Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাল-সবুজ হচ্ছে তূর্ণা প্রভাতী গোধূলী ও নীলসাগর

২৩ ও ২৪ জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : সোনারবাংলার পর এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে লাল-সবুজ কোচ পাচ্ছে তূর্ণা নিশিথা, মহানগর প্রভাতী ও মহানগর গোধূলী এক্সপ্রেস। এ ছাড়া নীলফামারী-ঢাকা রেলপথের নীলসাগর এক্সপ্রেসও পাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত লাল-সবুজ কোচ। আগামী ২৩ জানুয়ারি ঢাকা রেল স্টেশনে নুতন কোচের মহানগর প্রভাতী ও ২৪ জানুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে লাল- সবুজ নীল সাগর এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দু’টি ট্রেনের অবমুক্ত সাদা কোচ দেয়া হবে রংপুর এক্সপ্রেসকে। রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলবাসী দীর্ঘদিন ধরে রংপুর এক্সপ্রেসের পুরাতন রেক পাল্টানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। এর আগে ঢাকা-সিলেটের পারাবত, ঢাকা-জামালপুরের তিস্তা, ঢাকা-দিনাজপুরের দ্রুতযান ও একতা, ঢাকা-রাজশাহীর পদ্মা, সিল্কসিটি ও ধূমকেতু, ঢাকা-খুলনার চিত্রা ও সুন্দরবন এবং ঢাকা-সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসে পর্যায়ক্রমে লাল-সবুজ কোচ যুক্ত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এতগুলো ট্রেনে নতুন কোচ যুক্ত করা হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরতিহীন ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস এবারও বঞ্চিত হচ্ছে।     
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচলকারী তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুটি রেক (কয়েকটি কোচ মিলে একটি রেক) নিয়ে চলাচল করে। এর মধ্যে রাতে ঢাকা থেকে একটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে এবং আরেকটি চট্টগাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পরদিন একই রেক দিয়ে ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতী ও চট্টগ্রাম থেকে মহানগর গোধূলী হিসেবে পৃথক দু’টি ট্রেন চলাচল করে। অর্থাৎ দু’টি রেক দিয়ে চলছে চারটি ট্রেন। লাল-সবুজের কোচ দিয়ে তাই দু’টি ট্রেন সাজানো হচ্ছে। তবে এবার চারটি ট্রেনেরই কোচসংখ্যা কমানো হচ্ছে। এতদিন তূর্ণায় মোট কোচ ছিল ১৮টি। লাল-সবুজে কোচসংখ্যা দু’টি কমিয়ে করা হবে ১৬টি। রেল সূত্র জানায়, গত বছরের ২ আগস্ট ওই চারটি ট্রেনের রেক কম্পোজিশন (ইঞ্জিনসহ সব বগি মিলিয়ে একটি রেক) পুনর্বিন্যাস করার জন্য পূর্বাঞ্চল রেলওয়েকে তাগাদা দেয়া হয় রেলভবন থেকে। দু’টি করে বগি কমালে আগের চেয়ে ১৫৮ জন যাত্রী কম পরিবহন করবে ট্রেনগুলো। ভুক্তভোগীদের আশঙ্কা এতে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের রাতের যাত্রীদের টিকিট সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করবে। বাড়বে যাত্রী হয়রানি। তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ে রাত সাড়ে ১১টায়। আবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে একই ট্রেন ছাড়ে রাত ১১টায়। পরদিন সকালে ঢাকা থেকে একই ট্রেন মহানগর প্রভাতী হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে এবং চট্টগ্রাম থেকে বিকালে মহানগর গোধূলী হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। প্রতিটি ট্রেনে ইঞ্জিনের সাথে ১৮টি বগি যুক্ত থাকে। এতে করে ট্রেনগুলোর আসনসংখ্যা ৬৯৫টি। দু’টি বগি কমালে আসনসংখ্যা হবে ৫৩৭টি। এর মধ্যে কোটার কারণে ২৫ শতাংশ টিকিট সংরক্ষণ করা হয় ভিআইপিদের জন্য। সাধারণ যাত্রীদের জন্য থাকে মাত্র ৪শ’ টিকিট। রেলওয়ের হিসাব বলছে, তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ধারণক্ষমতার ৯০ শতাংশের বেশি যাত্রী প্রায় নিয়মিতই পরিবহন করে। রাতে নিরাপদ ও আরামদায়ক  ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের কাছে এই ট্রেনটি জনপ্রিয়। সে কারণে টিকিট ছাড়ার শুরুর দিকে না কাটলে টিকিট প্রত্যাশীদের হতাশ হতে হয়। সূত্র জানায়, তূর্ণা এক্সপ্রেসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের পরিমাণও অনেক বেশি। রেলওয়ের হিসাব মতে, কোচ কমে গেলে শুধুমাত্র তূর্ণা এক্সপ্রেস থেকে বছরে ৫ কোটি এবং মহানগর প্রভাতী ও মহানগর গোধূলী থেকে আরো ৫ কোটি টাকা আয় কমবে। শুরুতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসে লাল-সবুজ কোচ যুক্ত করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। সোনারবাংলা নামে নতুন ট্রেন চালু করার অজুহাতে শুরুতে বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক ট্রেন সুবর্ণকে বঞ্চিত করা হয়। এরপর জামালপুরগামী তিস্তা ও সিলেটগামী পারাবতে লাল-সবুজ কোচ লাগানো হলেও এখনো সুবর্ণ সেই পুরাতন সাদা কোচেই চলছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে  প্রায়ই ভ্রমণ করেন এমন কয়েকজন যাত্রী বলেছেন,  রেল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল রাতে তূর্ণার পর যাতে আরো একটি ‘ননস্টপ’ ট্রেন চালু করা যায় সে ব্যবস্থা করা। তা না করে উল্টো কোচ কমানো হচ্ছে। এতে করে সঙ্কট আরো বাড়বে। রেলমন্ত্রী মো: মুবিজুল হক বলেন, একে একে সব হবে। আমরা যা কিছু করছি যাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করেই করছি। লাল-সবুজ কোচের চাহিদা অনেক বেশি জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, আগামীতে আরো বিলাসবহুল কোচ আনা হবে। দিন দিন রেলের সেবার মান বাড়তেই থাকবে ইনশাল্লাহ।
অন্যদিকে, ২৪ জানুয়ারি থেকে লাল-সবুজ কোচ যুক্ত হবে ঢাকা-নীলফামারী রেলপথের নীলসাগর এক্সপ্রেসে। ওই দিন সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে রেলমন্ত্রী নতুন কোচের নীলসাগর উদ্বোধন করবেন বলে জানান রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব কিবরিয়া মজুমদার। রংপুর এক্সপ্রেস সাদা কোচ পাচ্ছে কি না জানতে চাইলে রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব বলেন, আমার জানা মতে, তূর্ণার অবমুক্ত সাদা কোচগুলো রংপুর এক্সপ্রেসকে দেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ২৩ জানুয়ারি কোচগুলো অবমুক্ত হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।   



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেলপথ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ