Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা প্রত্যাহার করা উচিত : মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি সার্চ কমিটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে রাখার প্রস্তাব প্রেসিডেন্টের কাছে দিয়েছে বলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ অভিহিত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল রোববার বিকালে এক আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যে কথা বলেছেন, যে প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনাকালে আমরা সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান সাহেবের কথা বলে এসেছি, সার্চ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে। এটা সর্বৈব মিথ্যা। আমার মনে হয়, এই বক্তব্য তার প্রত্যাহার করা উচিত।
একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার প্রশ্ন তাহলে কী প্রেসিডেন্ট সাহেবের সঙ্গে ওবায়দুল কাদের ও আওয়ামী লীগের একটা গোপন যোগসাজশ আছে? বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যে যাচ্ছেন, তারা কথা বলছেন,  সে কথাগুলো তাদের সাথে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠন করবেনÑ এটা কথার উত্তর আমরা ওবায়দুল কাদেরের কাছে চাই।
তাহলে কী প্রেসিডেন্ট সাহেব তাদের (ক্ষমতাসীন দল) সাথে আলোচনা করে এখন সার্চ কমিটি করবেন? তা-ই যদি হয়ে থাকে আমরা বলব, এই ধরনের সার্চ কমিটি গঠন করার প্রয়োজন নেই। এই ধরনের সার্চ কমিটি এদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। যদি আওয়ামী লীগের বশংবদ কোনো নির্বাচন কমিশন বা সার্চ কমিটি দেয়া হয়, জনগণ কখনোই তা মেনে নেবে না।
সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে সার্চ কমিটিতে রাখতে নাম প্রস্তাব করেছেন। সেই হাসান সাহেব কি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন না? তাহলে কোনটা পক্ষ, কোনটা নিরপেক্ষ?
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন কমিশন গঠন করতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা  শেষ করেছেন।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে বেশিরভাগ দল সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে, তা না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটির পক্ষেই মত দিয়েছে অধিকাংশ দল।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই গত ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে এ সংলাপ শুরু হয়। সার্চ কমিটি গঠন ও ইসি নিয়োগের বিষয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয় দলটি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘লেখক-প্রকাশক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিবিদদের নিয়ে দ্বিতীয় গ্রন্থ আড্ডা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ পড়ার পরামর্শ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে নতুন প্রজন্মকে কয়েকটা বই পড়ার অনুরোধ করবো। ড. এম এ আজিজ সাহেবের  লেখা  স্পেইন ১৯৭১, এতে অনেক অজানা কথা পাবেন। আজকে আওয়ামী লীগের  নেতারা এতো এতো কথা বলে, কত  যে মিথ্যাচার, কত  যে অসারÑ  সেই বইটা পড়লে জানতে পারবেন।
মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথনÑ একে খন্দকার, উইং কমান্ডার মিজান ও মাঈদুল হাসান সাহেবের  লেখা বই, মূলধারা একাত্তর এবং  শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ। এসব বই পড়ুনÑ তাহলে বুঝা যাবে  যে, আসল ব্যাপারটা কী? এছাড়া ভারতের একজন গবেষক রাঘবন-এর  লেখা ‘লিবারেশন ওয়ার অব বাংলাদেশ’। এটা তথ্যপূর্ণ একটা বই  যে বইতে সত্য অনেকটা  বেরিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, আজকে জিয়াউর রহমানকে বলা হয় তিনি নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। উনি খলনায়ক, উনি  শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িতÑ এসব মিথ্যা কথা বলে তাকে একটা খলনায়কে পরিণত করার  চেষ্টা। মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদের দর্শনকে নিশ্চিহ্ন করা। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাঠপুস্তক  থেকে শুরু করে টেলিভিশনের প্রোগ্রাম, পত্রিকাÑ সব জায়গায় একটা সুপরিকল্পিত ক্যাম্পেইন চলছে। এটার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে নিশ্চিহ্ন করা। এটা সম্ভব হবে না। কারণ এদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আজকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ওপর বই থাকলে তা ছাপাতে  দেয়া হচ্ছে না। বাধার সৃষ্টি করা হয়, ভয় দেখানো হয়, হুমকি  দেয়া হয়। বাংলা একাডেমী একুশের বই  মেলায় তাদের বই রাখতে  দেন না। এটা এলার্মিং।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে একুশের বই মেলায় আওয়ামী লীগের চিন্তার বাইরে, মতের বাইরে যদি কোনো কিছু হয়ে থাকে, তা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধী,  সেটাকে কিছুতেই প্রকাশ করা যাবে না। পাকিস্তানিদের সাথে এদের পার্থক্যটা কোথায়? তারাও তখন কথা বলতে দিতো না, এরাও (ক্ষমতাসীন দল) এখন কথা বলতে দেয় না।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি ও দলের  চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া, যুগ্ম- মহাসচিব সৈয়দ  মোয়াজ্জেম  হোসেন আলাল, সাংবাদিক এরশাদ মজুদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুদ, কবি আব্দুল হাই শিকদার, প্রকাশক মোহাম্মদ জহির দীপ্তি, জাতীয়তাবাদী  স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ