Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোবিন্দগঞ্জে সাত শতাধিক একর জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্কা

সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে মিটার ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোজন দিয়ে দ্বি-গুণেরও বেশি বিদ্যুৎ বিল করায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেচ পাম্প বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ বিল সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ গ্রাহকরা রংপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ জোনের প্রধান প্রকৌশলী, গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবরে লিখিতভাবে জানিয়ে আসলেও কোন প্রতিকার না মেলায় দিশেহারা সেচ পাম্প মালিকগণ আন্দোলন শুরু করেছে। অপরদিকে বকেয়া বিলের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে পড়ে ৭ শতাধিক একর জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ৬নং দরবস্ত ও ৭নং তালুককানুপুর ইউনিয়নের ৬১ জন বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প মালিকগণ বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্ররোচনায় ২০০৬-০৭ সাল থেকে মিটারবিহীন সংযোগ নিয়ে ইরি-বোরো আবাদের জন্য জমিতে সেচ প্রদান করে আসছিল। এসব মিটারবিহীন সংযোগের বিপরীতে ২০১৪-২০১৫ মৌসুম পর্যন্ত সেচ পাম্প মোটরের হর্স পাওয়ার ভেদে ১০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল ইস্যু করে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। যা পাম্প মালিকগণ পরিশোধও করেছে। ২০১৫-২০১৬ সেচ মৌসুমে ৬১টি সেচ পাম্পের আওতায় দুই ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের প্রায় ৭শ’ একর জমিতে ইরি-বোরো আবাদে সেচ প্রদান করা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের জুন মাসে উল্লেখিত সেচ পাম্প মালিকদের সংযোগের বিপরীতে হঠাৎ করে ৩/৪ গুণ  বেশি বিদ্যুৎ বিল ইস্যু করা হয়। যা পরিশোধ করা সেচ পাম্প মালিকগণের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়ে এবং তারা বিল সংশোধন করে প্রকৃত বিল ইস্যু করার দাবি নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের শরণাপন্ন হয়। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাগণ ২/৪ দিন পরে আসেন বলে মাসের পর মাস হয়রানি করতে থাকে সেচ পাম্প মালিকদের। নিরুপায় সেচ পাম্প মালিকরা বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে গোবিন্দগঞ্জ  বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ বিভাগে কর্মরত সহকারী প্রকৌশলী গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার সর্বানন্দ (নলডাঙ্গা) গ্রামের মৃত আব্দুল কদ্দুস সরকারের  ছেলে এটিএম রফিকুল ইসলাম  গোবিন্দগঞ্জ  বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় উপজেলার তালুকানুপুর ইউনিয়নের সমসপাড়া গ্রামের মৃত ছিফায়েতুল্লার ছেলে মো. আবুল কাশেম সহ ৫৮ জনের অধিক সেচ পাম্প মালিকগণের সাথে ৩শ’ টাকার সরকারি রেভিনিউ ট্যাম্পে কতিপয় কর্মকর্তা/ কর্মচারীবৃন্দের অবহেলা/ গাফিলতি/ ভুলের কারণে সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ বিল  মিটার বা মিটার ছাড়াই বিল করা হয়েছে ফলে বিদ্যুৎ বিলের কপিতে অতিরিক্ত বিল লিপিবদ্ধ করা হয়েছে মর্মে ১০/১০/২০১৬ ইং তারিখের মধ্যে অতিরিক্ত বিল সংশোধন করে সঠিক বিদ্যুৎ বিল প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গিকারনামা দেয় এবং কয়েক দিন পর বদলি নিয়ে অত্র চলে যায়। কিন্তু এরপরেও বিদ্যুৎ বিভাগ কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এবং সেচপাম্পগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করায় সেচ পাম্প মালিকগণসহ পাম্পের আওতাধীন কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অপর দিকে সেচ পাম্প মালিকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিতরণ জোন, রংপুর বোর্ড সভায় আলোচ্য বিষয়ের সার সংক্ষেপে সেচ গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল সংশোধন বিষয়ে বিতরণ বিভাগ, বিউবো, গাইবান্ধা সদর দপ্তর হতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে নোটশীট প্রেরণ করা হলে মহাব্যবস্থাপক বাণিজ্যিক পরিচালন বিউবো ঢাকা অফিস থেকে রাজশাহী-২ বিউবো পওস সার্কেলের  তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত টিম গঠন করেন। তদন্ত কমিটি গত ২৭-০৯-১৬ তারিখে বিতরণ বিভাগ, বিউবো, গাইবান্ধা সদর দপ্তর পরিদর্শন করে উক্ত বিষয়ে তদন্ত করেন এবং ২৮-০৯-১৬ তারিখে মহাব্যবস্থাপক, বাণিজ্যিক পরিচালন, বিউবো, ঢাকা-এর দপ্তরে  তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তদন্ত কমিটির সুপারিশ হলোÑ (এক) ২০১৫-২০১৬ সাণের সেচ মৌসুমে বিতরণ বিভাগ, বিউবো, গাইবান্ধা দপ্তরের সেচ গ্রাহকদের ট্রারিফ বিধি অনুসরণ না করে  অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হইয়াছে এবং উক্ত বিষয়ে রিডিং বইয়ে কোন ব্যাখ্যা না থাকায় বিলগুলি সংশোধনযোগ্য। (দুই) ২০১৫ সালের সেচ মৌসুমের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল এবং ২০১৬ সালের সেচ মৌসুমের জানুয়ারি হইতে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ২০১৪ সেচ মৌসুমের সংশ্লিষ্ট মাসের বিলকৃত ইউনিটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধিত বিল ইস্যু করা যায়। (তিন) মে/১৫ হতে ডিম্বের/১৫ পর্যন্ত এবং মে/১৬ হতে পরবর্তী মাসগুলোতে ইস্যুকৃত বিল বাতিলযোগ্য। উপরোক্ত সুপারিশমালার আলোকেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দীর্ঘদিনেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উপায়ন্তর না দেখে সেচ পাম্প মালিকগণ গত ২৮-১২-১৬ তারিখে গোবিন্দগঞ্জে মানববন্ধন এবং ০৩-০১-১৭ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে বিদ্যুৎবিল সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের দাবি জানায়। গত ১৪ জানুয়ারি দুপুরে এনসিডিপি মার্কেট চত্বরে একই দাবিতে উপজেলা সেচ পাম্প মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন সেচ প্রদানের জন্য দ্রুত বিল সংশোধন করে সেচ পাম্পসমূহে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে  সহযোগিতার দাবি জানান। এ ব্যাপারে পিডিবি’র গোবিন্দগঞ্জ বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মো. আবু হারেছ জানান, আমি নতুন এসেছি। ঘটনাগুলো পুরাতন পিডিবির বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া আমার কিছুই করার নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ