বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মেহেরপুর থেকে ফারুক মল্লিক : এ পৃথিবী কত নিষ্ঠুর কোনো পরিবার সুখের সাগরে সাঁতার কাটছে। আবার কোনো পরিবারের অসহায়ত্ব সীমানা ছাড়িয়ে মৃত্য আবেদনও করতে কোনো দ্বিধাবোধ করছেন না। আমরা কি পারি না এতটুকু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে অসহায় তোফাজ্জেল হোসেনের পাশে দাঁড়াতে?
জটিল রোগে আক্রান্ত সন্তানদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করে বাঁচানোর কোনো পথ না পেয়ে অবশেষে সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু কামনা করে জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন মেহেরপুরের হতাশাগ্রস্ত এক পিতা। তবে রোগাক্রান্ত পরিবারের কাছে গিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
জেলা শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়পাড়ার ফল ব্যবসায়ী তোফাজ্জেলের দুই ছেলে সবুর, রায়হানুল ও মেয়ের ছেলে (নাতি) সৌরভের ডুফিনি মাসুকলার ডিসট্রোফি রোগে আক্রান্ত (মাংসপেশিতে পুষ্টির অভাবজনিত অসুখ)। যার চিকিৎসা আজো আবিষ্কার হয়নি। দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিকিয়ে দিতে হয়েছে তাকে। রোগাক্রান্ত সন্তানদের সুচিকিৎসার জন্য দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয়নি। তিলে তিলে চোখের সামনে সন্তানদের মৃত্যু দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই এ পরিবারের। তোফাজ্জেলের কাঁধের ওপর থেকে নিকটাত্মীরাও হাত সরিয়ে নিয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে বড় সন্তানটি। একমাত্র মেয়ের সন্তানটির শরীরেও একই রোগ বাসা বেঁধেছে। তোফাজ্জেলের স্ত্রী সেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় তোফাজ্জেলও চোখে অন্ধকার দেখছেন। চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে জেলা প্রশাসকের কাছে তোফাজ্জেলের আবেদনÑ হয় আমার সন্তানের চিকিৎসাভার নেয়া হোক অথবা তাদের মৃত্যুর অনুমতি দেয়া হোক।
আবেদনপত্র পেয়ে রোগাক্রান্ত পরিবারের কাছে গিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান।
আবদুস সবুর ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে সময় তার রোগটি দেখা দেয়। ফলে তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। সে সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: মাহাবুবুল আলম রোগটি শনাক্ত করেন। ভারতের কেয়ার হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ গৌরাঙ্গ ম-ল, তপন কুমার বিশ্বাস, ভারতের কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: স্বপন মুখার্জিও সবুরের মলমূত্র, রক্ত, কফ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন ‘ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’ ডিজিজ বলে।
তোফাজ্জেল হোসেন তার সন্তানের আরোগ্যে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দূতাবাসেও ছুটে গেছেন। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস সহযোগিতা দিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে রোগের ওষুধ কি জানতে চেয়ে অনুরোধ করেন। এই অনুরোধের উত্তরে তোফাজ্জেল হতাশ হয়ে পড়েন। শত শত চিকিৎসক ইন্টারনেটে জানিয়েছেন, এখনও এই রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। এই রোগটি ক্যান্সারের চেয়েও ভয়াবহ বলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন। আক্রান্তের শরীরে সব অংশের মাংসপেশি আস্তে আস্তে জমাট বেঁধে যাবে। চলাফেরা বন্ধের সাথে সাথে কথা বলার শক্তিও হারিয়ে যাবে। মাংস জমাট হওয়ার কারণে ও কোনো ওষুধ আবিষ্কার না হওয়ায় এ রোগমুক্ত করা সম্ভব নয়। চিকিৎসায় কোনো সুফল মিলবে না। বাড়বে শুধুই যন্ত্রণা। আক্রান্তের কয়েক বছরের মধ্যেই রোগী মারা যাবে। শিশু বিশেষজ্ঞরা এ-ও জানিয়েছেন, বাবা-মার জেনেটিক ডিজঅর্ডারের কারণে সন্তানদের মধ্যে সাধারণত এই রোগ দেখা দেয়। তবে তোফাজ্জেল হোসেনকে আশার বাণী শুনিয়েছেন ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথি’ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ মেয়াদের চিকিৎসায় এ রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব। যদি সেখানে ভর্তি করা যায়। একটু আশার পথ দেখলেও অর্থ সঙ্কটের কারণে সন্তানদের চিকিৎসার পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে তোফাজ্জেল আবেদন করেন আক্রান্ত ছেলেদের মৃত্যুর অনুমতি দিন অথবা চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হোক।
আবেদনের প্রেক্ষিতে মেহেরপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খাইরুল হাসান এই তিন সন্তানকে দেখতে গিয়ে বলেন, তিন সন্তানের মৃত্যু চেয়ে আবেদন পেয়ে এখানে ছুটে এসেছি, তোফাজ্জেলের পরিবারের সকলে ডুফিনি মাসুকলার ডিসট্রোফি রোগে আক্রান্ত। তিনি সন্তাদের রোগমুক্তির জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। এখন তিনি তার সন্তানদের আর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাবর জানানো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।