Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা

প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২০ এএম, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭

হাটাহাজারী উপজেলা সংবাদদাতা : বাবুই পাখিকে চট্টগ্রামের ভাষায় পিইজ্জ্যা বলে। এই পিইজ্জ্যা পরিবেশবান্ধব নিরীহ পাখি। এই পাখি কারো কোনো ক্ষতি করে না। দেখতে ছোট চড়–ই পাখির  মতো। বাবুই পাখিকে শৈল্পিক কারিগরও বলা হয়। কারণ তারা বাসা তৈরি করে শিল্পীর মতো করে। খুব সুন্দর ও দেখতে মনোমুগ্ধকর। যে কেউ এই পাখির বাসা দেখে মোহিত হন। ছোট শিশু বাবুই পাখির ঝরে পরা বাসা দিয়ে খেলতে খুব মজা পায়। তারা এতে পরম আনন্দ উপভোগ করে। দেশের বিত্তশালীদের ঘরের শোভা বৃদ্ধির জন্য বাবুই পাখির বাসা ঘরের ছাদে কিংবা শো কেইজে রাখে। কোনো মানুষ এই রকম বাসা তৈরি করলে হুবহু পাখিদের তৈরি বাসার মতো হবে না। বাবুই পাখি তাদের ঠোঁট  দিয়ে খুবই সুন্দর করে শিল্পীর ন্যায় এই বাসা তৈরি করে। বাসা বৃষ্টি, বাতাস ও রোদ প্রতিরোধক। এই বাসায় বৃষ্টির পানি পড়ে না। কোনো সময় জোরে বাতাস বয়ে গেলেও বাসা নষ্ট হয় না। প্রচ- রোদ যাতে তাদের তৈরি বাসায় ঢুকতে না পারে সেই আদলে তারা বাসা তৈরি করে। খেজুর গাছ কিংবা তাল গাছের পাতা এবং   পাতার সাথে ধানের খড় মিশিয়ে এই পাখি বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরির সময় তারা ঠোঁট দিয়ে এমনভাবে পাতা ও খড়গুলো ছিড়ে যাতে অতিরিক্ত বড়-ছোট না হয়। বাসাগুলো বাতাস আসলে দোলনার মতো দোলে। তখন খুব সুন্দর দেখায়। বাবুই পাখি এত সুন্দর করে বাসা তৈরি করলে ও তারা বাসার ভেতরে বিশ্রাম কিংবা ঘুমায় না। তারা সব সময় বাসার দরজায় বসে থাকে। প্রবাদ রয়েছেÑ ভেতরে ঘুমালে কেউ তাদের বাসা হয়তো ভেঙ্গে দিতে পারে। এই কারণে বাসার মুখে পাহারায় বসে, তখন তারা ঘুমায় কিংবা বিশ্রাম নেয়। প্রতি বাসায় স্ত্রী ও পুরুষ দুইটি পাখি থাকে। একটি ঘুমালে কিংবা বিশ্রাম করতে গেলে অন্যটি দরজার মুখে বসে পাহারায় থাকে। বাবুই পাখি ও মানুষের মতো দল ও সমাজ বদ্ধভাবে বসবাস করতে থাকে। এক গাছে কিংবা পাশাপাশি গাছে তারা বাসা তৈরি করে বাস করে। আবার দুইটি পাখি একসাখে বাসা ছেড়ে বের হয়ে যায় না। কেউ বাসার ক্ষতি করতে পারে এই ভয়ে।   
বাবুই পাখিরা শুধু তালগাছে বাসা তৈি  করে বসবাস করে। অন্য কোনো গাছের তারা বাসা তৈরি করে না। তবে ক্ষেত্র বিশেষে এরা খেজুর গাছেও বাসা তৈরি করে। তালগাছে বসবাস তাদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ। আর তাল গাছের বাসা তৈরি করতে তাদের তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। এই গাছের পাতা ছিড়ে বাসা তৈরি করতে পারে। গাছের সাথে ঝুলন্ত এই বাসা এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে সেই বাসার কোনো ক্ষতি করতে না পারে ।
এক সময় গ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর তালগাছ ছিল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলো তালগাছে ভরপুর ছিল। এখন চট্টগ্রামের কোনো উপজেলায় তেমন তাল গাছ নেই। তবে দেশের অন্যান্য জেলায় প্রচুর তালগাছ দেখা যায়। তালগাছ না থাকায় এই পাখির বাসা ও তেমন দেখা যায় না। তালগাছ দীর্ঘ মিয়াদী ফলের গাছ।  রোপণ করলে সেই গাছে ফল দিতে অনেক সময় লাগে। এমনও কথা প্রচলিত আছেÑ যে ব্যক্তি তাল গাছ রোপণ করে, সে ব্যক্তি সেই গাছের তাল খেয়ে যেতে পারে না। আর যে গাছ রোপণ করে, তাল খেতে পারে সে খুব ভাগ্যবান বলে বিবেচিত হয়। আবার তালগাছ রোপণ করলে সেই গাছ যে স্ত্রী গাছ হবে, তাল ধরবে তেমন কথাও নেই। সেই গাছ যদি পুরুষ গাছ হয়, তাহলে সেখানে তাল ধরবে না। দেশের কোনো কোনো জেলায় তালগাছ থেকে রস আহরণ করার কথা শোনা গেলেও চট্টগ্রামে তালগাছ থেকে রস আহরণের কথা তেমন শোনা যায় না। তালগাছ যেগুলো ছিল, বয়সের কারণে সেগুলো মরে গেছে। অনেকে ইটভাটায় তালগাছ বিক্রি করে দিয়েছে। তালগাছের খুঁটি ও অনেকে ব্যবহার করতে চায় না। তবে তাল গাছের খুঁটি খুব শক্ত ও টিকসই। এক শ্রেণির  মানুষের ধারণা তাল গাছের খুঁটি ঘরে লাগালে সেই ঘরে বজ্রপাত হয়। এই বজ্রপাতে মানুষের প্রাণ সংহার হয়। তবে এই কথার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ইদানিং অবশ্য এই গাছ করাত কলে সাইজ করে ঘরের খুঁটি করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে ঘরে তাল গাছের খুঁটি ব্যবহার করছে। তাল পাইন্ন্যা তাল হিসেবে খাওয়া যায় কঁচি থাকতে। আর পাকলে তালের রসের হালুয়া করে খাওয়া যায়। নানা জাতের পিঠা ও তৈরি করা যায় পাকনা তালের রস দিয়ে। এখন গ্রামে তালগাছ তেমন চোখে পড়ে না। তাই এই গাছে বাবুই পাখির বাসা ও তেমন দেখা  যায় না। তালগাছের সাথে সাথে বাবুই পাখির বাসা ও পাখি হারিয়ে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ