পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : চলমান সঙ্কট নিরসনে সরকারকে আবারো সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগের মতো আবারো মেরুদ-হীন ও সরকারের বশংবদ ইসি গঠন করা হলে কোনো দিনই এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নও রাখেন বিএনপি মহাসচিব। গতকাল বুধবার এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
একই অনুষ্ঠানে দলটির অন্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দ প্রত্যাশা করে বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে প্রেসিডেন্ট আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন। কিন্তু কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন ‘দলীয় আনুগত্যের’ ইসি গঠন হলে সেটি মানবে না তারা। এ সময় নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় ‘সহায়ক সরকার’ গঠনের দাবি তুলে নেতারা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইসি নিরপেক্ষ হলেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না।
দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকেলে রাজধানীর ‘মহানগর নাট্যমঞ্চে’ এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজন করে বিএনপি।
ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সংলাপের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির সঙ্গে সরকারি দল আলোচনা করতে চায় না। তাহলে প্রেসিডেন্ট ডাকলেন কেনো? এরমধ্যে কোনো ছলচাতুরি আছে কি না জানি না। তবে আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, আন্তরিকতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডেকেছেন এবং আন্তরিকতার সঙ্গেই একটি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠন করবেন, যার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা হবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তা না হলে আগের মতো আবার মেরুদ-হীন সরকারের বশংবদ ইসি গঠন করা হবে, যা কোনোদিনই এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। সংলাপ বা আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান চায় জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আলোচনা চাই, সংলাপ চাই এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক। কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রধানমন্ত্রী আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। আমি জানি না প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়েছে কি না? সেটা বলতেও চাই না। তবে বলতে চাই, প্রেসিডেন্ট যদি সত্যিকার অর্থেই আন্তরিকভাবে ডেকে থাকেন, তাহলে তিনি সত্যি কথা বলেছেন যে, এদেশের মানুষ সংলাপের মাধ্যমেই সঙ্কটের নিরসন দেখতে চায়। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। জনগণের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
তিনি বলেন, গোটা বাংলাদেশ এখন অবরুদ্ধ। সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে অধিকার ফিরিয়ে আনতে লড়াই করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেটি ছিল ‘পাতানো ষড়যন্ত্রের চিত্র’।
তিনি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন রাষ্ট্রের ভাগ্য পরিবর্তনের নায়ক। তার জাতীয়তাবাদী দর্শন আমাদের সংস্কৃতি-কৃষ্টি-ঐতিহ্য উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বারবার ক্রান্তিকালে জাতির হাল ধরেছেন। সেই জায়গায় জিয়াউর রহমান সবার থেকে আলাদা। এজন্যই তাকে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রতি মুহূর্তে স্মরণ করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন সফল। তিনি সেনাপ্রধান, প্রেসিডেন্ট এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সফল। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। সেক্টর কমান্ডার হয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপিকে ভাঙতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কেউ তা পারেনি। বরং বিএনপি আরো বেশি শক্তিশালী। সরকার বিএনপি এবং জিয়া পরিবারকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। তবে কোনো ষড়যন্ত্র আর বিভ্রান্তির মাধ্যমে জিয়ার জনপ্রিয়তাকে খাটো করা যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যদি আমরা নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে পারি, যেটা আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রেসিডেন্ট যদি সেই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেটা হবে প্রাথমিক পদক্ষেপ। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হবে এই কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার জন্য একটি সহায়ক সরকার থাকতে হবে। সেই সরকার বলতে বুঝি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার, যাদের কোনো স্বার্থ থাকবে না, নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে তাদের কোনো স্বার্থ থাকবে না, কোনো রাজনীতির সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত থাকবে নাÑ এমন একটি সরকার থাকতে হবে।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এরকম সহায়ক সরকারের দাবি যদি অর্জন করতে হয়, আমরা বলি- একমাত্র আন্দোলন ছাড়া অন্যকোনো বিকল্প আমাদের সামনে নাই। যদি আমরা এটা সফল করতে পারি আমরা সফল হবো। যদি আমরা সফল না করতে পারি, আমরা ব্যর্থ হবো। তাই আজকে সময় এসেছে, বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্য হয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন ছাড়া ১৯৭৪ সাল থেকে কোনো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়নি এবং ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
তিনি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, শহীদ জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। তিনি ২৭ ও ৩০ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। তিনি ক্ষমতা নিয়ে তো ক্যু করেননি। পার্লামেন্ট ডিজলভ করেননি। বরং তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। এই দুই কারণেই বাংলাদেশের মানুষ জিয়াকে স্মরণ করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মুনির হোসেন প্রমুখ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনুল হক, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জেড মোর্তুজা চৌধুরী তুলা, কাজী আবুল বাশার, মীর নেওয়াজ আলী, হেলেন জেরিন খান, শফিউল বারী বাবু, আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ইয়াসিন আলী, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, মোর্তাজুল করিম বাদরু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, নূরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের রাজিব আহসান, আকরামুল হাসানসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।