হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোহাম্মদ আবদুল গফুর : অবশেষে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে ২৬ জনের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয়েছে। ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত এই রায়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ দেশের জনগণও প্রাথমিকভাবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ এখানে “প্রাথমিকভাবে” কথাটা উল্লেখের কারণ আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবার সুযোগ রয়েছে দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের। দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অনেকেই সমাজে যথেষ্ট প্রভাবশালী। কেউ কেউ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখেন বলে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রয়োগ করে তারা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঘোষিত শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারেন বলে অনেকের আশঙ্কা।
আইনের যে ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করে সমাজের প্রভাবশালী অপরাধী ব্যক্তিরা সেসব ব্যবহার করে কাক্সিক্ষত শাস্তি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন তার বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েও বলতে হয় নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার স্বস্তিদায়ক রায় যে ঘোষিত হতে পেরেছে এটাও বর্তমানে অবিচার-কণ্টকিত সমাজের জন্য একেবারে ক্ষুদ্র প্রাপ্তি নয়। এই সেদিন আমাদের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় বিচারক সংখ্যার স্বল্পতাকে দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা জটের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই মামলা জটের পরিণতি বিচারে বিলম্ব। আর ইংরেজিতে একটা কথাই আছে- জাস্টিস ডিলেইড জাস্টিস ডিনায়েড। অর্থাৎ বিলম্বিত বিচার বিচারহীনতার নামান্তর।
এতো গেল বিচার বিভাগের কাছে বিচার প্রার্থীদের সাধারণ প্রত্যাশার বিপরীত প্রাপ্তির কথা। এই বিচার প্রার্থীদের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র বিলম্বিত বিচার তাদের জন্য বাড়তি অভিশাপ প্রমাণিত হতে বাধ্য। এত সব কথা বলতে হচ্ছে- আমাদের সমাজে ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে সমাজের দুর্বলতর অংশ অনেক সময়ই কাক্সিক্ষত সুবিচার থেকে বঞ্চিত থাকতে বাধ্য হয়।
সমাজের সর্বস্তরে সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য একমাত্র তখনই অর্জিত হতে পারে যখন সমাজের সকল মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকার সংকল্প জোরদার হয়। দুঃখের বিষয় এ ধরনের মানুষ এখন প্রায় হাজারে কেন, লাখে খুঁজে পাওয়াও কঠিন। আধুনিক সমাজের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে অন্যের ক্ষতি সাধন করেও নিজের স্বার্থ আদায় করার প্রবণতা ব্যাপক। পার্থিব জীবনের লাভালাভের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপের কারণেই সমাজে এই দুঃখজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দূর করার যে দুটি প্রধান উপায় রয়েছে, তার একটি হচ্ছে আমাদের এ পার্থিব জীবনের পর আরেকটি যে জীবন আছে যা পরকালীন বা আখেরাতের জীবন নামে পরিচিত, সেই জীবনে গভীর বিশ্বাস। আমরা পার্থিব জীবনে নানা প্রভাব খাটিয়ে আমাদের বিভিন্ন অন্যায়, অপরাধের শাস্তি এড়িয়ে চলতে সক্ষম হলেও পরকালে স্রষ্টার বিচার এড়িয়ে যাবার কোন উপায় বা ক্ষমতা কারো থাকবে না। কেউ এ দুনিয়ার কোন অপরাধ করে তার শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারলেও পরকালে স্রষ্টার চূড়ান্ত বিচার ও তাঁর চূড়ান্ত শাস্তি থেকে কেউ রেহাই পেতে পারবে না।
এই বিশ্বাস অতি গভীর ছিল বলেই রসূলে করিমের (সা.) যুগে কোন সাহাবী যদি হঠাৎ এমন কোন অপরাধ করে বসতেন, যা কেউ দেখেনি তার শাস্তির দাবিতে অধীয় হয়ে উঠতেন। ইসলামের সেই হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণ যুগের তুলনায় নৈতিকতার ক্ষেত্রে আমাদের এমন অবনতি ঘটেছে, যা স্মরণ করলে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাবার কথা। এই অবস্থায় সমাজে সুবিচার বজায় রাখার আর একটি পথই অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে সামাজিক প্রতিরোধ। যে সমাজে অন্যায়, অবিচার অহর্নিশি সংঘটিত হয় তা যে মনুষ্য সমাজের জন্য কলঙ্কের নামান্তর, তা যদি আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি এবং সেই বিশ্বাসের আলোকে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি তাহলেও এই অভিশাপ থেকে আমরা অনেকটা মুক্তি পেতে পারি।
আধুনিক ব্যবস্থায় যে কোন রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ থাকে: (এক) নির্বাহী (এক্সিকিউটিভ), (দুই) আইন প্রণয়ন (লেজিসলেশন), (তিন) বিচার (জুডিশিয়ারি) বিভাগ। এর মধ্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে তাতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। দুঃখের বিষয় বিচার বিভাগের এ প্রাধান্যের গুরুত্বও আমাদের দেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে যখন বিচারক নিয়োগের মধ্যেও রাজনৈতিক বিবেচনা অনুপ্রবেশ করে বসে। সুতরাং দেশের সামগ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখতে হলে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা অত্যাবশ্যক বিবেচনা করতে হবে।
একথা এজন্য বিশেষভাবে বলা হচ্ছে যে, বিচার বিভাগে যাদের নিয়োগ পাবার কথা তারাও মানুষ। আর মানুষ মাত্রেরই যেহেতু ভুলত্রুটি থাকতে পারে তাই তাদের সাধারণ মানুষদের দুর্বলতা থেকে অবশ্যই মুক্ত থাকতে হবে। তাদের মানুষ হয়েও সাধারণ মানুষের দুর্বলতা থেকে মুক্ত হয়ে অতি মানব ও মহা-মানব হিসাবে নিজেদের প্রমাণিত করতে হবে।
যে মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এ নিবন্ধ লেখা শুরু করা হয়েছে তার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে ১৬ জনই র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্য। অথচ দেশে র্যাব নামের বিশেষ বাহিনী সৃষ্টির অন্যতম লক্ষ্যই ছিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধমুক্ত দেশ গড়া। র্যাব অর্থ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন। অর্থাৎ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশকে অপরাধমুক্ত করার বিশেষ বাহিনী। যে বাহিনী গঠন করাই ছিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশকে অপরাধমুক্ত করার লক্ষ্যে তার সদস্য ও কর্মকর্তারাই যদি খুন, গুম, অপহরণ প্রভৃতি অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তার চাইতে দুঃখজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে।
বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে সাত: খুন মাফ। কোন ব্যক্তি সমাজে অতিরিক্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠলে সাধারণত তার কোন অন্যায়, অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। এ সব লোকদের অপকর্ম সম্পর্কে সাধারণত বলা হয়ে থাকে- তাদের সাত খুন মাফ। নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার আসামিরাও সাত খুন শব্দের বদৌলতে তাদের নৃশংস অপরাধের সাজা থেকে বেঁচে যাচ্ছেন বলে আশা করেছিলেন কিনা জানা না গেলেও রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা কারাগারে যেমন নির্বিকার জীবন কাটান তাতে তারা এত কঠিন শাস্তির আশঙ্কা সম্ভবত করেননি। রায় ঘোষণার পরও তাদের অনেকে যেমন স্বাভাবিক ছিলেন, তাতে মনে হয় অতীতের মতো তারা এখনও অন্যায়, অপকর্মের শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করছেন।
এটা অস্বাভাবিক নয়। তারা অতীতে যেসব কাজ করে এসেছেন তাতে তারা শুধু একা ছিলেন না। তাদের সহ-অপরাধীদের অনেকে এখনও পলাতক আছেন। অনেকে অপরাধের সাথে জড়িত থাকলেও তাদের নাম আদৌ আসামি সন্ধানকালে উচ্চারিত হয়নি। তারা স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যাবেন, ধরা পড়ার কারণে শুধু তাদের কয়েকজনকেই সাজা পেতে হবে, এ অবস্থা শাস্তিপ্রাপ্ত অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। এই সেদিনও নারায়ণগঞ্জে যাদের বিরুদ্ধে কেউ টুঁ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারতো না, তাদের সাথে র্যাবের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য যোগ দিয়ে এক অপ্রতিরোধ্য অপশক্তি হয়ে উঠেছিল, আজ তাদের সকল অপকর্মের কাহিনী ফাঁস হয়ে পড়ায় যে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে জনগণ কতদিন স্বস্তি অনুভব করতে পারবেন আজ সেটাই প্রশ্ন।
এ কারণেই আমরা নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার রায় প্রকাশিত হবার পর শুধু প্রাথমিকভাবে আনন্দ প্রকাশ করেছি। কারণ বহু প্রতীক্ষিত এ মামলার রায় প্রকাশিত হতে যেমন দীর্ঘ সময় লেগেছে তাতে প্রমাণিত হয় নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর এ সাত খুন মামলার রায় চূড়ান্ত কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত রায় কার্যকরণে জানা-অজানা বিভিন্ন উৎস থেকেই বাধা আসতে পারে। তা ছাড়া দ-প্রাপ্ত আসামিরা সমাজে এখনও একেবারে প্রভাবহীন হয়ে পড়েনি। এমন কি তাদের কারো কারো সাথে ক্ষমতাসীনদেরও সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।
তবুও আমরা একেবারে নিরাশ হতে রাজী না। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সকল প্রকার অন্যায়, অপরাধ থেকে মুক্ত হয়ে একদিন আদর্শ রাষ্ট্র হয়ে উঠবে, অন্যায়, অবিচারের গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলা হয়ে উঠবে এ আশা নিয়েই আমরা বেঁচে থাকব এবং বেঁচে থাকতে চাই। তবে এজন্য আমরা আগেই বলেছি আমাদের প্রয়োজন একটি মহৎ আদর্শ, যে আদর্শের সন্ধান দিয়ে গেছেন আমাদের বিশ্বনবী (সা.)। সে আদর্শের মূলকথা হচ্ছে পার্থিব জীবনে মানুষ নানা প্রভাব খাটিয়ে অপরাধের শাস্তি এড়িয়ে যেতে সমর্থ হলেও আখেরাতে আল্লাহতালার বিচার ও শাস্তি হতে বাঁচার কোন উপায় নেই, এই বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে যদি আমরা গভীরভাবে বাস্তব জীবনেও ধারণ করে তার ভিত্তিতে শক্তিশালী সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি তা হলে আমাদের সাফল্য আসতে পারে অনিবার্যভাবে।
বাংলাদেশের জনগণ সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালায় শুধু বিশ্বাসীই নয়, তাঁর দেয়া জীবন বিধান ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবায়ন করতে সংকল্পবদ্ধ। আমরা যদি জনগণের এ মহান বিশ্বাসের আলোকে সামনে অগ্রসর হয়ে চলতে বদ্ধপরিকর থাকি তবে আমাদের জীবনে আল্লাহতায়ালার সাহায্য অঝোর ধারায় নেমে আসবে। এ ব্যাপারে আমরা গভীর আশাবাদী। তাই আমরা নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় ঘোষণার পরবর্তী এ মুহূর্তে নতুনভাবে গভীর প্রত্যয় প্রকাশ করছি যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার দেয়া জীবন দর্শনের আলোকে যদি আমরা আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ হই, তা হলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি অল্পদিনের মধ্যে একটি সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
আমরা যদি বাস্তবতার আলোকে আজকের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব তথাকথিত সভ্য দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে এমন সমস্ত নেতৃত্ব ও শক্তির উত্থান ঘটছে যা কোথাও শাস্তির সুনিশ্চিত আশ্বাস দিতে পারছে না। পক্ষান্তরে সভ্যতাধর্মী পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও অনেকটা অনেকের অজান্তে ইসলাম একটি ক্রমবর্ধমান, ক্রমবিকাশমান শক্তি হিসাবে বেড়ে উঠছে। ইসলামের এই ক্রমবিকাশমান শক্তির বিরুদ্ধে ট্রাম্পদের হুমকি-ধমকি বাস্তবে কোন কাজেই আসছে না।
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে শাস্তির রায় ঘোষিত হওয়ার পর লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে এ কারণে যে, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষেরা যেখানে শান্তির আশায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ইসলামের দিকে এগিয়ে আসছে সেখানে আমাদের সমাজের কিছু সংখ্যক বিপথগামী মানুষ সুন্দরতম আদর্শের পরিবর্তে ক্ষুদ্রসংর্কীন স্বার্থে মানুষ খুুনের মতো অপকর্মের পথে ধাবিত হয়ে জাতির ললাটে কালিমা লেপন করে দিতে উদ্যত হয়েছে। তারা যদি অচিরে আত্ম সংশোধনের পথে অগ্রসর না হয় তাদের চরম শাস্তিই হোক আমাদের একান্ত দাবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।