Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

‘মূল হোতার খবর নেই, স্বজনদের টানাটানি!’

মিতু হত্যা মামলা

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মা-বাবাকে ৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ‘মূল হোতার খবর নেই, আর স্বজনদের নিয়ে যত টানাটানি!’ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদর দপ্তরে দাঁড়িয়ে এমন মন্তব্য করলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) ডাকে সাড়া দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যান মিতুর বাবা-মা। গাড়ি থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় আফসোসের সুরে ওই কথা বলেন বাবুল আক্তারের এক সহকর্মী।
এর আগে বাবুল আক্তারের শ্বশুরকে আরও এক দফায় ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইও কথা বলেন বাবুল আক্তারের বাবার সাথে। ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বাবুল আক্তারের এক খালাতো ভাইকেও।
দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী এই হত্যা মামলার রহস্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। ধরা পড়েনি নাটেরগুরুরাও। পুলিশ যাকে মূল হোতা বলছে সে মুছাকে ধরতে লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পরও তার কোনো হসিদ নেই। তবে মামলার তদন্তকারী সংস্থা এখন ব্যস্ত মিতুর স্বজনদের নিয়ে। ঘুরেফিরে শুধু তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
আইওর ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বন্দরনগরীর লালদীঘির পাড়ে সিএমপি সদর দপ্তরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে আসেন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি শাহেদা মোশাররফ নীলা। আইও আরও কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনকে আসতে বলেছিলেন। মামলার আইও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুজ্জামান বলেন, এ হত্যাকা-ের বিষয়ে কথা বলতে কয়েকজন আসার কথা ছিল। তবে তারা দুইজন এসেছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে আইওর সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন মিতুর স্বামী হত্যা মামলাটির বাদী সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। এরপর ২২ ডিসেম্বর বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনও আইওর সঙ্গে কথা বলতে ডিবি অফিসে আসেন। আইও’র জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, আমার মেয়ের খুনি কারা তাদের চিহ্নিত করা হোক, খুনের কারণ উদঘাটন করা হোক।
গতকালও সস্ত্রীক আইও’র সাথে দেখা করার পর সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা একই কথা বললেন তিনি। তার দাবি খুনি যে বা যারাই হোক তাদের চিহ্নিত করতে হবে। খুনের কারণ উদঘাটন করতে হবে। খুনিদের এমন বিচার করতে হবে যাতে আর কোনো মা-বাবা এভাবে সন্তানহারা না হয়। সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা মিতুর মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করেন আইও। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের জেরাও করেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, মিতু হত্যাকা-ের পেছনে আসল ঘটনা কি তা খতিয়ে দেখা হোক। কেন তাকে খুন করা হলো, এর নেপথ্যে কারা, সবকিছু তদন্ত করা দরকার। আর খুনি যেই হোক না কেন, বাবুল হোক, তার পরিবারের কোনো সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব হোক, যেই হোক না কেন তা বের করা হোক।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে মিতুর মা শাহেদা মোশাররফ বলেন, আমার মেয়ের স্বভাব-চরিত্র কেমন ছিল তা তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, মেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, পর্দা করতো, হিজাব পরত। বাবুলের সাথে যোগাযোগ আছে কিনা, নাতি-নাতনীদের সাথে যোগাযোগ হয় কিনা তা জানতে চেয়েছেন।
গত বছরের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন সদর দপ্তরে কর্মরত তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল ঢাকায় বদলি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে মিতু খুন হন। ঘটনার পর বাবুল ঢাকা থেকে গিয়ে মামলা করেন এবং দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় এসে শ্বশুর বাড়িতে ওঠেন।
শুরুতে এই হত্যাকা-ের জন্য  জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও পরে পুলিশের তদন্তে গতিপথ পাল্টায়। এর মধ্যে ২৪ জুন রাতে বাবুল আক্তারকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে নিয়েও নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। পরে বাবুল আক্তারকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। যদিও বলা হয়েছে বাবুল আক্তার পদত্যাগ করেছেন।
এ মামলায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেন নামে দু’জন নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত ২৬ জুন আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার নাম বলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান। রাশেদ ও নবী নামে দুই আসামি বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হত্যাসহ প্রায় ছয় মামলার আসামি মুছা ছিলেন চট্টগ্রামে বাবুল আক্তারের সোর্স। পাশাপাশি অস্ত্রের জোগানদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার এহতেশামুল হক ভোলাও বাবুলের সোর্স বলে পরিচিত। পুলিশ বলছে, এ হত্যাকা-ের মূলহোতা মুসা। সে ভাড়াটে খুনি দিয়ে মিতুকে হত্যা করে। মূসাকে ধরা গেলে খুনের রহস্য উদঘাটন করা যাবে। তবে এখনও পর্যন্ত মূসাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। যদিও মূসার পরিবারের সদস্যদের দাবি গত ২২ জুন মূসাকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ