Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মহাসড়কে অবৈধ কাঁচাবাজার যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত ঘটছে দুর্ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : গাজীপুরের শ্রীপুরে ইজারাদারদের সহায়তায় অবৈধভাবে বসানো হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর ভাসমান বাজার। নিয়ন্ত্রণহীন যত্রতত্র বাজার বসায় মহাসড়কে যানজট দিনদিন বেড়েই চলছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এমনকি দুর্ঘটনায় গত তিন মাসে অজ্ঞাতনামাসহ ১৬ জন নিহত হয়েছে। অনুমতিবিহীন ও অব্যবস্থাপূর্ণ যেখানে সেখানে বাজার বসায় পথচারী ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানা যায়, বাঘের বাজার এলাকা হতে ভালুকার বগারবাজার পর্যন্ত মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের এলাকা। হাইওয়ে থানা এলাকার বাঘের বাজার, নতুন বাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী, ১নং সিএন্ডবি, মাওনা ফ্লাইওভার, চৌরাস্তা কাঁচাবাজার, এমসি বাজার, নয়নপুর, জৈনা বাজারসহ অন্ততপক্ষে ৩০টি স্থানে মহাসড়কের ওপরেই যত্রতত্র বসছে অবৈধ হাটবাজার। কোন কোন স্থানে প্রশাসন কর্তৃক প্রাপ্ত ইজারার কাগজ ইজারাদাররা প্রদর্শন করে। প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব অবৈধ হাটবাজার, কাঁচাবাজার যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এসব হাটবাজারের পিছনে পুলিশের অদৃশ্য যোগসাজশ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রতি দোকানপাটের জন্য ১০০ হতে ২৫০ টাকা পর্যন্ত খাজনা বাবদ আদায় করা হয়। জানতে চাইলে কথিত ইজারাদারের আদায়কারী জানান, খাজনা এত হওয়ার কথা ছিল না, যেহেতু প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে এই দোকানগুলো দেওয়া হয় এইজন্য বেশি টাকা নিতে হচ্ছে। এমন অনেক দোকানদার আছে যারা একটি ভাল পজিশনে ভ্রাম্যমাণ দোকান নেয়ার জন্য আগে থেকেই ইজারাদারকে মোটা অংকের বকশিশ দিয়ে থাকে। মহাসড়কে দোকান দেওয়া নিয়ে রীতিমত হাইওয়ে পুলিশ ইজারাদারদের সাথে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশের চটপটি দোকানদার হাতেম আলী জানান, তিনি প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানদারী করেন। তিনি ইজারাদারদের দৈনিক ১০০ টাকা করে দিয়ে প্রতিদিন রশিদ সংগ্রহ করেন। ফুটপাতের ভাসমান দোকানদার মাসুদ মিয়া, কামরুল ইসলাম, জয়নাল মিয়া, রমিজ উদ্দিনসহ প্রায় শতাধিক দোকানদার জানান, প্রতিদিনই তাদের কাছে ইজারাদারের লোক এসে ১০০ টাকার রশিদ দিয়ে টাকা নিয়ে যান। মাওনা ফ্লাইওভারের পূর্ব পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই লেনের ওপর ভাসমান কাঁচাবাজার দোকানদার কাঞ্চন মিয়া জানান, প্রতিদিন দোকান খুললেই ইজারাদারদের ২৫০ টাকা দিতে হয়। এদিকে একই স্থানের কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দিন, কাজল মিয়া, নজরুল ইসলাম, আব্দুস সালামসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক দোকানদার জানান, তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে রশিদের মাধ্যমে নিচ্ছে। গাজীপুর শাহীন স্কুলের অভিভাবক স্বপন মিয়া জানান, মহাসড়কের ওপর অবৈধভাবে কাঁচাবাজার বসানোর কারণে মাওনা চৌরাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। ৫ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে আধ ঘন্টা সময় লাগে। ট্রাক ড্রাইভার আলম মিয়া জানান, মহাসড়ক চার লেন করা হয়েছে আবার ওভারব্রীজও করা হয়েছে কিন্তু মাওনা চৌরাস্তায় কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক দোকান বসানোর কারনে যানজট প্রতিদিন লেগেই থাকে। এসব পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে। ইজারাদার আলহাজ্ব কামাল ফকির জানান, পৌরসভা থেকে আমি অস্থায়ীভাবে ইজারা নিয়েছি। ইজারার নির্দিষ্ট কোন স্থান না থাকায় অস্থায়ীভাবে ইজারা আদায় করছি। তবে মহাসড়কের ওপর ভাসমান ফুটপাত ও কাঁচাবাজারের ইজারা না থাকলেও তিনি দৈনিক প্রতি দোকান থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করছেন বলে জানান। এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেন করা হলেও তিনলেনই অবৈধ ফুটপাত ও কাঁচাবাজারের দখলে। মহাসড়কের ওপর ভাসমান বাজার ও সিএনজি অটোরিক্সার স্ট্যান্ড, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট লেগেই থাকে। মাওনা চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের নিচে মহাসড়কের ওপরেই বসানো হচ্ছে একের পর এক ভাসমান দোকান। মহাসড়ককে যানজট মুক্ত রাখার জন্য প্রতিদিন সকাল-বিকাল পুলিশী অভিযান চালানো হয়। তথাপি স্থানীয় কথিত ইজারাদার সরকার দলীয় লোকজন অভিযানের পরপরই আবার দোকান বসিয়ে দেয়। যার কারণে যানজট লেগেই থাকে। এ ব্যাপারে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব আনিছুর রহমান জানান, মহাসড়কের ওপর আমরা অস্থায়ী ভাবে কোন ইজারা দেয়নি। যদি কেউ দোকান বসিয়ে ইজারা আদায় করে তাহলে তা অবৈধ। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল জানান, মাওনা চৌরাস্তাসহ মহাসড়কের ওপর অবৈধ দোকানপাট বসানোর কোন নিয়ম নেই এবং এইসব দোকান থেকে খাজনা আদায়ের কোন ইজারা দেওয়া হয়নি। খুব শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে ভাসমান ও ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ