পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : ভারতের অনীহা, তাই ঝুলে আছে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি)-এর বৈঠক। সাত বছর আগে ২০১০ সালের মার্চে দিল্লীতে এই বৈঠক বসেছিল। ফিরতি বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠানের কথা। কিন্তু আজও দিনক্ষণ ঠিক করতে পারেনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। গেল বছর বাংলাদেশ এই বৈঠকের তাগিদ দিয়ে দিল্লীকে চিঠি দিয়েছিল। বছর পেরিয়ে গেলেও পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের চিঠির কোন জবাব মেলেনি। ফলে এ নিয়ে আর কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বরং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় চেয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের দিকে। এই মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তাই জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিশ্চিত হলে এর একটা সুরাহা হবে। ভারতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দিল্লী নেয়ার চেষ্টাও চলছে। কিন্তু সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কোন ধরনের ‘সবুজ সংকেত’ ছাড়া শেখ হাসিনা দিল্লী সফরে যাচ্ছেন না।
এদিকে, যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক না হওয়ায় তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি সমস্যা, সীমান্ত নদী ভাঙন প্রতিরোধ কাজ, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ভারতীয় অংশে জেগে উঠা বাংলাদেশের মূল্যবান ভূমি ফিরিয়ে আনা, চুক্তি মোতাবেক গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া সংক্রান্ত অনেক সমস্যাই ঝুলে রয়েছে বছরের পর বছর।
ইতোপূর্বে ২০১৩ সালের ১৮-১৯ জুন ঢাকায় জেআরসির ৩৮তম বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তুতির প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে দিল্লীর পক্ষ থেকে বৈঠকটি বাতিল করা হয়। কেন এবং কী কারণে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছিল-তার বিশেষ কোনো কারণও বাংলাদেশকে আজও জানায়নি ভারত। একইভাবে জেআরসির বৈঠক কেন হচ্ছে না-এ নিয়েও দিল্লী নীরবতা পালন করছে।
অথচ জেআরসির নিয়ম অনুযায়ী, বছরে অন্তত দু’বার বাংলাদেশ ও ভারত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বসার কথা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই নিয়ম মেনে চলা হলেও ভারতের পক্ষ থেকেই এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হয়। এতে করে, অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি নিয়ে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশকে চরম ভোগান্তির কবলে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেআরসির এক কর্মকর্তা জানান, এই বৈঠকের জন্যই আটকে আছে দু’দেশের অনিষ্পন্ন অনেক বিষয়। যার মধ্যে রয়েছে তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তি, সীমান্ত নদী ভাঙন প্রতিরোধ কাজ, গঙ্গা চুক্তি পর্যালোচনা, সুরমা ও কুশিয়ারা ড্রেজিং, ফেনী নদী থেকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার বন্ধ করাসহ অনেক অমীমাংসিত বিষয়।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের অভিন্ন ৫৪টি নদী থাকলেও শুধুমাত্র গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে ত্রিশ বছর মেয়াদি চুক্তি রয়েছে। আর সমহিস্যার ভিত্তিতে তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি প্রস্তাবনায় উভয় দেশ সম্মত হওয়ার পরও শেষাবধি দিল্লী এই চুক্তি করা থেকে পিছিয়ে যায়। এক্ষেত্রে দিল্লীর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দোষারূপ করা হলেও বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত নয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি বিশেষজ্ঞ পাউবোর সাবেক মহাপরিচালক মোজাদ্দেদ আল ফারুক বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আন্তরিক হলে তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তি না হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তার মতে, বিষয়টি আটকে আছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জায়গায়। তার মতে, ভারতের সাথে একমাত্র সীমান্ত নদী গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ত্রিশ বছর মেয়াদি চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউলও ভারত মেনে চলছে না।
জেআরসির পরিসংখ্যা থেকে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর চুক্তির ২-এর ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী গত দুটি দশদিনে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়া হয়নি। ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী প্রথম দশ দিনে পানি পাওয়ার কথা ৬৭ হাজার ৫১৬ কিউসেক; আর দ্বিতীয় দশ দিনে পাওয়ার কথা ৫৭ হাজার ৬৭৩ কিউসেক। কিন্তু এই পরিমাণ পানি বাংলাদেশকে দেয়া হয়নি।
এদিকে ভারতের সাথে সীমান্ত নদীর অধিকাংশই ভাঙনপ্রবণ। বর্ষায় পানি বৃদ্ধির সময় একবার এবং পানি নেমে যাওয়ার সময় একবার এসব নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, ভাঙনের কারণে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৫০ হাজার একর জমি হারিয়েছে। তবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জমি হারানোর পরিমাণ ৩০ হাজার একরের বেশি হবে না।
জেআরসির একাধিক বৈঠকে বাংলাদেশ ওপারে (ভারতীয় অংশে) জেগে উঠা ভূমি ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উত্থাপন করলেও ভারত তা আমলে নেয়নি। এতে করে সুরমা, কুশিয়ারা, আত্রাই, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মাতামুহুরি, ইছামতি, কালিন্দী, রায়মঙ্গল, তিস্তা, গোমতি, ফেনী, পুনর্ভবা, মহানন্দা, গঙ্গা (পদ্মা)সহ বিভিন্ন নদী ভাঙনে বাংলাদেশ তার মূল্যবান ভূমি হারাচ্ছে।
আর এসব ভূমি জেগে উঠছে ওপারে ভারতীয় অংশে। হারানো এসব ভূমিতে বাংলাদেশের কৃষকরা আবাদের জন্য যেতে চাইলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র বাঁধার কারণে যেতে পারে না। এতে করে সীমান্ত নদীবর্তী মানুষগুলো ক্রমান্বয়ে নিজেদের বসতবাড়ী, আবাদি জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। ভাসমান মানুষ হিসাবে তারা আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত নদী ভাঙন ঠেকাতে তারা কোন কাজ করতে পারছে না। কাজ করতে গেলেই বিএসএফ’র বাধার মুখে পড়তে হয়। অথচ ভারতীয় অংশে ঠিক নদী ভাঙন কার্যক্রম চলে বছর জুড়েই। তিস্তা, গঙ্গা, কুশিয়ারা, ইছামতি, মহানন্দাসহ বেশ অধিকাংশ সীমান্ত নদীতে ভারত পরিকল্পিতভাবে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছে। এসব স্থাপনা নির্মাণের কারণে বাংলাদেশ অংশে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। জেআরসির বৈঠক না হওয়ায় এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ কোন আলোচনা করতে পারছে না।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র বাধার কারণে বারবার আটকে যাচ্ছে জকিগঞ্জে পাম্প হাউজ নির্মাণ কাজ। ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত এই প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে একাধিকবার ভারতের সাথে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোন সুফল আসেনি। এ ব্যাপারে পাউবোর বক্তব্য হচ্ছে, জেআরসির বৈঠক বসলে এসব সমস্যা এতটা প্রকট হতো না।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, জেআরসির বৈঠকের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার সমাধানের বিষয়টি। বিশেষ করে জেআরসির বৈঠক না বসার অর্থ তিস্তা চুক্তি নিয়ে কালক্ষেপণ করা। চুক্তি না থাকার কারণে তিস্তার নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তি পর্যালোচনা হচ্ছে না। আটকে আছে ৫৪টি সীমান্ত নদীর অমীমাংসিত অনেক বিষয়াদি।
তবে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আশাবাদ ব্যক্ত করে ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশ আশা করে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারত গঙ্গার চুক্তি মোতাবেক পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদান করবে। তিনি দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ঝুলে থাকা জেআরসি বৈঠকের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তার মতে, এই বৈঠকটি হলে দু’দেশের মধ্যে অমীমাংসিত অনেক সমস্যারই সমাধান হতো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।