পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : দিনে যানবাহনের হর্ন, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার ‘চিউ চিউ’ আওয়াজ নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। রাতে পটকার বিকট শব্দ অথবা কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ। এর সাথে আবাসিক এলাকায় স্থাপিত কলকারখানার মেশিনের শব্দ তো আছেই। শব্দদূষণ মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হলেও ঢাকাবাসীর জন্য তা যেন সহনীয় হয়ে গেছে। শব্দদূষণে কত মানুষ যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, নির্ঘুম রাত কত রোগীর মৃত্যু ডেকে আনছে তার খবর কেউ রাখে না। নাগরিক হিসেবে এসব অসুবিধা থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকারও যেন হারিয়ে ফেলেছে রাজধানীর বাসিন্দারা।
উন্নত বিশ্বে যানবাহনের হর্ন বাজানো নিয়ে কড়াকড়ি আইন থাকলেও রাজধানী ঢাকায় এর কোনো প্রয়োগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের সামনে দিয়ে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে হরদম গাড়ি ছুটলেও তা দেখার কেউ নেই। আগে রাস্তার পাশে ‘হর্ন বাজানো নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও এখন তেমন চোখে পড়ে না। গাড়ির উচ্চশব্দের হর্নের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের হর্ন। অসহনীয় ‘চিউ চিউ’ এই শব্দে যেকোনো মানুষের জন্য বিরক্তিকর। নিষিদ্ধ সত্ত্বেও ঢাকার অলি-গলিতে এখন হাজার হাজার ইজিবাক চলছে নির্বিঘেœ। দেখলে মনেই হবে না যে, এগুলো নিষিদ্ধ কোনো যান। বরং রাস্তায় এগুলো ‘রাজা’র ভাব নিয়ে চলাচল করে। এগুলো চলাচলের নেপথ্যে সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা থাকে বলেই চালকদের রাজা রাজা ভাব বলে জানায় ভুক্তভোগীরা। যাত্রাবাড়ীর দনিয়া, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কদমতলীর জুরাইন এলাকাসহ রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় ইজিবাইকের ভিড়ে রাস্তায় হাঁটাই যায় না। দনিয়া এলাকার রাস্তার তুলনায় ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। এতে করে রাস্তায় মানুষ হাঁটার মতো আর অবস্থা নেই। ভুক্তভোগীরা জানান, সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়তে হয় সকালে শিশুাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময়। তখন এত বেশি ভিড় থাকে যে, রাস্তায় হাঁটা তো দূরে থাক দাঁড়ানোই যায় না। তখন ইজিবাইক বা মোটরচালিত রিকশায় উঠেও কোনো লাভ হয় না। কারণ যানজটে কোনোটাই নড়ে না।
রাজধানীর বাসিন্দাদের জন্য আরেক আতঙ্কের নাম গভীর রাতের বিকট শব্দ। বেশিরভাগ এলাকায় গভীর রাতে বিকট শব্দ আতঙ্কে ঘুম ভাঙে নগরবাসীর। বিকট শব্দ কোথা থেকে আসছে তা জানার চেষ্টা থাকে অনেকের। পরিচিতজনদের মধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। হয়তো পাশেই কোনো কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠান চলছে। সবার পক্ষে সেই খবর জানাও সম্ভব হয় না। বাকি রাত আতঙ্কে নির্ঘুম কেটে যায়। রাজধানীর প্রতিটি এলাকাতেই এই সমস্যা বিদ্যমান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে পটকারূপী বোমা ফোটানো হয় নিছক আনন্দ বা মজা করার জন্য। সেই মজা কত মানুষের ঘুম হারাম করে, কত মানুষের বুকের ব্যথাকে জাগিয়ে দেয়Ñ তার খবর কেউ রাখে না। রাতভর বিষয়টি নিয়ে ভাবনা কাউকে কাউকে প্রতিবাদী করে তোলে। দিনের ব্যস্ততায় সে প্রতিবাদ হারিয়ে যায়। রাজধানীর পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও ঠাটারীবাজারে বিকট ‘শব্দ’ সৃষ্টিকারী এসব পটকা বা বোমা এবং এগুলো তৈরির সরঞ্জাম কিনতে পাওয়া যায়। ভারত থেকে আনা রকেট বোমা এখন উচ্চ শব্দের জন্য বেশি বিক্রি হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। শাঁখারীবাজারে বিয়ে এবং ঠাটারীবাজারে হার্ডওয়্যার সামগ্রীর আড়ালে এসব শক্তিশালী ‘বোমা’ বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। পুলিশ জানায়, ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় রাত ১১টার পর উচ্চস্বরে গান-বাজনা, মাইক বাজানো, পটকা ফোটানো আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু এই নিয়ম কেউ মানে না। ভুক্তভোগীদের মতে, মাঝে মাঝে এত বেশি ভয়ঙ্কর শব্দ কানে আসে যে, তখন নানা ধরনের ভীতি কাজ করে মনে। শিশু ও বৃদ্ধরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। বিকট শব্দ রোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে গভীর রাতে প্রায়ই বিকট শব্দ পাওয়া যায়। আমার অসুস্থ মা বিকট শব্দে আর ঘুমাতে পারেন না। এতে করে প্রায়ই তার ব্লাড প্রেসার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মীর হোসেন বলেন, পুলিশ এসব শব্দ বন্ধ করে না কেন বুঝি না। পটকার শব্দ এত জোড়ে হবে কেন? এভাবে যদি কোনো বাড়িতে বোমা ফাটিয়ে ডাকাতির ঘটনাও ঘটে তবে কিন্তু কেউই টের পাবে না। ডাকাতি করে ডাকাতদল অনায়াসে পালিয়ে যেতে পারবে।
পটকার শব্দ ছাড়াও রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় গভীর রাতে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে অনেকেরই ঘুম ভাঙে। গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীতে কুকুর নিধন বন্ধ। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর দুই সিটি কর্পোরেশন কুকুর নিধন বন্ধ করলেও প্রজননরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে রাজধানীতে কুকুরের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এখন রাস্তায় বেরুলে কুকুরের দল চোখে পড়ে যেকোনো এলাকায়। কুকুরের কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এরই মধ্যে বহু শিশু কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছে। গভীর রাতে এসব কুকুরই নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। এতে করে বহু মানুষের ঘুম ভেঙে যায়। অনেকে কুকুরের ডাকে অতিষ্ঠ হয়ে রাতে আর ঘুমাতেই পারেন না। আলাপকালে ভুক্তভোগী কয়েকজন এ থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চেয়েছেন। জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, কুকুর পুনর্বাসনের জন্য একটি এনজিওকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তারা ঠিকমতো কাজ না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।