Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মীরসরাইয়ে আগাম আমের মুকুল পরিচর্যায় মিলবে ভালো ফলন

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : বাংলার জনপদে আম কাঁঠালের  মৌ মৌ গন্ধ কার না চেনা? দুরন্ত শৈশবে কাঁচা-পাকা আম পাড়ার আনন্দ অনেকেরই স্মৃতিতে চির ভাস্কর। তাছাড়া বর্তমানে আম বাংলাদেশের প্রধান চাষযোগ্য অর্থকরী ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার, পুষ্টিমান এবং স্বাদ-গন্ধে আম একটি অতুলনীয় ফল। বিশেষ করে শীতের শেষে যখন আমের মুকুল আসে, আর সেই মুকুল থেকে যখন ছোট ছোট আম বের হয়, সেই আম পাড়তে গিয়ে মায়ের বকুনী বৃদ্ধ বয়সেও অনেকের কাছে স্মৃতিপটের চেনা ইতিকথা। মীরসরাই উপজেলার অনেক স্থানে এবার আগাম আমের মুকুল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মীরসরাই পৌর এলাকার দক্ষিণ তালবাড়িয়া এলাকায় চৌধুরী ম্যানশনের আঙিনায় দেখা যায় আমের মুকুল ধরেছে একটি গাছে। এছাড়াও মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর, দুর্গাপুর, ওচমানপুর, জোরারগঞ্জ, আবুতোরাব, মঘাদিয়া, সাহেলখালী, মায়ানী, করেরহাট, ইছাখালী, ওয়াহেদপুর, বড়দারোগারহাট, সোনাপাহাড় এলাকার অনেক বাড়ির আঙিনায়, পুকুর ধারে আম গাছে মুকুল ধরেছে। তবে এইসব মুকুলের যথযথ পরিচর্যা না করলে মুকুল ঝরে গিয়ে আমের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। মীরসরাই উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, আম গাছে ফুল আসার ১৫ দিন আগে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। টিএসপি ও এমপি সার দিতে হবে দুই-তিন বছর বয়সের গাছে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম, চার-পাঁচ বছর বয়সের গাছে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম, ছয়-সাত বছর বয়সের গাছে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম, আট-নয় বছর বয়সের গাছে ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম এবং ১০ বছরের ঊর্ধ্বে ৮৫০ থেকে এক হাজার ২০০ গ্রাম প্রতি গাছে। ফুল ফোটার সময় মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে পুষ্পমঞ্জরিতে পাউডারি মিলডিউ ও অ্যানত্রাকনোজ রোগের আক্রমণ হতে পারে। এতে গাছের পাতা, কচি ডগা, মুকুল ও কচি আমে কালো দাগ পড়ে। প্রতিকার হচ্ছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে একবার প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ১ মিলিলিটার রিপকর্ড বা সিমবুস ১০ ইসি এবং ০.৫ মিলিলিটার টিল্ট ২৫০ ইসি একসাথে মিশিয়ে আমের মুকুল, পাতা, কা-ে  স্প্রে করতে হবে। প্রাকৃতিক পরাগায়ণের জন্য আম বাগানে মৌমাছি পালন, বাগানের চারদিকে ফুলের গাছ রোপণ এবং বাগানে বিভিন্ন জাতের আমগাছ লাগানো প্রয়োজন। আম গাছে মুকুল আসার সময় হপার পোকা কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। এ ছাড়া রস চোষার সময় পোকা আঠালো পদার্থ নিঃসৃত করে। এতে ফুলে পরাগরেণু আটকে পরাগায়নে বিঘœ ঘটে। এ পোকা দমনের জন্য রিপকর্ড বা সিমবুস ও টিল্ট আগের নিয়মে  স্প্রে করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ ফুল এবং বর্ধিষ্ণু ভ্রƒণের পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য মুকুল ধরার ১৫ দিন আগে নিয়ম মাফিক সার প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত ফল পাতলা করে দিতে হবে। হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ  স্প্রে করলেও আমের মুকুল ও কচি আম ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করা যায়। যেমন- আমের মুকুল গুটি বাঁধার দুই সপ্তাহ পর ২০ পিপিএম মাত্রায় ২৪-ডি স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। আমের গুটি মসুর দানার মত বড় হলে ১০ লিটার পানিতে দুই থেকে তিন মিলিলিটার পানোফিক্স স্প্রে করলে ফল ঝরা বন্ধ হয়। মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, আমের মুকুল আসার পূর্বে গাছে পানি ছিটিয়ে পাতাগুলো ধুয়ে দিতে হয়। আমের মুকুল যখন গুটি দানার মতো হয় তখন ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হয়। মীরসরাইয়ে প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়। তবে উপজেলার ওয়াহেদপুর, দুর্গাপুর, মুহুরী প্রজেক্ট ও পাহাড়ী এলাকা আমের আবাদ বেশি ফলন হয়। আমের ফলন বেশি বেশি পেতে হলে যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ