পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : মার্টিন লুথার কিং কখনোই ক্ষমতায় যাননি। তিনি বিশ্ববাসীর কাছে এখন ইতিহাস। এখনো অটোমান সাম্রাজ্যের মুসলিম শাসকদের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে নির্মিত নাটক-সিরিয়াল টিভি দর্শকরা বুঁদ হয়ে দেখেন। ভেনিজুয়েলার হুগো শ্যাভেজ ও কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো ছিলেন ছোট্ট দেশের শাসক। তাঁরা নেতৃত্ব দিয়ে গোটা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন। বিশ্বের পরাশক্তি মার্কিনীরা পর্যন্ত তাদের ভয়ে তটস্থ থাকতো। মানুষ মরণশীল। নেতৃত্ব রাজনীতিকদের বিশ্ববাসীর মাঝে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখে। কিউবা, ভেনিজুয়েলার শাসকরা তা পেরেছিলেন। ক্যাস্ট্রো, শ্যাভেজ বেঁচে নেই। তাই বলে কী বিশ্ব নেতৃত্ব দেয়ার ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব উঠে আসবে না? সময়ই নেতৃত্ব সৃষ্টি করে। যেমন ‘রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা’ ইস্যুতে বিশ্ব নেতৃত্বে উদীয়মান সূর্যের মতোই উদয় ঘটছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন আবদুর রাজাকের। নাজিব রাজাক নামেই তিনি পরিচিত। ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) এই নেতা ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন। অতঃপর তাকে দেশের অভ্যন্তরেই অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে।
চরিত্রে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা, রাজনীতির দূরদৃষ্টি, মানবপ্রেম, ধর্মীয় ভাইদের প্রতি মমত্ববোধ থাকলে একসময় তার প্রকাশ ঘটবেই। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনী ও মগদের পৈশাচিক জুলুমের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ায় নাজিব রাজাকের নাম এখন বিশ্ব নেতার কাতারে। তাঁর বক্তব্য ‘আমাকে সতর্ক করে লাভ নেই। রোহিঙ্গারা আমাদের মুসলমান ভাই; বিপদে তাদের পাশে আমি আছি’ এখন ঐতিহাসিক। নাজিব রাজাকের এ বক্তব্য শুনে আনন্দে অনেকেই আবেগে চোখের পানি ফেলেছেন। দেশছাড়া বিপন্ন রোহিঙ্গাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে আমাদেরও নেতা রয়েছে ভেবে।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের ইস্যুতে মালয়েশিয়ার উদ্যোগে কুয়ালালামপুরে মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন চলছে। সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক অত্যন্ত কড়া ভাষায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সব ধরনের বৈষম্য এবং নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা সমস্যাকে তিনি একটি মানবিক ট্রাজেডি হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিবেক নীরব থাকে। কারণ, রোহিঙ্গারা ধর্মে মুসলমান। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি ‘দেখেও না দেখার’ ভাব করেন। মুসলিম দেশের নেতারাও বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। জাতিসংঘ, ওআইসি, বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোর নেতারা যখন নীরব; তখন তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান। পাশের দেশের শাসক এবং একজন মুসলমান হিসেবে তিনি কূটনীতিক পর্যায়ে মুসলিম রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষার চেষ্টায় রত হন। মিয়ানমার আসিয়ান জোটের সদস্য অথচ জোটের অন্য প্রভাবশালী সদস্য ইন্দোনেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি মিয়ানমারের নেত্রী নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন ইস্যু তিনিই ওআইসি’র ভেতরে টেনে আনেন। নাজিব রাজাক মিয়ানমারে রোহিঙ্গার ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে নিজ দেশে মহাসমাবেশ করেন। রোহিঙ্গা নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরতে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মালিকানাধীন বিশ্ব মিডিয়াকে প্রভাবিক করেন। বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি রাখাইনের ‘প্রকৃত চিত্র’ তুলে ধরার আহবান জানান। তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে নিজ দেশের রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচিসহ নানান কর্মসূচি পালন করেন। ওই সব কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটে। রোহিঙ্গা ইস্যু বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণে ভূমিকা রাখেন। সমাবেশ ও র্যালীতে তিনি চীনের চোখ রাঙ্গানী উপেক্ষা করে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন ইস্যুতে কথা বলার ব্যাপারে তারা আমাকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু আমার কিছু যায় আসে না। মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং মালয়েশিয়ার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের যোগ্যতা নিয়ে এসেছি। ৩ কোটি ১০ লাখ লোকের একটা সরকারের প্রধান হিসেবে আমাকে তারা কী করতে বলে? তারা কি চায় আমি চোখ বুজে থাকি? আমরা মুখ বন্ধ করে রাখি? আমি তা করব না। রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতেই হবে। তারা আমাদের মুসলমান ভাই, অন্য ধর্মাবলম্বীদের মতো তাদের জীবনের মূল্য আছে।’ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশের শাসকদের এগিয়ে আসা প্রত্যাশিত ছিল। নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাশে দাঁড়ালে এবং তাদের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করে বিশ্ব মুসলিম নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ ছিল। প্রকৃত অর্থে নাজিব রাজাক ছাড়া আর কোনো দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান সেটা করেননি। ফলে মুসলিম দেশগুলোতে এখন নাজিব রাজাক এখন সর্বত্র আলোচিত নাম।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়া এবং মানবাধিকার রক্ষায় জেনেভা ও ব্রাসেলসে দফায় দফায় বৈঠকের পর নানাভাবে মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এতে মিয়ানমার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ না করায় নাজিব রাজাক মুসলিম দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওআইসির নীরবতা ভাঙে। জাতিসংঘের ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলো নীরবতা পালন করলেও নাজিব রাজাকের প্রচেষ্টায় ৫৭টি মুসলিম দেশের সমন্বয়ে গঠিত ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশগুলো এগিয়ে আসে। রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর হন তারা। কুয়ালালামপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নাজিব রাজাক বিশ্ব নেতার মতোই বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে আকৃষ্ট হন।
এদিকে দেশের নাগরিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে ওআইসির সদস্য দেশগুলোকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া। ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল দাতুক রামলান ইব্রাহিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের জীবনের আর্তনাদের কথা তুলে ধরে পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি জারি থাকা চলমান বৈষম্য নিরসনের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সংকটকে কেবলমাত্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট দেখার সুযোগ নেই। কুয়ালালামপুরে চলমান ওআইসি সম্মেলনে দুইটি নথি তুলে ধরা হয়। একটি প্রস্তাব এবং একটি যৌথ ইশতেহার। বলা হয়, যৌথ ইশতেহার ঘোষণার মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে ওআইসির সদস্য দেশগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ ঘোষিত হবে। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য ১০ মিলিয়ন মালয়েশীয় রিংগিত সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্ব নেতৃত্বে উঠে আসা নাজিব রাজাকের চলার পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে সউদী রাজ পরিবার থেকে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠে। তার পদত্যাগও দাবি করা হয়। রাষ্ট্রের দুর্নীতি দমন সংস্থার গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। কমিটিগুলো নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাননি।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে ওআইসি। মিয়ানমার বিষয়ে ওআইসি’র বিশেষ দূত সাঈদ হামিদ আলবার বলেছেন, কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডার মতো যেন মিয়ানমারে গণহত্যাযজ্ঞ না ঘটে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মুসলিম দেশগুলো এতদিন পৃথকভাবে মিয়ানমারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। মিয়ানমার এতে গুরুত্ব না দেওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে ওআইসির এই বৈঠক ডাকা হয়। এই বৈঠনের নেপথ্যে রাজিব রাজাক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।