Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঁধ মেরামতে সরকারের খরচ লাখ লাখ টাকা

কাঁকড়ি নদীতে বেপরোয়া মাটি সিন্ডিকেট

| প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তবর্তী খনিজ মোটা কাঁচবালিসমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত নদী মার্তৃক অন্যতম উপজেলা চৌদ্দগ্রামের পরিচিতি সারাদেশেই সমাদৃত। চৌদ্দগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নদী হচ্ছে ‘কাঁকড়ি নদী’। এ কাঁকড়ি নদীর ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট কাঁকড়ি নদীর মাটি কেটে নদীর অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। দীর্ঘ দিন ধরে মাটি লুটে নিয়ে এই নদীর অপরূপ সৌন্দর্য বাধাহীনভাবে ধ্বংস করছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এ নিয়ে স্থানীয় সমাজসেবী সংগঠনসহ সচেতন মহলের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করলেও রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন ও কুমিল্লার পরিবেশ অধিদপ্তর। উপজেলার উজিরপুর, কালিকাপুর, শ্রীপুর ও কাশিনগরের বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়ি নদীর চর এলাকা থেকে প্রভাবশালী চক্রটি দিনের বেলায় অবাধে বালি ও মাটি কেটে বিক্রি করে দিলেও নিয়মিত ভাগ-বাটোয়ারা পেয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপই নিচ্ছে না প্রশাসন এমন অভিযোগ এলাকার লোকজনের। এ দিকে চরের পাশাপাশি নদী রক্ষা বাঁধের নিকটস্থ মাটি কেটেও বিক্রি করে দিয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, চৌদ্দগ্রামের ঐতিহ্য কাঁকড়ি নদীর মিয়া বাজার, ঘাসিগ্রাম, পরাণপুর, রামচন্দ্রপুর, শ্রীপুর, বালুধুম, কলাবাগান ও অলিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনে-দুপুরে চর কেটে অবাধে মাটি বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এছাড়া বিক্রি হওয়া মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে পরিবহনের কারণে নদীর মূল প্রতিরক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে। মূল বাঁধের উপর দিয়ে চর থেকে মাটি কাটার কারণে হাজার হাজার জনসাধারণ ও স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল করার জন্য মূল বাঁধের উপর নির্মিত পাকা-কাঁচা রাস্তা যত্রতত্র ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের লোকজন জানান, প্রশাসনের নাকের ডগায় ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এভাবে মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে আনা-নেয়ার ফলে এসব এলাকার লোকজনের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাছাড়া স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদেরও পড়ালেখায় ভীষণ বিঘœ ঘটছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করছে। এভাবে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন নদীর বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে থাকেন। অনেক সময় বর্ষা মৌসুমে চার ইউনিয়নের কমপক্ষে ৮-১০টি স্থান দিয়ে নদীর পানি চুইয়ে বের হয়। তখন পার্শ্ববর্তী স্থায়ী বাসিন্দাদের গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটতে হয়। প্রতি বছর অবাধে অপরিকল্পিতভাবে বালি ও মাটি কেটে নেয়ায় বর্ষা মৌসুমে ২-৩টি পয়েন্টে নদী ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। যার ফলে তীরবর্তী বাড়ি-ঘর, ভিটে-মাটি, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেক পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়। নেমে আসে প্রবল বন্যা। জনজীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। এদিকে বেপরোয়া প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও সড়ক ও বাঁধের বিধ্বস্ত অংশগুলো মেরামত বা সংস্কারে সরকারকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার (ভূমি) রবিউল হাসান বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ