Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাম-রুবেলায় আক্রান্ত হচ্ছে কুলাউড়া জেলে পল্লীর শিশুরা

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. মানজুরুল হক, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে : হাকালুকি হাওরপারের জেলে পল্লীতে হাম-রুবেলায় আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানা গেছে। কুলাউড়া উপজেলার ভূকশীমইল ইউনিয়নের সাদিপুর জেলে পল্লীর ১৬ জন শিশু। অপরদিকে ৯ মাসের একটি শিশুর মৃত্যুর হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার। জানা যায়, গত দুই মাসে পুরো উপজেলাজুড়ে ২০-এর অধিক শিশু আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়াও ওই এলাকায় ১৭ জন শিশু সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) টিকা পাননি। হাম-রুবেলা সংক্রামক ব্যাধি হওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র মতে, উপজেলার সাদিপুর এলাকায় হাম-রুবেলায় আক্রান্ত হয় ০ থেকে ৫ বছর বয়সের ১৬ জন শিশু। এছাড়াও ১৭ জন শিশুকে সনাক্ত করা হয় যাদেরকে ইপিআইয়ের কোন টিকা (ভ্যাকসিন) দেওয়া হয়নি। তাদের অধিকাংশের বয়স ৩ থেকে ৫ বছর। সরেজমিন ওইসব এলাকায় ঘুরে জানা যায়, ভূকশীমইলের দক্ষিণ সাদিপুর গ্রামের কালা মিয়ার ৯ মাসের শিশুকন্যা রীমা আক্তার প্রথমে হাম-রুবেলা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর মারা যায়। রিমা’র মা লিজা বেগম ও দাদি নাজমা বেগম বলেন নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখ জ্বর ও গায়ে ফেরা (হাম) হওয়ায় তাকে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে মৌলভীবাজার পরবর্তীতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল খালিক ও সরফর মিয়া জানান, রিমা আক্তার হাম রোগে অসুস্থ হওয়ার পর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আশপাশের কয়েকটি ঘরের প্রায় ৮ জন শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। মাস খানেক আগে হেলাল মিয়ার আড়াই বছরের মেয়ে সাউদা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তারা আরও বলেন সপ্তাহ খানেক আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও ইপিআই এর মাঠকর্মীরা সাদিপুর এসে হাম রোগে আক্রান্ত বেশ কয়েকজন শিশুকে সনাক্ত করেন। এই এলাকায় নভেম্বর মাস ধরে শিশুরা হাম রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিপদ বাড়তে পারে তার অশঙ্কায় রয়েছেন। এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হাম-রুবেলা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত শিশুরা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সুস্থ শিশুও দ্রুত আক্রান্ত হয়। রোগ প্রতিরোধের জন্য ১০টি (ইপিআই)-এর টিকা প্রদান করতে হয়। দ্রুত এর প্রতিকার না করা গেলে এতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। কুলাউড়া উপজেলা হেলথ্ ইনচার্জ আব্দুল আহাদ ও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির এমটি আপ্তাব হোসেন বলেন, এই এলাকায় আমাদের জরিপ অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত জনবহুল এই ওয়ার্ডের ৮টি ইউনিটে হাম রোগে আক্রান্ত ১৬ জন শিশু ও টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) টিকা পাননি এমন ১৭ জন শিশু সনাক্ত করা হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক বলেন, আমরা এ রোগের প্রকোপ কমাতে কাজ করে যাচ্ছি। হাম রোগ ও এর টিকা পাননি এমন (৯ থেকে ২৩ মাস বয়সী) শিশু সনাক্ত করে তাদেরকে টিকা প্রদানের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন হাম রোগে আক্রান্ত ও ইপিআইর টিকা পায়নি যে সকল শিশুরা তাদের বেশিরভাগই ৪/৫ বছরের। অনেক আগেই তারা ইপিআইয়ের টিকা থেকে বাদ পড়ায় এখন তারা আক্রান্ত হচ্ছে। মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে তাদের চিকিৎসার দিয়েছি। ৯ মাস থেকে ১৮ মাস বয়সী ৩৬ জন শিশু কোন প্রকার ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়নি তাদেরকে ভ্যাকসিন প্রদান করেছি। কুলাউড়ার সাদীপুর এলাকার কালা মিয়ার মেযে রিমা আক্তার লিমা (৯ মাস)-এর শিশু হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে অবগত নয়। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ