার জন্য আমাদের তৈরি হতে হবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী সংঘাত চান না, স্থিতিশীলতা চান। সেজন্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাবাবলী দিয়েছিলেন। ভালো কথা কী শুনে? শুনে না। যতই বলেন, তারা সেগুলো শুনবে না। কারণ তারা বাঘের পিঠে উঠে বসেছে তো। নামার তো কোনো উপায় নাই, নামতে গেলেই তো বাঘে খেয়ে ফেলবে। সেকারণেই তারা কোনো কিছু শুনতে চান না, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাবে। আর আমাদের দায়িত্ব হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের শক্তি দিয়ে সেই অপশক্তিকে পরাভুত করতে হবে। এটাই একমাত্র পথ, এর অন্যকোনো বিকল্প নাই।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ যে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন, তা আওয়ামী লীগের ঘরনার লোকজনকে নিয়ে করা হয়েছে বলেও সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেই সার্চ কমিটি কখনোই একটা নিরপেক্ষ, শক্তিশালী, সৎ, যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।
তিনি বলেন, আসুন, গোটা দেশের মানুষকে নিয়ে আমরা এই সরকারকে বাধ্য করি, যে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার মধ্য দিয়ে এবং একটি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে এই সংকটের নিরসন করতে হবে।
গত ১০ বছরে বিরোধী দলের ওপর রাজনৈতিক নিপীড়ন-নির্যাতনের মাত্রা অতীতের সব স্বৈরাচারকে হার মানিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। আওয়ামী লীগের যে স্বৈরাচার, যে অত্যাচার-নিপীড়ন দেখছি, তা ইতিপূর্বে আমরা যারা বয়োজ্যেষ্ঠ তারা ১৯৭২-৭৫ সালে কিছুটা দেখেছি, এখন নতুন প্রজন্ম দেখছে। আওয়ামী লীগ কোন ধরনের রাজনৈতিক দল, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পারেন না, এমন কোনো কাজ নেই। কারাবন্দি শরীফুল আলমসহ সকল নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করছে না। ১/১১ সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে এক কারাগারে, এক প্রিজন ভ্যানে চলেছি। শেখ সেলিম সাহেবের নাতি বলতো- এটা আমার দাদু গাড়ি। ওই দাদুর গাড়িতে করে আমরা তখন একসঙ্গে আসা-যাওয়া করতাম। কত হৃদতা ছিলো। আশ্বর্য হয়ে যাই, মানুষ কয়েকদিন ব্যবধানে কীভাবে সব ভুলে যায়। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসতো কখনো এমন আচরণ করতো না। আজ আওয়ামী লীগ, আজ কী করছে? শুধু শরীফুল আলম নয়, সারা দেশে বিএনপিসহ সকল ভিন্নমত সবাইকে ছলে-বলে কৌশলে জেল-জুলুম-অত্যাচার-সম্পত্তি দখল-জবর দখল করে সর্বশান্ত করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। কোনো সুস্থ লোক আওয়য়ামী লীগ করতে পারে না। এরা মানসিকভাবে অসুস্থ, এরা সুস্থ নয়। এরা মানুষের রক্ত দেখায় অভ্যস্ত। এরা রক্তচোষা দল, মানুষের দল না।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, আমি দলছুট ব্যক্তি। ৩৫ বছর আওয়ামী লীগ করেছি, ৮ বছর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ করেছি, ১০ বছর যাবত বিএনপি করছি। কিছু মনে করবেন না, আমার মনে হয়েছে, বিএনপি ঘরের ভেতরে বেশি সোচ্চার থাকে। এ থেকে সরে আসতে হবে। আমি বলতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত যে ইনস্টিটিউশনের ওপরে বর্তমান অবৈধ সরকার বসে আছে, সেই ইনস্টিটিউশন ভেঙে দিতে না পারবেন, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অত্যাচারীর গলার টুঁটি চেপে ধরতে না পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়বে না। যেকোনো আন্দোলনের ইনফেন্ট্রির নাম হচ্ছে ছাত্র সংগঠন। ওই তেল-গ্যাস কমিটি যদি ২০০ লোক নিয়ে মিছিল করতে পারে, তাহলে ছাত্র দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কেনো রাজপথে মিছিল করতে পারবে না। গুলি করবেন, কত গুলি করবে।
সংগঠনের সভাপতি শেখ মজিবর রহমান ইকবালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, মাজহারুল ইসলাম মাজহার, রুহুল আকিল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

Show all comments
  • Fahad ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৫ এএম says : 0
    He is 100% right
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ