Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

না’গঞ্জ সাত খুনের রায় প্রশংসিত : অন্যান্য খুনেরও ন্যায়বিচার করা হোক

উপ-সম্পাদকীয়

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোবায়েদুর রহমান : বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের রায় যদি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়ও তাহলে সেটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পন্ন হতে কম করে হলেও পাঁচ বছর সময় লাগবে। আসলে পাঁচ বছরের বেশি লাগারই আশঙ্কা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু তথ্য এসেছে। ওইসব তথ্যে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত দেশের প্রেসিডেন্ট যেসব মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছেন তাদের সংখ্যা ৬। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ আমলে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত যেসব আসামিকে প্রেসিডেন্ট প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছেন তাদের সংখ্যা ৩০। তাই এখন অনেকেই একটি বিশেষ আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, যে ২৬ জনের মৃত্যুদন্ড হয়েছে তাদের মধ্যে নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিল। যার নেতৃত্বে নূর হোসেন এসব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সেই র‌্যাব কমান্ডার লে.  কর্নেল তারিক সাঈদ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রাক্তন শীর্ষ নেতা এবং বর্তমানে দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ের জামাতা। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত র‌্যাবের অপর আসামি আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্যের অতি নিকটাত্মীয়। সংবাদপত্রে তিন দিন ধরে এগুলো নিয়ে অনেক কথা উঠছে। অনেক নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, শেষ পর্যন্ত কি এদের সবার ফাঁসি হবে? নাকি সংখ্যাটি কমে যাবে। কারণ এরপরেও রয়েছে আরো ৪-৫টি ধাপ।  এসব ধাপ পেরোনোর পর চূড়ান্ত পর্যায়ে দন্ড প্রদানের অবস্থা কী দাঁড়ায় সেটি এ মুহূর্তে বলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কলামে আরেকটি তথ্য দেওয়া হয়েছে। ওই তথ্যে বলা হয়েছে, এ ধরনের হত্যাকান্ডের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে লোমহর্ষক হত্যাকান্ড হলো বিডিআর ম্যাসাকার। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ভয়াবহ হত্যাকান্ড ঘটে। সেই হত্যাকান্ডে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এই হত্যাকান্ডের যে বিচার হয়েছে সেই বিচারে যতদূর মনে পড়ে, ১৬২ ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। এখন এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে এই আপিলের নিষ্পত্তি কবে এবং কীভাবে হবে, সেটি কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না। কারণ ১৬২ জন আসামির প্রত্যেকের কেসকে আলাদাভাবে শুনানি করতে হবে। বিডিআর ম্যাসাকারের পর প্রায় ৮ বছর হতে চলল। এরপর আরো কত দিন লাগবে কে জানে। অনুরূপভাবে নারায়ণগঞ্জ হত্যাকান্ড নিয়েও অনেকের একই রকম আশঙ্কা। এই মামলার রায় বের হওয়ার পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এই এক সপ্তাহে অনেক নতুন নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। দেশের বেশ কয়েকজন কলাম লেখক এবং বুদ্ধিজীবী বলেছেন, আরো অনেক অপহরণ ও খুনের সাথে র‌্যাবের এসব অফিসার জড়িত। তাই এসব অফিসার অন্য যেসব অপরাধ করেছেন সেগুলোরও তদন্ত হওয়া দরকার এবং প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসা দরকার। বলা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব অফিস ছিল একটি বুচার হাউস বা কসাইখানা। আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমান্ডার তারেক সাঈদ কমপক্ষে আরো ১১টি খুনের সাথে জড়িত। এসবের সাথে একাধিক বিএনপি ও জামায়াত নেতার অপহরণ ও খুনের ঘটনা জড়িত রয়েছে। তাই বিএনপি বা জামায়াতপন্থি পত্রিকা নয়, বরং যেসব পত্রিকাকে একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী মুক্তকণ্ঠ বলে মনে করেন সেসব পত্রিকাতেও বলা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব অর্থাৎ র‌্যাব-১১ এর হাত দিয়ে যেসব গুম ও খুনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ জনসমক্ষে আনা হোক। ওইসব খুনের ঘটনার ২-৪টি কেস যদি নতুন করে নিরপেক্ষ তদন্তের আওতায় আসে, তাহলে কেঁচো খুঁড়তে অনেক সাপ বেরিয়ে আসবে।
দুই.
যেদিন রায় বের হয় তার একদিন পর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এ রিপোর্টে এমন কিছু তথ্য পরিবেশিত হয়, যা বিগত দুই বছর সাত মাসে কোথাও প্রকাশ হয়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, যিনি খুন হয়েছেন সেই কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। আবার যিনি খুন করিয়েছেন সেই নূর হোসেনও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। নজরুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে যেমন নূর হোসেনের ছদ্মবেশী অনুচর ছিল তেমনি নূর হোসেনের সমর্থকদের মধ্যেও নিহত নজরুলের অনুচর ছিল। তেমনি একজন অনুচরের কাছ থেকে হত্যাকান্ডের ১৫ দিন আগে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম খবর পান যে, নূর হোসেন নজরুলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে। ডেইলি স্টারের ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, এ খবর পাওয়ার পর নজরুল এবং তার পরিবারের সদস্যরা নারায়ণগঞ্জের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের সাথে যোগাযোগ করেন। ওই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ তাকে কিছু দিনের জন্য গা-ঢাকা দেওয়ার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ মোতাবেক নজরুল রাজধানী ঢাকার একটি অজ্ঞাত স্থানে কিছু দিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকেন। কিন্তু তার ভাগ্য খারাপ। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল একটি ফৌজদারি মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য নজরুলকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসতে হয়। আদালতে হাজিরা দিয়ে সেদিনই তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে একটি মাইক্রোবাসযোগে রওয়ানা হন। তার সাথে ছিলেন মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন এবং নজরুলের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম। তাদের মাইক্রোবাসটি ফতুল্লার খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের কাছে পৌঁছালে আরেকটি মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে।
নজরুলসহ তারা পাঁচজন অপহৃত হন। তাদের অপহরণের ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার এবং তার ড্রাইভার ইব্রাহিম দেখে ফেলেন। ফলে তারাও অপহৃত হন। অপহরণের এ খবর শুনে নজরুলের পরিবারের সদস্যরা নারায়ণগঞ্জে সেই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের সাথে দেখা করেন, যার সাথে ইতিপূর্বে তারা আরেকবার যোগাযোগ করেছিলেন। ওই রাজনীতিবিদ তখন তাদের বিষয়টি র‌্যাবের নিকট জানাতে বলেন। নজরুলের অনুসারীরাসহ তার পরিবারের সদস্যরা র‌্যাব অফিসে যান। ২৮ এপ্রিল নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম র‌্যাবের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ করেন যে, র‌্যাব তার স্বামী এবং অন্যদের অপহরণ করেছে। কিন্তু র‌্যাব এ অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দেয়।
তিন.
নারায়ণগঞ্জ সাত খুন হত্যা মামলার ২৬ জনের ফাঁসির রায় প্রকাশ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জস্থ র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অনেক কুকীর্তি ফাঁস হতে শুরু করেছে। একটি বাংলা দৈনিকে এ সংক্রান্ত যে খবর ছাপা হয় তার শিরোনাম  ছিল “র‌্যাব-১১ ছিল কসাইখানা/তারেক সাঈদের নেতৃত্বে আরো ১১ জন গুম।” খবরে বলা হয়, “অবিশ্বাস্য হলেও সত্য নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব ব্যাটালিয়নের তৎকালীন হেডকোয়ার্টারটি রীতিমতো কসাইখানায় পরিণত হয়। তারেক সাঈদের নেতৃত্বে এই ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা অস্ত্র, যানবাহন ও ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেন। মেজর আরিফ ও এস এম রানা যে দুটি ক্রাইম ডিভিশনের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সেখানে গোপন টর্চার সেল তৈরি করা হয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, না’গঞ্জ ছাড়াও র‌্যাব-১১ এর আওতাধীন অন্যান্য জেলায় ১১ জন গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা আরো বেশি। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয় সে সময় যারা নিখোঁজ হয়েছে এবং আজও যাদের সন্ধান মেলেনি তাদের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালালে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলার তদন্ত বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। কারণ প্রভাবশালী ব্যক্তির জামাতা হওয়ার সুবাধে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ এসব তদন্তকে প্রভাবিত করতেন। র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জে ওই সাত ব্যক্তিকে নির্মমভাবে খুন করা ছাড়াও আরো ১১ ব্যক্তিকে গুম ও খুন করা হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো এদের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। এদের একজন হলেন ইসমাইল হোসেন। তিনি ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে নিখোঁজ হন। একপর্যায়ে তারা খবর পান যে, র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে তাকে আটক রাখা হয়েছে। এরপর প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে কিন্তু ইসমাইলের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। নূর হোসেন ভারত থেকে ফিরে এলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নূর হোসেন জানায়, তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও এস এম রানা ইসমাইলকে অপহরণ করেছেন। এরপর তদন্ত হয় এবং তদন্তে র‌্যাবের ওই তিনজনসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এসব হতভাগ্যের আরেকজন হলেন যুবলীগ নেতা হাসান শাওন। ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ শাওনকে তার বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। শাওনের মাতা আনোয়ারা বেগম র‌্যাবের ১৫ জন সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। প্রায় দুই বছর হয়ে গেল মামলাটি ঝুলে আছে। ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল নোয়াখালীর চাটখিলের যুবলীগ নেতা মোসলেম উদ্দীন তার স্ত্রীকে নিয়ে নাইট কোচে ঢাকা আসছিলেন। রাত ৩টায় গোমতি ব্রিজের ওপর হঠাৎ করে তল্লাশি চালায় র‌্যাব। তারপর তার চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। মোসলেম উদ্দীনের স্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে জানান, তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে র‌্যাব। আজো তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা তাজুল ইসলামকে র‌্যাব ধরে নিয়ে যায়। তাজুলের ক্লিনিকটি দখল করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ডাক্তার কামারুজ্জামান র‌্যাবকে দিয়ে তাজুলকে অপহরণ করান। তিন বছর হয়ে গেল, মামলাটি ঝুলে আছে। আর তাজুলেরও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। লাকসাম থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে র‌্যাবের হাতে অপহৃত হন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু। তার সাথে ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি কবির পারভেজ এবং পৌর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমুদ্দীন। র‌্যাব তিনজনকে আটক করে। পরে জসিমুদ্দীনকে ছেড়ে দেয়। তারপর আর তাদের কোনো খবর নেই। ২০১৪ সালের ১৮ মে তারেক সাঈদ, কোম্পানি কমান্ডার মেজর শাহেদ, ডিএডি শাহজাহান আলী, এসআই কাজী সুলতান আহমেদ এবং এসআই অসিত কুমার রায়কে আসামি করে মামলা করা হয়। যথারীতি র‌্যাব অভিযোগ অস্বীকার করে।
প্রথম আলোর ওই রিপোর্ট মোতাবেক ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর র‌্যাব-১১ এর হাতে নির্মমভাবে খুন হন লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডাক্তার ফয়েজ আহম্মেদ। তারেক সাঈদের নেতৃত্বে র‌্যাবের পোশাক পরে র‌্যাব সদস্যরা শয়নকক্ষ থেকে তাকে আটক করেন। তারপর তার বাড়ির ছাদে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারেক সাঈদের নির্দেশে তাকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। এরপর বাড়ির ছাদ থেকে তাকে নিচে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তারেক সাঈদ নিহত ডা. ফয়েজের ছেলে বেলালকে ধরে আনার এবং গুলি করার হুকুম দেন।
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যাকান্ড নিয়ে পানি কম ঘোলা করা হয়নি। যারাই এই হত্যাকান্ড নিয়ে প্রতিবাদমুখর হন তাদেরকেই একের পর এক গ্রেফতার করা হয়। এদেরই একজন হলেন কালাম সিকদার। শহরে ঘুরতে বের হলে র‌্যাবের টহল টিম তাকে আটক করে। কালাম সিকদারের ওপর অমানবিক জুলুম চালায় র‌্যাব। সে নিজে এ হত্যাকান্ডে জড়িত, এমন স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে। শত জুলুম সত্ত্বেও কালাম স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হননি। তারপর তিন বছর পার হয়ে গেছে। কালাম আর ফিরে আসেননি। তিনি আর কোনো দিন ফিরে আসবেন কিনা তা কেউ জানে না। ২০১৪ সালের ৩ ও ৫ এপ্রিল নোয়াখালীর উবির চরে কমান্ডো অভিযান চালায় র‌্যাব। প্রথম আলোর রিপোর্ট মোতাবেক মুহুর্মুহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয় নির্জন চরাঞ্চল। অভিযান শেষে ৩ ব্যক্তির রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরা হলেন জাসু, যাবেদ ও সুমন। ক্রসফায়ারে মারার পর প্রথম আলোর রিপোর্ট মোতাবেক এদের ডাকাত বলে সাজানো হয়।
র‌্যাবের একটি অংশের এসব লোমহর্ষক অপকর্মের আরো অনেক কাহিনী রয়েছে। সেগুলো বলতে গেলে একটি সিরিজ লিখতে হবে। আজ এখানেই শেষ করছি। শেষ করার আগে একটি কথা। নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের বিচার করে আদালত সারা দেশের প্রশংসাভাজন হয়েছে কিন্তু এতক্ষণ ধরে যে ১১ জনের কথা বলা হলো, তারাও মানুষ। তারাও সংখ্যায় ১/২ জন মানুষ নন, ১১ জন। এদের অপহরণ বা খুনেরও বিচার হতে হবে। একবার যখন বিচার শুরু হয়েছে তখন সব গুম ও খুনের বিচার হতে হবে। অনেকেই তো বলেছেন, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে সেই সংস্কৃতির কারণেই দেশে এই খুন ও হত্যাকান্ড নির্বিচারে চলছে। এসব হত্যাকান্ডের বিচার করে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে।



 

Show all comments
  • মুরাদ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ২:৫৯ এএম says : 0
    রায় হয়েছে। এখন সেটা দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সুজন ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:২৮ এএম says : 0
    ২৬ জনের মৃত্যুদন্ডই যেন কার্যকর করা হয়। তাহলে এই রায়ের মত প্রসংশিত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হুমায়ন কবির ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৭ এএম says : 0
    সকল হত্যাকান্ডের বিচার করে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আশরাফুল ইসলাম ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৮ এএম says : 0
    এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য লেখক মোবায়েদুর রহমান সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • আদনান ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৯ এএম says : 0
    খুন, গুমসহ অন্যান্য সকল অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sahin ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৫ এএম says : 0
    ai ray er maddome jonogoner moddhe asar alo dekha dease ....... ata ke dhore rakhte hobe.
    Total Reply(0) Reply
  • Khaled ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৬ এএম says : 0
    kobe je oderke fasite julano dekhbo ??????
    Total Reply(0) Reply
  • Reza ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৭ এএম says : 0
    kono oporadider ke e sar dea thik hobe na
    Total Reply(0) Reply
  • Tamanna ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৮ এএম says : 0
    একবার যখন বিচার শুরু হয়েছে তখন সব গুম ও খুনের বিচার হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sufian ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫১ এএম says : 0
    kobe je deshe puropuri ayen er sason establish hobe ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ