Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাম্পার ফলন ও ভাল দাম পেলে কৃষকের মুখে ফুটবে হাসি

দামুড়হুদায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : চলতি রবি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় আবারও ভূট্টা চাষে বিপ্লব ঘটেছে। উপজেলায় এবছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে। গতবারের মতো চলতি মৌসুমেও দেশের ৬৪ জেলার ভূট্টা আবাদের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলন ও ভাল দাম পাওয়ায় চাষিরা ব্যাপকভাবে ভূট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমেও ভূট্টার বাম্পার ফলন আশা করছেন ভূট্টা চাষিরা। বাম্পার ফলন ও ভাল বাজারদর পেলে এবারও ভূট্টাচাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটবে এমনটাই মনে করছেন অনেকে। জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৮শ’ হেক্টর। গত রবি মৌসুমে মোট কৃষি জমির অর্ধেকরও বেশি জমিতে ভূট্টার আবাদ করে এলাকার চাষিরা। অনুকূল আবহাওয়ায় ভূট্টার বাম্পার ফলন ও সেইসাথে ভাল বাজারদর পেয়ে ভূট্টাচাষিরা লাভবান হয়। অন্যান্যদের মতো এবারও লাভের আশায় চাষিরা ব্যাপকভাবে ভূট্টাচাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৪ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে ভূট্টাচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জিত হয়েছে ১৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমি। যা গতবারের তুলনায় প্রায় এক হাজার হেক্টর বেশি।  উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা, মদনা, কুড়ালগাছি, চন্দ্রবাস, জুড়ানপুর, জয়রামপুর, হাউলি, নতিপোতা, কলাবাড়ি, গোপালপুর, দামুড়হুদা এলাকায় ব্যাপকভাবে ভূট্টার আবাদ হয়েছে। ভুট্টাচাষী হাউলী গ্রামের আঃ মজিদ, আজিজুল, নাস্তিপুর গ্রামের জাকির চৌধুরী, আব্দুল কাদের, রূদ্রনগর গ্রামের মনিরুল, লোকনাথপুর গ্রামের বাবলু, আইনাল ও জয়রামপুর গ্রামের আবুল কালাম বলেন, আমরা প্রতি বছর ভুট্টার চাষ করে থাকি। গত বছর ভুট্টা উঠার সাথে সাথে ভাল দামে ড্যাপ(আধা শুকনা) ভুট্টা বিক্রি করে লাভবান হয়েছিলাম। লোকনাথপুর গ্রামের ভুট্টাচাষি বাবলু বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। গাছও ভাল হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভাল হবে আশা করছি। পরানপুর গ্রামের ভূট্টাচাষি জাহিদুল বলেন, গত বছর ভূট্টার আবাদ করে লাভ হওয়ায় এবারও ৫ বিঘা জমিতে ভূট্টার আবাদ করেছি। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে অন্যান্য ফসলের আবাদে লোকসানগ্রস্ত হয়ে এলাকার চাষিরা কয়েক বছর থেকে ব্যাপকহারে ভূট্টা আবাদে ঝুঁকে পড়েছে। ফলন ও দাম ভালো পেলে গতবারের মতো এবারও চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে। ভূট্টাচাষিরা জানান, ভূট্টা আবাদে সময় ও খরচ কম লাগে এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় এ আবাদে ঝুঁকিও কম। ভরা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে অন্য ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হলেও এ ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হয় না। এবার ফসল ওঠার আগে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে চাষিরা বিঘাপ্রতি ২৮ থেকে ৩০ মণ ভূট্টা ঘরে তুলতে পারবেন। বাজারে চাহিদাও ভাল দাম থাকলে গতবারের মতো এবারও লাভবান হতে পারবেন। চাষিরা অভিযোগ করে বলেছেন, দেশে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ভূট্টার আবাদ হলেও এর বীজ উৎপাদনের ব্যাপারে সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ নেই। বর্তমানে ভূট্টা বীজ শতভাগ আমদানিনির্ভর। আর দামও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অনেক সময় দালালের খপ্পরে পড়ে চটকদার মোড়ক দেখে বেশি দামে খারাপ বীজ কিনে চাষিরা প্রতারিত হন। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগে দেশে ভাল বীজ উৎপাদন হলে চাষিরা উপকৃত হবে। বর্তমানে দেশে ভূট্টার বহুমুখী ব্যবহার শুরু হওয়ায় এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। আগে দেশে পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু হলে মুরগির খাবার হিসাবে প্রথম দিকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে পরিমাণ ভুট্টা আমদানি করতে হতো। ৫/৬ বছর যাবৎ দেশের উৎপাদিত ভূট্টা দিয়ে সে চাহিদা পূরণ হওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। উপরন্তু কয়েক বছর যাবৎ আমাদের দেশের উৎপাদিত ভূট্টাই রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এছাড়া ভূট্টা ও ভূট্টাগাছের কোন অংশই ফেলনা নয়। এর কাঁচা পাতা গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাদ্য। শুকনা গাছ ও মোচার ফেলে দেয়া অংশ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়। অনেকে মনে করেন, ভূট্টার শুকনা গাছ ও মোচার ভিতরের অংশ দিয়ে কাগজ, পারটেক্স ও চারকোল তৈরির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে ভূট্টার শুকনা গাছ দিয়ে কাগজ বা পারটেক্স তৈরি করে দেশের চাহিদা মেটানো সেইসাথে চারকোল তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ভূট্টাচাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাই সবদিক বিবেচনা করে সরকার যদি নজর দেয় তবে এ ভূট্টাচাষই পাল্টে দিতে পারে দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র এমনটাই মন্তব্য সচেতন মহলের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ