Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে দুই হাজার পান চাষির দুঃসময় কাটেনি এখনো

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতির প্রভাব বয়ে বেড়াচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : সীতাকুন্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগারহাট ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দা জগবন্ধুনাথ একজন পান চাষি। সুদীর্ঘকাল ধরে বংশানুক্রমে পান চাষ করে আসছেন তিনি। একসময় তার বাবা হরিমোহন নাথও পান চাষ করতেন। বাবার কাছেই পান চাষে হাতেখড়ি জগবন্ধুর। পারিবারিক ঐতিহ্য সেই পান চাষ ধরে রাখতেই প্রতিবছর পান চাষ করেন। পান বিক্রি করে কখনো কিছু টাকা লাভ করেন আবার কখনো লোকসানও হয়। এভাবেই চলছিল দিন। কিন্তু ক্ষুদ্র এই পান চাষির জন্য সর্বনাশ হয়ে আসে গত বছরের একটি ঝড়। ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর একটি আকস্মিক ঝড় ও দু’দিনব্যাপী দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তছনছ করে দেয় তার পান বরজ। ১১ শতক আয়তনের ওই পান বরজের খুঁটিগুলো ঝড়ে ধসে পড়লে সবগাছ মাটিতে পড়ে গিয়ে বিনষ্ট হয়ে যায়। এতে ৭০ হাজার টাকার গাছ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী মিলিয়ে অন্তত লাখ টাকার সম্পদহানি হয়। সে ঘটনার পর দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেছে ঋণ করে আবারো পান বরজ গড়ে তুলতে হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই ঝড়ের ক্ষতি ও ঋণ পরিশোধের মতো সামর্থ্য তার হয়ে ওঠেনি। ফলে ক্ষুদ্র এই পান চাষি অনেক পিছিয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, যে পান চাষে সুদিনের স্বপ্ন দেখতেন সেই পান চাষই তার জন্য বড় বোঝা হয়ে দঁড়িয়েছে এখন। সম্প্রতি প্রতিবেদকের সাথে পান চাষ বিষয়ে আলাপকালে এসব তথ্য তুলে ধরে পান চাষি জগবন্ধু নাথ আরো বলেন, শুধু তিনি একাই নন। ওই ঝড়ে পান চাষের ঐতিহ্যবাহী ছোট দারোগারহাট ধর্মপুর গ্রামের আরো বহু কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তার ভাই দিলীপ নাথেরও ৫০ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছিল। ওই ঘটনার পর ধর্মপুর এলাকার দায়িত্বে থাকা সীতাকু- কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র নাথ ক্ষতিগ্রস্ত বরজগুলো পরিদর্শন করে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শও দেন। কিন্তু কোনো রকম সরকারি আর্থিক ক্ষতিপূরণ তারা পাননি। সরকার যদি তাদের কিছু ক্ষতিপূরণ দিত তাহলে এত বড় ক্ষতির পর আবার ঋণের চাপে পড়তে হতো না কৃষকদের। বর্তমানে ক্ষতি ও ঋণের চাপে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একই ইউনিয়নের রহমতনগর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষি সুব্রতনাথ বলেন, ওই ঘূর্ণিঝড়ে পান বরজের বাঁশের মাচা ও খুঁটি ভেঙে নিচে পড়ে গেলে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে এবং  বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বারৈয়াপাড়া গ্রামের নলেনীর পুত্র পান চাষি হরি সাধনের ১ লাখ, শুধাংশু দে’র পুত্র পান চাষি অরুন দে’র ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এভাবে সীতাকু-ের ঐতিহ্যবাহী পান চাষ এলাকা টেরিয়াইল বারৈয়াগ্রাম, বারৈয়াঢালা, পৌর সদর বারৈয়াপাড়া, ফকিরহাট ইকোপার্ক এলাকাসহ উপজেলার অন্তত আড়াই হাজার পান চাষি সেসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে কারো কারো আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় তারা ক্ষতি পুষিয়ে নতুন করে সুদিনে ফিরলেও ২ হাজারের মতো পান চাষি সে দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে জানান কৃষকরা। তাই তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ ও সহজ সুদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে আকুল আবেদন জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছোট দারোগারহাট ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্রনাথ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ এলাকার চাষিদের পান বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা আর্থিক সহযোগিতা পেলে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। এ বিষয়ে সীতাকু- উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন, চাষাবাদে কখনো লাভ আবার কখনো লোকসান হবে এটাই নিয়ম। চলতি বছরে পানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এখন দামও খুব ভালো পাচ্ছে পান চাষিরা। পান বরজে রোগ বা ছত্রাকের উপদ্রব মোকাবিলার জন্যও পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। আমাদের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। তিনি আশা করছেন এবার যা ফলন হয়েছে তাতে কৃষকরা ধীরে ধীরে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ