Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুবিধাভোগী ৫শ’ পরিবার এখন স্বাবলম্বী

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন প্রায় ৫শ পরিবার। গ্রামের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের ফলে প্রতিদিনই এ প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সদস্য। ৫৪টি সমিতির মাধ্যমে এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করেছেন ১১ হাজার ৭৩ জন ব্যক্তি। রূপগঞ্জ উপজেলার সমন্বয়কারীদের মাঠ পর্যায়ের সমিতির উপকারভোগী সংগঠনের দক্ষতা, সমিতি পর্যায়ে যোগাযোগ, উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণের আগ্রহ, সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও বিভিন্ন কর্মকা-ে উদ্বুদ্ধকরণের পারদর্শিতা, দাপ্তরিক শৃঙ্খলা রক্ষা, আদেশ-নির্দেশ পালনের তৎপরতা ও দক্ষতা রয়েছে। এ কারণে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এখন রূপগঞ্জের ৬টি ইউনিয়নের এখন একটি আলোচিত প্রকল্প। গত ৩টি অর্থবছরে এই সমিতি দিন দিন সদস্যদের সঞ্চয়ী আমানত ও ঋণদান কর্মসূচিতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে। গত ৩ বছর এই প্রকল্পে মাধ্যমে ১শ জন ব্যক্তিকে ১শটি গরু প্রদান, ৪৪টি টিনের প্রকল্প, ৩০টি হাঁস-মুরগির প্রকল্প, ৯০টি নিজস্ব জায়গায় গাছের চারা রোপণ ও সবজি চাষ প্রকল্পে ১শ ২০টি পরিবারকে সহায়তা করা হয়েছে। আর এই প্রকল্পে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা প্রকল্পের কাজে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে সঞ্চয় আদায়, ঋণ ও কর্মসংস্থান গ্রহণে সস্যদের বিভিন্ন কর্মকা-ের অংশগ্রহণের সুবিধাসহ উপজেলা সমন্বয়কারী ও স্থানীয় লোকজন সকলের সাথে সমন্বয় করে চালাচ্ছেন এর কার্যক্রম। উপজেলা সমন্বয়কারী ইখতিয়ার উদ্দিন জানায়, ২০১৩,২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে সমিতি এবং এর সদস্যদের বিভিন্ন মত বিনিময় সভা, সমিতির ম্যানেজার ও সদস্যদের কাজের গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ইউনিয়ন ভিত্তিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে পুরস্কার ঘোষণা করায় দিন দিন বাড়ছে এর গতি। ফলে উপজেলায় শত ভাগ সঞ্চয় আদায়সহ এ অর্থ বছরে অন্যান্য কার্যক্রম গত বছরের মত সফলভাবে সম্পন্ন করার দাবি করেছেন তিনি। এই কর্মকর্তা আরও জানায়, একটি খামার একটি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য দেশের প্রতিটি পরিবারকে মানব ও অর্থনৈতিক সম্পদের কার্যক্রমে সর্বোত্তম ব্যবহার। আর্থিক কার্যক্রম এককভাবে গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে দরিদ্র সীমা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এ প্রকল্প কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় এ সমিতির সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকার ও অন্যন্য প্রতিষ্ঠান যে সেবা প্রদান করে তা গ্রামবাসীর মধ্যে পৌঁছানোর যে বাধা থাকে তা দূরীকরণ করে সেই সেবা দ্রুত কাক্সিক্ষত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। পাশাপপাশি এ প্রকল্পের সদস্যরা সরকারি দপ্তরের প্রদত্ত ভাতা, অনুদানসহ প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকল্পের সদস্যদের অগ্রাধিকার প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের কাছে কাক্সিক্ষত সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য গ্রাম সংগঠনের সদস্যবৃন্দদের মধ্যে থেকে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী নিয়োগ করে। যেমন পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কর্মী, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মী, শিল্প উন্নয়ন কর্মী, এদের মাধ্যমে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি রূপায়ন, বাল্য বিবাহ রোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ, পরিবারর পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য সচেতনসহ বৃক্ষ রোপণ ও যৌতুক প্রথাসহ সমিতির সদস্যসহ গ্রামের অন্যান্যদের মধ্যে সচেতনা গড়ে তোলোর জন্য এখন বেশ আলোচিত। যাদের ঘর বাড়ি নেই তাদেরকে সরকারি খাস জমি প্রদান করে সুস্থ ও সুন্দরভাবে সমাজে বেঁচে থাকার জন্য এ প্রকল্প প্রথম থেকে ব্যবস্থা করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক বেস্টনির ও বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অনাচার দূর করার জন্য সমিতির সদস্যদের মাধ্যমে জনগণকে করা হচ্ছে উদ্বুদ্ধ। এ সমিতির সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকা- প্রতিরোধের কারণে দিন দিন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প রূপগঞ্জে বিস্তৃত হচ্ছে। এ খামার থেকে ঋণ নিয়ে গত ৪ বছরে অনেকেই স্বাবম্বলী হয়ে ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। একটি বাড়ি একটি খামার রূপগঞ্জ প্রকল্পে বর্তমানে সঞ্চয় জমার পরিমাণ এক কোটি ৫৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ০৫ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৫শ টাকা। ঋণ আদায়ের পরিমাণ প্রায় ৮৩ পারসেন্ট। আর এসব প্রতিটি কর্মকা-ের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখছেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম। তিনি জানায়, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি বাড়ি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি রূপগঞ্জের মডেল। গত বছরও এ প্রকল্পটি সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রকল্পের স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি দাবি করেন, এ প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং এর যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক। পাশাপাশি লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পসহ হাঁস-মুরগির খামার বনায়ন কর্মসূচি ও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রকল্পই সাড়া ফেলতে পেড়েছে মানুষের মাঝে। পাশাপশি এলাকার লোকজনকে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকা- থেকে বিরত রাখতে ও আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে রূপগঞ্জে এ প্রকল্পটি একটি মডেল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু হওয়ার পর এলাকার সুদী মহাজন, সুদের ব্যবসাসহ রক্ত চোষাদের অনৈতিক ব্যবসা এখন প্রায় বন্ধের পথে। পাশাপাশি বিভিন্ন সমিতির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের সুদে ঋণ নিয়ে অসহায় সম্বল হারানো থেকে নিস্তার পাচ্ছে জনগণ। তাই দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি। এ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহাম্মেদ আলমাছ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গড়ে তোলা “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা এ উপজেলায় সফল হয়েছি। অপর দিকে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রেখে স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সকলকে কাজ করার  নির্দেশনা প্রদান করে আসছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ