Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে সুয়ারেজ ব্যবস্থা এখনো পরিকল্পনায়

পয়:বর্জ্যে কাহিল কর্ণফুলী

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : পয়:বর্জ্যে কাহিল চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদী। প্রতিদিন টনে টনে বর্জ্য খাল-নালা হয়ে সরাসরি পড়ছে নদীতে। এতে করে বিষিয়ে উঠেছে নদীর পরিবেশে।  বেপরোয়া দূষণে ধ্বংস হচ্ছে জীব-বৈচিত্র্য।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে এখনও সুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় এসব বর্জ্য সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। কোনো প্রকার পরিশোধন ছাড়াই মল-মূত্রসহ পয়:বর্জ্য খোলা নালা-নর্দমা,  খাল ও ছরা হয়ে নদীতে পড়ছে। এতে করে নগরীর পরিবেশও মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনো পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর সুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তৈরি হচ্ছে ১৫ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান।
সড়ক, হাটবাজার ও গৃহস্থালির আবর্জনা বা কঠিন বর্জ্যসংগ্রহ করে নির্দিষ্ট এলাকায় ডাম্পিং করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে করে নগরী কিছুটা পরিচ্ছন্ন হলেও পয়:বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ৫৪ বছরের পুরাতন এ প্রতিষ্ঠানটি এখনও নগরীর পানি সরবরাহও নিশ্চিত করতে পারেনি। দীর্ঘ ২৯ বছর পর কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্পের মতো একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পর পানি সঙ্কট কিছুটা কমেছে। ওয়াসার মতে, নগরীতে বর্তমানে দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। আর সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ কোটি লিটার। ওয়াসা আরো কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ নগরীতে পানির চাহিদা আর সরবরাহের মধ্যে তেমন ব্যবধান থাকবে না বলে আশাবাদী ওয়াসার কর্মকর্তারা।
পানি সরবরাহ বাড়লেও এতদিন পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছে ওয়াসা। ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে একটি মাস্টাপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যার খসড়া এরই মধ্যে ওয়াসার কাছে জমা দিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এতে নগরীকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে তিনধাপে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। এ জন্য খরচ হবে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। জনসংখ্যার সাথে বাড়ছে নগরীর পরিধি, আবাসিক ভবন দালান কোঠাও। বাড়ছে কলকারখানার সংখ্যাও। অথচ এখানে নেই কোনো সুয়ারেজ ব্যবস্থা। ফলে নগরবাসীর সৃষ্ট পয়:বর্জ্য খাল নালা হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে করে বিষিয়ে উঠছে নগরীর খাল-নালা ও কর্ণফুলীর পরিবেশ।
প্রতিদিন টনে টনে টয়েলেট বর্জ্য খাল-নালা হয়ে নদীতে পড়ছে। কোনো প্রকার পরিশোধ ছাড়াই এসব তরল বর্জ্য খোলা নালা-নর্দমা হয়ে যাচ্ছে নদীতে। এতে করে নগরীর পরিবেশ মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। আবাসিক ভবনগুলোতে টয়েল বর্জ্য সাময়িক সংরক্ষণের জন্য রির্জাভার থাকলেও এসব বর্জ্য নির্দিষ্ট সময় পর ওই রির্জাভার থেকে তুলে সরাসরি নালা নর্দমায় ফেলা হচ্ছে। খোলা নালা-নর্দমা হয়ে এসব বর্জ্য যাচ্ছে নদীতে।
বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে নগরীর নালা-নর্দমাগুলো সচল থাকে। পানির সাথে এসব বর্জ্য ভেসে যায় নদীতে। তবে শীতকালে বেশিরভাগ নালা-নর্দমায় পানি প্রবাহ কমে যায়। এতে অনেক নালা জমে যায়। আর পয়:বর্জ্যে এসব এলাকায় দুর্গন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ কারণে বেড়ে যায় মশা-মাছির উৎপাতও।
এদিকে দেরিতে হলেও সুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন নগরবাসী। তারা বলছেন এতদিন ওয়াসা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাও করেনি। এখন এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে, আশা করা যায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে।
ওয়াসার একজন কর্মকর্তা জানান, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির আগে নগরীতে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে এখানে শতভাগ সুয়ারেজ ব্যবস্থা চালু সম্ভব নয়।
তাই, নগরীকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে। যা তিন ধাপে বাস্তবায়নের কথা। মাস্টারপ্ল্যানে পয়:বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসাকে এবং কঠিনবর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব নেয়ার সুপারিশ হয়েছে।
জানা গেছে নগরীর সুয়ারেজ ব্যবস্থা তৈরিতে খরচ হবে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ওয়াসার কর্মকর্তারা আশা করছেন অন্যান্য প্রকল্পের মতো এতে অর্থ সংস্থানে এগিয়ে আসবে জাইকা এবং বিশ্বব্যাংকের মতো বড় দাতা সংস্থাগুলো।
মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হলে শিগগিরই সুয়ারেজ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প সরকারের কাছে পাঠানো হবে বলে জানান ওয়াসার কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ