পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : স্বামী ইসমাইল হোসেন আর বেঁচে নেই- তা অনেকটাই নিশ্চিত জোসনা বেগম। স্বামীকে বাঁচানোর জন্য কোটি টাকা নিয়ে র্যাবের অফিসে কয়েকদিন ঘুরেছেন। কিন্তু তৎকালীন র্যাবের অধিনায়ক তারেক সাঈদের দাবি ছিল দুই কোটি টাকা। সেই টাকা জোগাড় করতে না পারায় ইসমাইলকে জীবন দিতে হয়েছে। জোসনা বেগম বলেন, তিনি তো আর বেঁচে নেই। কিন্তু কোথায় তাকে কবর দেয়া হয়েছে সেটা জানলেও তো পোলাপান সেখানে গিয়া কান্নাকাটি কইর্যা মনটা হালকা করতো, দোয়া দরূদ পড়তে পারতো। আমার চার ছেলে-মেয়ের কপাল খারাপ। সেই সুযোগটাও হলো না।
২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। মাগরিবের নামাজের পর এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন ইসমাইল হোসেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মিজমিজি গ্রামে সেই আত্মীয়ের বাড়ি। ইসমাইল মহাসড়ক ধরে শহীদ চেয়ারম্যানের গার্মেন্টসের সামনে এলে একটি গাড়ি এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক খোঁজাখুজি করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার ১৪ দিন পর র্যাবের সোর্স মঞ্জু এবং আরো একজন একটা চিঠি নিয়ে ইসমাইলের বাড়িতে আসে। তারা ইসমাইলের স্ত্রীর হাতে চিঠিটা দেয়। চিঠিতে ইসমাইলের নিজের হাতের লেখা ‘আমাকে বাঁচাতে হলে দুই কোটি টাকা দিয়ে দাও’। জোসনা বেগম বলেন, ওই চিঠি পাওয়ার পর আমরা নিশ্চিত হই, তিনি র্যাবের কাছে আছেন। এরপর আমরা র্যাব-১১ এর অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করি। ইসমাইলের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে জীবিত ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তারেক সাঈদ আমার কাছে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। আমি বহু কষ্টে এক কোটি টাকা জোগাড় করে র্যাব অফিসে যাই। কিন্তু তারা এক কোটি টাকা নিতে রাজি হয়নি। র্যাবের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বলা হয়, তোমাদের প্রতিপক্ষ দেড় কোটি টাকা দিয়েছে তোমার স্বামীকে মারতে। এখন তাকে বাঁচাতে হলে প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি দিতে হবে। না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না।
জানা গেছে, সোনারগাঁওয়ের আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেনের প্রতিপক্ষ ছিল নূর হোসেনের শ্যালক নূর আলম খান। ইসমাইলের পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তারই চাচাতো ভাইদের সাথে বিরোধ ছিল। আর বালুর ব্যবসা নিয়ে বিরোধ ছিল নূর আলমের সাথে। ইসমাইলের চাচাতো ভাইয়েরা নূর আলমের সাথে যোগ দেয়ায় প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে শ্যালক নূর আলম খান দুলাভাই নূর হোসেনের শরণাপন্ন হন। ইসমাইলের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ নূর হোসেনের হাত দিয়ে র্যাবের তারেক সাঈদকে দেড় কোটি টাকা দেয়া হয় ইসমাইলকে গুম করার জন্য। ইসমাইলের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে ইসমাইলকে অপহরণ করার পর প্রায় আড়াই মাস র্যাব-১১ এর কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়। নিখোঁজ হওয়ার ১৪দিন পর থেকে ইসমাইলের স্ত্রীসহ ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন প্রায় আড়াই মাস রাতদিন র্যাব-১১ এর অফিসের সামনে কাটিয়েছেন। কিন্তু তারা ইসমাইলের সাথে সাক্ষাত করতে পারেননি। তবে ইসমাইলের স্ত্রী জোসনা বেগম একদিন র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদের সাথে সাক্ষাত করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেদিন তারেক সাঈদ তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার ও অপমাণ করেন। তারেক সাঈদ ইসমাইলের স্ত্রীকে বলেন, তোমার স্বামী চরম খারাপ লোক। খারাপ লোককে খুঁজতে কেনো এসেছ। তাকে ফেরত পেতে হলে দুই কোটি টাকা লাগবে। আর এই কথা যদি মিডিয়া কিংবা কোনো নেতাকে জানাও তাহলে ইসমাইলের লাশও পাওয়া যাবে না। ভয়ে ইসমাইলের স্ত্রী সেদিন একথা কাউকেই জানতে দেননি। কিন্তু স্বামীর লাশও তিনি আর ফিরে পাননি।
নিখোঁজ ইসমাইলের স্বজনরা জানান, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা ঘটে। এর আগের সপ্তাহ পর্যন্ত ইসমাইল র্যাব-১১ এর অফিসে ছিল। সাত খুনের দু’চারদিন আগে ইসমাইলকে শেষ করে ফেলা হয় বলে তাদের ধারণা। ইসমাইলের স্ত্রী জানান, সাত খুনের ঘটনা ঘটার পর সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। আমার স্বামীর গুমের ঘটনা চাপা পড়ে যায়। সে সময় আমি চিৎকার করে কেঁদেছি। আমার কান্নায় কারো মন গলেনি। জোসনা বেগম জানান, তার চার ছেলে-মেয়ে। সন্তানদের নিয়ে তিনি আতঙ্কে আছেন। কারণ নূর হোসেনের ফাঁসির রায় হলেও তার সহযোগিরা এখনো সক্রিয়।
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁওয়ের আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল গুমের ঘটনায় ইসমাইলের ছোট ভাই আবদুল মান্নান বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, নূর হোসেনের সঙ্গে ইসমাইলের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। তারই জের ধরে র্যাবকে দিয়ে ইসমাইলকে অপহরণ করায় নূর হোসেন। মামলায় তৎকালীণ র্যাবের অধিনায়ক তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ, লে. কমান্ডার রানা, ইসমাইলের চাচাতো ভাই নাসিরুদ্দিন, মোশারফ, সেলিমসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়। র্যাব সূত্র জানায়, সাত খুনের ঘটনায় ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে নূর হোসেনও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছে, র্যাবের সাবেক ওই তিন কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার পর ইসমাইলকে অপহরণ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।