রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
খলিল শিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হলে এখনো উৎসাহিত হয়ে জড়ো হতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। গ্রামীণ এলাকার জনপ্রিয় খেলার মধ্যে গরুর গাড়ির দৌড়, ঘোরদৌড়, হা-ডু-ডু ও বলিখেলা বা কুস্তিখেলা উল্লেখযোগ্য। এখনো এ খেলার নাম শুনলেই প্রশাসনের সহযোগিতায় দর্শক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তবে আবাসন পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনো কোনো স্থানে এসব খেলা মাঠ সংকটে হারিয়ে যেতে বসেছে। কোথায় ৫ বছরেও চোখে পড়ে না এমন সব জনপ্রিয় খেলা। নানা বাধা ও সরঞ্জাম সংকটের মুখে কোথাও খেলোয়ার সংকটে আয়োজকরা রয়েছেন বিপাকে। আবার সমতল আবাদপূর্ব ফসলি মাঠকে নির্বাচন করেছেন কোন কোন আয়োজকরা। তাদের মধ্যে রূপগঞ্জের হাটাব এলাকার জুলহাস, রবিউল ও শাহাজাহান সর্বপ্রথম ১৯৯১ সালে তাদের গায়ের আবাসপূর্ব সমতল ফসলি মাঠে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়। সেই সময় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ঘোড়াগুলো পাওয়া যেত একই উপজেলা ভোলাব ইউনিয়ন এলাকায়। তৎকালীন কৃষকের গৃহপালিত গবাদিপশুর পাশাপাশি ঘোড়া পালনও একটি রেওয়াজ ছিল। কালের বিবর্তে আজ এই উপজেলার কোথাও মেলে না ঘোড়াশাল বা ঘোড়া পালন করে জীবিকার সন্ধান। তবে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা থেমে যায়নি তাদের। গাজীপুরের কাপাসিয়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও রংপুর থেকে ঘোড়া ভাড়া করে নিয়ে আসেন স্থানীয় প্রতিযোগীরা। হাটাব এলাকার জহিরুল হক জানান, হাটাব এলাকার প্রাক্তন প্রয়াত ইউপি সদস্য আমাল বক্স বহুবার ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চেয়েছিলেন। তখন এই এলাকার বিলে খালের অভাবে পানিবন্দি থাকায় তা হয়ে ওঠেনি। পরে খাল কাটা কর্মসূচির আওতায় এ বিলের পানি নিষ্কাশন করায় এখন সমতল আবাবপূর্ব ফসলির মাঠেই আয়োজন হয় ঘোড়দৌড়। এখন দর্শকনন্দিত এ খেলা দেখতে প্রতিবছর লাখো জনতা ভিড় করেন। এবারও সকাল থেকে উপজেলার হাটাবো, কাঞ্চন, ভুলতা, তারাবা, দাউদপুর, ভোলাব, গোলাকান্দাইলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররা হাটাবো ঘোড়দৌড় মাঠে জড়ো হতে শুরু করে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মোয়া, মুড়ি, কড়ি, মোড়ালিসহ দেশীয় খাবার নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন লাখো জনতা। এতে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ৮০টি ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ক গ্রুপ ও খ গ্রুপ নামে দুটি খেলা দেয়া হয়। এতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন টাঙ্গাইলের আবুল ড্রাইভার। ক গ্রুপ থেকে একটি মোটরসাইকেল পুরস্কার দেয়া হয়। এছাড়া খ গ্রুপ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন টাঙ্গাইলের সবুজ। তাকে ২১ ইঞ্চি রঙ্গিন টেলিভিশন পুরস্কার দেয়া হয়। এছাড়াও আরো যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের মধ্যে ৪টি রঙ্গিন টেলিভিশন ও ৩টি মোবাইল সেট পুরস্কার দেয়া হয়। হাটাব এলাকার সমাজসেবক ও রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, হাটাবতে অনুষ্ঠিত এ খেলায় প্রতিবছর প্রায় লাখো দর্শকের ভিড় হয়। বিগত ২৫ বছরের ধারাবাহিকতায় এ খেলায় বহুবার দর্শক নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খেতে হয়েছে প্রশাসনের। তাই প্রতি বছরের ন্যায় রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা এ আয়োজন সফল করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামীণ খেলা রক্ষায় ভবিষ্যৎ আরো পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি। স্থানীয় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় আসা দর্শক মাহবুব আলম প্রিয় বলেন, খেলোয়ার সংকটে এই এলাকা থেকে গ্রামীণ জনপ্রিয় খেলা হা-ডু-ডু, কুস্তি ও লাঠিখেলা হারিয়েই যাচ্ছে। উপজেলার রানী পুরা মাদ্রাসা মাঠে হা-ডু-ডু খেলা দেখতে আসা দর্শকদের ভারে ভেঙে পড়া ভবন ও দুর্ঘটনার পর থেকে এই এলাকায় হা-ডু-ডু খেলা আর দেখা যাচ্ছে না। আয়োজক সংকটের কথাও বলেন তিনি। এ সময় তিনি আরো জানান, ঘোড়দৌড়সহ এসব খেলার প্রতিটিতেই হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতি থাকে। এসব দর্শক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের লোকজনও হিমসিম খায়। জনপ্রিয় খেলা হলেও সরকারিভাবে উপজেলা ভিত্তিক এ খেলাগুলো রক্ষায় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, বাংলার সংস্কৃতি ধরে রাখতে হলে প্রতিটি এলাকায় এ ধরনের পুরনো ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলার দরকার। তাহলে দেখা যাবে যুব সমাজ মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- থেকে দূরে থাকবে। সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) বলেন, ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতাটি প্রাচীন ঐতিহ্য। আমি আশা করবো এ ঐতিহ্য যেন ধরে রাখা হয়। আজকে ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে আগত লাখো মানুষের উপস্থিতিই প্রমাণ করে তারা ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতাকে পছন্দ করেন। আগামীতেও এই সময় ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজনের জন্য দাবি জানান আয়োজকদের কাছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।