Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝিনাইদহে বিয়েতে এখনো আনন্দে কাদা-মাটি মাখামাখি করে

প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ : কাদা খ্যাইড় ঝিনাইদহের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। তবে এখানকার ঐতিহ্য গ্রামাঞ্চল থেকে এই আনন্দঘন খেলা বিলীন হতে চলেছে। ঘরের এক কোনায় লুকিয়ে আছেন নানা তাইজুদ্দিন শেখ, নাতিন বৃষ্টি খাতুন খুঁজে বেড়াচ্ছে তাকে। বাড়ির মধ্যে তখন চলছে মেয়ের গোসল করানো (গা-ধোয়ানো) শেষে কাদা-মাটির খেলা। হঠাৎ নাতিন বৃষ্টি (বড় মেয়ের কন্যা) চোখে পড়ে নানা ঘরের কোনায়। ধরে এনে নানার সমস্ত শরীরে কাদা ছিটিয়ে দেন। বৃদ্ধ নানাও কম নয়। তিনি নিজেকে বাঁচাতে আর চেষ্টা না করে এবার শুরু করেন অন্যদের মতোই এই কাদা-মাটি খেলা। এক পর্যায় গোটা বিয়েবাড়ি আনন্দময় হয়ে ওঠে। কনের বাড়িসহ পাশ^বর্তী বাড়িগুলোর নারী-পুরুষ সবাই অংশ নেন এই আনন্দে। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে কাদা-মাটি মেখে এই আনন্দ খেলা মাইকে গানের সুরে সুরে চলা এই আনন্দ চলবে আরো এক সপ্তাহ। ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব। সবাই মিলে খির খাওয়া চলে শরীরে কাদা লেগে থাকা অবস্থায়। কনে তানজিলা খাতুন বিয়ের পিড়িতে বসার আগ পর্যন্ত প্রতিবেশীদের এই আনন্দ আজো মনে করিয়ে দেয় গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যপূর্ণ বিয়ে বাড়ির সব আনন্দের কথা। তানজিলা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের তাইজুদ্দিন শেখের কন্যা। আগামী ২৩ জানুয়ারি তার বিয়ে। বিয়ে ঠিক হয়েছে একই উপজেলার ধননঞ্জয়পুর গ্রামের ইয়াসিন আলীর সাথে। এই বিয়ে উপলক্ষে এক সপ্তাহ অর্থাৎ ১৭ জানুয়ারি থেকে চলছে মেয়ের গোসল করানো পর্ব। গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে দেখা যায়, গোটা বিয়ে বাড়িতে অন্যরকম আনন্দ চলছে। কাদা-মাটি আর রঙ মেখে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছে। কারো কোনো কষ্ট নেই। তবে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা আছে। আর প্রতিপক্ষের চিন্তা কেউ যেন পার পেয়ে না যায়। এই অবস্থা দেখে মেয়ের ভাই ইয়াসিন আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, তারা দুই ভাই দুই বোন। তানজিলা সবার ছোট। তার বিয়েতে গোটা মহল্লার মানুষ আনন্দে মেতেছে। প্রতিদিন মেয়ের গোসল করানো হচ্ছে। আর এই গোসলকে কেন্দ্র করে চললে কাদা-মাটি আর রঙ খেলা। এরপর খাওয়ানো হচ্ছে আনন্দে অংশ নেয়া সবাইকে। রাতে বিয়ে বাড়িতে চলছে গানের অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন বাড়ির সবাই। গান না জানা ব্যক্তিও বাদ পড়ছে না কণ্ঠ দিতে। তিনি আরো জানান, এটা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। এটাকে তারা প্রকৃত আনন্দ মনে করেন। যা আজ সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা গ্রামের মানুষ আজো এইসব আনন্দ ধরে রেখেছেন। প্রতিবেশী ইমদাদুল হক জানান, এই আনন্দে তারাও অংশ নিচ্ছেন। গা-ধোয়ানো, খির খাওয়ানো আর রাতে গান-বাজনা হচ্ছে গ্রামবাংলার বিয়েবাড়ির একটা ঐতিহ্য। শহর থেকে এগুলো হারিয়ে গেলেও আজো তারা ধরে রেখেছেন।



 

Show all comments
  • সাখাওয়াত ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ৯:২০ এএম says : 0
    দারুন সংবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Nipa Akter ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:০৬ এএম says : 0
    এইটাই তো অনেক মজা
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Hosain ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:০৭ এএম says : 0
    good
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ