Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চার ফসলি জমিতে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে লিখিত অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোর ও মোহনপুরের সীমান্ত সংলগ্ন ঘাষিগ্রাম ইউপির বড়াল মাঠে চার ফসলিতে জমিতে অবৈধ ইটভাটা স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা অবৈধ সেভেন স্টার নামের ওই ইটভাটা বন্ধের দাবিতে ডাকযোগে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও আঞ্চলিক পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে ভাটা মালিক সাইদুর রহমান বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা ও মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে প্রশাসনের অলিখিত অনুমতিতে তিনি এই ভাটা স্থাপন করেছেন, তার ভাটার বিষয়ে প্রশাসন অবগত রয়েছেন এটাকে অবৈধ ভাটা বলা অনৈতিক। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দীনের ভাই ও ঘাষিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন বাবলু তার ভাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন, তিনিই জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মোহনপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ সেভেন স্টার ইট ভাটার কারণে বড়াল মাঠের প্রায় দেড় থেকে দুশ’ বিঘা আলুর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, দ্রুত এই ভাটা বন্ধ করা না হলে এই মাঠে সব ধরনের ফসলহানি হবে। এদিকে লোকালয় ও চার ফসলি জমিতে অবৈধ ইটভাটা নির্মাণের ফলে আশপাশের জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। সরকারের সব নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে ইট ভাটায় প্রকাশ্যে ইট পোড়ানো হচ্ছে। আর ইট ভাটায় পোড়ানো জ্বালানি কাঠের প্রচ- কালো ধোঁয়ায় লোকালয়ের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ডাব, আম ও কাঁঠাল গাছের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি ফসলহানি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও বাবু বলেন, ইট ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে তাদের আলুখেতে রোগ দেখা দিয়েছে ও ফলন হানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, ইটভাটার কারণে আশপাশের প্রায় ১০০ বিঘা জমির আলুচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু প্রভাবশালীরা তাদের বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করেই ভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছেন। প্রভাবশালীরা চার ফসলি প্রায় ১০ একর জমির ওপর অবৈধভাবে সেভেন স্টার ইটভাটা স্থাপন করেছেন। স্থানীয়রা অবৈধ এই ইটভাটা স্থাপনে বাধা দিলে তাদের মামলা-হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রায় জিম্মি করে অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা পরিপত্র (২০ অক্টোবর ২০০৩) অনুযায়ী ইটভাটায় ১২০ ফুট উঁচু চিমনি স্থাপন বাধ্যতামূলক। অথচ অবৈধ সেভেন স্টার ইট ভাটায় মাত্র ২০ ফুট উঁচু মানধাত্তা আমলের টিনের চিমনি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (৪ ধারার ৫ উপ-ধারা) অনুযায়ী আবাসিক এলাকা, উপজেলা সদর ও ফল বাগানের আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু লোকালয় ও চারফসলী জমিতে সেভেন স্টার ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এতে ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া অতি সহজেই লোকালয় ও খেত-খামারে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এ ছাড়াও ইটভাটায় শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইটভাটায় এসব শিশু শ্রমিকরা কাজ করছেন। স্থানীয়রা  অবৈধ সেভেন স্টার ইট ভাটা বন্ধের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যম প্রশাসনের অভিযান পরিচালনার দাবি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভাটা মালিক তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করছে। তিনি বলেন, খুব দ্রুত এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর-এর উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো ইটভাটা চালাতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে সেভেন স্টার ইট ভাটা মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ডিসি অফিসে ৫০ হাজার টাকা ও ইউএনও অফিসে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ভাটা চালাচ্ছেন, এছাড়াও ভ্যাট হিসেবে প্রায় ৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ