রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে : সিরাজগঞ্জ জেলায় ব্যাপকভাবে সরিষা চাষ হওয়ায় মৌ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন মৌ খামারীরা। এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌ খামারীরা সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় এসে মধু সংগ্রহ ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এ কারণে লাভজনক এ পেশায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সিরাজগঞ্জের মৌ খামারীরা এখন পুরোদমে মাঠে নেমেছে। বাক্সে পালিত মৌমাছিতে ভাগ্য বদলে সিরাজগঞ্জে মধু চাষি বাড়ছে। এদের পরিশ্রম আর পরিচর্যায় আয় খাতে অনেক টাকা জমছে। বিভিন্ন সমস্যার মাঝেই মধু চাষিরা এগুচ্ছে। এরা উৎপাদিত মধু বিক্রি করতে গিয়ে শোষণের শিকার হচ্ছে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। গোটা দেশের মধ্যে সিরাজগঞ্জে এখন সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক মধু চাষি এবং সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মধু উৎপাদন হয়ে থাকে। উল্লাপাড়া উপজেলা অঞ্চলে বর্তমানে মধু চাষি সংখ্যা ৩শ’ ৫০ জন। এরা সবাই সরকারি কিংবা বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়ে মধু চাষে নেমেছে। একেক জন চাষি একেকটি মৌ খামার গড়েছে। এখন সারা বছরই মধু চাষ হয়ে থাকে। তবে নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত মধু উৎপাদনের ভরা মওসুম। চলমান ভরা মওসুমে মৌ খামারীরা তাদের পালিত মৌমাছি নিয়ে এখন মাঠে নেমেছে। সরেজমিনের দেখা গেছে, এরা সরিষা ফসলের মাঠে পালিত মৌমাছির বাক্স একের পর এক সাজিয়ে রেখেছে। এর কাছাকাছিতে চাষিদের থাকার ব্যবস্থা বলতে তাবু খাটিয়ে থাকছে। এ সব খামারে ৫০ থেকে দেড়শ বাক্স রয়েছে। প্রতিটি বাক্সে ৫ থেকে ৭টি মাচা আছে। মধু চাষিরা জানান, প্রতি সপ্তাহে বাক্স প্রতি গড় হিসেবে ৫ থেকে সাড়ে ৫ কেজি পরিমাণ মধু মেলে। উল্লাপাড়ায় প্রতি বছর ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টন মধু উৎপাদন ও বিক্রি হয়ে থাকে। এবারে ১ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের মধু ভারতীয় একাধিক এবং দেশীয় নামকরা একাধিক প্রতিষ্ঠান পাইকারী কিনে নেয়। সিরাজগঞ্জে মধু চাষে এপিস ম্যালেফিরা জাতের মৌমাছি পালন করে মধু উৎপাদন করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের মধু চাষি অথাৎ মৌখামার মালিকের সংখ্যা ৩৫০ জন। উত্তরবঙ্গ মৌ চাষ সমবায় সমিতি নামে উল্লাপাড়ায় একটি সংগঠন গড়া হয়েছে। এরা সবাই সংগঠনটির সদস্য বলে জানানো হয়। এখানকার চাষিদের সবাই সরকারি কিংবা বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পেশায় নেমেছে। এর মধ্যে উল্লাপাড়া উপজেলা গভর্ন্যান্স প্রজেক্ট (ইউজেডজিপি) আওতায় ১২০ জন মধু চাষে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদেরকে মৌচাষের উপকরণাদি দেয়া হয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস এদেরকে বিভিন্ন সহযোগিতা করছে। চাপাইনবাবগঞ্জের মধু চাষি আনোয়ারুল ইসলাম প্রায় ১৬ বছর মধু চাষ পেশায় আছেন। তিনি জানান, মধু উৎপাদন এবং বিক্রিতে পরিশ্রম আর পরিচর্যা যথেষ্ট করতে হয়। তবে এতে আয় খাতে লাভ হয় বেশি। সাতক্ষিরার হাজী আইয়ুব আলী এ পেশায় ৩৭ বছর জড়িত আছেন। তিনি জানান, সম্ভাবনা হলেও সমস্যা তো আছে। বিশেষ করে উৎপাদিত মধু বাজারজাতকরণ মূল সমস্যা। এছাড়া আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় মৌমাছিগুলো নানা রোগ বালাই হলে এর ওষুধ সহজে পাওয়া যায় না। এতে করে ক্ষতি হয়ে যায়। উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমবায় সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শিশির কুমার সাহা প্রায় ১৬ বছর ধরে মধু চাষ পেশায় আছেন। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদিত মধু পাইকারি ক্রেতারা নানা অজুহাতে কম দামে কিনে নেয়। যা অনেকটা শোষণ বলে তিনি দাবি করেন। উল্লাপাড়া হাটিকুমরুলের আঃ রশিদ প্রায় ২২ বছর ধরে বাক্সে পালিত মৌমাছি নিয়ে মধু চাষের পেশায় আছে। তিনি একজন সফল মৌ খামারি। কঠোর পরিশ্রম, পরিচর্যায় ব্যবসায় অনেক উন্নতি করেছে। তিনি জানান, এ পেশায় আগ্রহ নিয়ে আসতে চাইলে তাকে সব দিক থেকে সহযোগিতা করে থাকেন। প্রতি বছর উল্লাপাড়ায় নতুন মৌ চাষি বাড়ছে। একটি খামার গড়তে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দরকার হয়। তবে অনেকের আগ্রহ থাকলেও পুজির অভাবে এ পেশায় আসতে পারছেন না। উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড. মারুফ বিন হাবিব, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সন্দ্বীপ কুমার সরকার ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খিজির হোসেন প্রাং তাদের এ পেশায় উৎসাহ ও বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে আসছেন বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, এটি কৃষি কিংবা শিল্প যেটাই ধরা হোক না কেন সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়া দরকার রয়েছে। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মধু রপ্তানি করা যাবে। উল্লাপাড়া উৎপাদিত মধু ভারতীয় ডাবর কোম্পানি এবং দেশীয় এপি সহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কাছ থেকে পাইকারি কিনে নেয়। তবে এরা বিভিন্ন অজু হাতে দাম কম দেয় বলে জানানো হয়। এরা কম দাম দিলেও বাধ্য হয়েই এদের কাছে বিক্রি করতে হয়। কারণ এরা না নিলে এতো বেশি পরিমাণ মধু অন্য জায়গায় বিক্রি করা সম্ভব হবে না। তিনি জানান, সরকারিভাবে উল্লাপাড়া অঞ্চলে মধু প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন এবং খামারীদেরকে পুঁজি বাড়াতে আর্থিক সহায়তা দেয়া হলে সিরাজগঞ্জের উৎপাদিত মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন তাদের উৎপাদিত মধুই ভারতীয় এবং দেশীয় কোম্পানিগুলো মোড়ক লাগিয়ে অনেক বেশি দামে বাজারজাত করছে। উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার খিজির হোসেন প্রাং জানান সিরাজগঞ্জের উৎপাদিত মধু গুণে অনেক উন্নত। গত মৌসুমের চেয়ে এবারে উৎপাদন আরও বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া মধু চাষিদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সব সময় আন্তরিকতা নিয়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।