Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন সম্ভাবনা, রফতানি খাতে নগদ সহায়তা প্রদান করা হবে -বাণিজ্যমন্ত্রী

মোটরসাইকেল রফতানিতে বাংলাদেশ

| প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেপালে মোটরসাইকেল রফতানির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করল দেশীয় মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড। গতকাল শনিবার ময়মনসিংহের ভালুকায় রানারের নিজস্ব কারখানায় এই রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। প্রথম দিন ১০টি ট্রাকে করে ২৫০টি মোটরসাইকেল পাঠানো হয়েছে নেপালে। বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকা থেকে ভালুকায় পৌঁছানোর পর এই রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এই মোটরসাইকেল রফতানির মধ্য দিয়ে রফতানির নতুন একটি সম্ভাবনা তৈরি হলো। তৈরী পোশাকের বাইরে মোটরসাইকেলের মতো অপ্রচলিত পণ্য রফতানিতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে অটোমোবাইল রফতানি খাতে নগদ সহায়তা দেবে সরকার। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।  
চীনের ডায়াং মোটরসাইকেল বিপণনের মাধ্যমে রানার অটোমোবাইলস্ লিমিটেড যাত্রা শুরু করে ২০০০ সালে। সেখান থেকে প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে অটোমোবাইলস লিমিটেড ডায়াং মোটরসাইকেলকে বাংলাদেশে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় স্থাপন করা হয় মোটরবাইকের কম্পোনেন্টস তৈরির কারখানা। ২০১১ সালে রানার ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, অ্যাসেম্বলিং, টেস্টিং, চেসিস, রিয়ার ফোরক, ফুয়েল ট্যাঙ্ক, মেইন স্ট্যান্ড, সাইড স্ট্যান্ড, ফুট পিগ এবং ইঞ্জিন তৈরির মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১২ সালে পুরোদমে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে রানার গ্রুপ। এসব যন্ত্রাংশ রঙ করার জন্য অত্যাধুনিক পেইন্টশপ স্থাপন করেছে তারা।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের গল্প আজ সারাবিশ্ব শুনছে। এক সময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলা হতো বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। আজ সেই বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের পক্ষে এখন সবই করা সম্ভব। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের মাত্র ২৫টি পণ্য বিশ্বের ৬৮টি দেশে রফতানি হতো। আজ সেই বাংলাদেশ ১৯৬টি দেশে ৭২৯টি পণ্য রফতানি করছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বছর ২০২১ সালে তা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে আমরা আশাবাদী। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু তৈরী পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতা না বাড়িয়ে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে এখন আমরা মোটরসাইকেল রফতানিতেও সক্ষম হয়েছি। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোটরসাইকেল রফতানি অর্থাৎ অটোমোবাইল খাতে প্রণোদনা দেয়া হবে। এই নগদ সহায়তা কিভাবে পাওয়া যায় সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর  সঙ্গে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি ভালুকায় মাত্র ৭শ’ শ্রমিক নিয়ে রানারের আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালের সেই কারখানায় উৎপাদিত মোটরসাইকেল নেপালে রফতানি হলো। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পের নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালার আওতায় মোটরসাইকেল রফতানিতে আর্থিক প্রণোদনা দিলে বাইরের বাজারে আমাদের পণ্য প্রবেশে সুবিধা হবে। একই সঙ্গে নীতিমালার মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের দেশে উৎপাদন করতে বাধ্য করতে হবে। তাহলে আমাদের দেশের মানুষ কম মূল্যে মোটরসাইকেল কিনতে পারবে। এ সময় সরকারের কাছে মোটরসাইকেল রফতানির ওপর ক্যাশ ইনসেভসিভ চান তিনি। ২১ জানুয়ারিকে রানার অটোমোবাইলসের জন্য ‘মাইলফলক’ উল্লেখ করে হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা ২০১১ সালে পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমোদন পেলেও ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি রানার অটোমোবাইলসের কারখানা উদ্বোধন করা হয়। পাঁচ বছর পর ঠিক একই দিনে আমরা প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল রফতানি করছি।
রানার চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান মোটরসাইকেল উৎপাদন ও রফতানি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, এ কারখানায় দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫০০ মোটরসাইকেল এবং ২০১৮ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০-এ উন্নীতকরণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিসম্পন্ন উচ্চক্ষমতার বিখ্যাত ইউএম-রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারে সরবরাহ শুরু হবে। নেপালে আমাদের আজকের এই মোটরসাইকেল রফতানির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে রফতানির পথ প্রশস্ত হচ্ছে, তবে সরকারের কাছ থেকে সুষ্ঠু নীতি-সহায়তা পেলে বিশ্ববাজারে রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আধিপত্য স্থাপনে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুকেশ শর্মা, নেপালের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ধন বাহাদুর অলি, নেপালের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেট্রিক্স মোটো করপোরেশনের দিলীপ কুমার কার্নাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য ডা: মো: আমান উল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাইফুর রহমান শিখর বক্তব্য রাখেন। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ