হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর : অপরাধ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও বিচারবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্রাইম অ্যান্ড জাস্টিজের প্রথম বার্ষিকীতে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট অনিসুল হক সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বিকল্প উপায় খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুধু শাস্তি দিয়ে অপরাধ দমন করা যাবে না। তিনি আরো বলেছেন, আমরা দেখিছি শতশত বছর ধরে শাস্তি দিয়েও অপরাধ দমন করা যায়নি, যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, আইন প্রয়োগ বা বিচারের পাশাপাশি অপরাধের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ খুঁজে বের করে এর উপশম করতে হবে। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রকাশের পরের দিনই আদালত কার্যক্রম চলাকালে বিচারাঙ্গন সংশ্লিষ্ট নয় এমন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ অন্য কাউকে আমন্ত্রণ না জানাতে অধঃস্তন আদালতের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। যাই হোক, একজন বিজ্ঞ আইানবিদ হিসেবে আইনমন্ত্রী যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তাকে দেশের বিদ্যমান বাস্তবতাতে কোনো বিবেচনাতেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। দেশের বোদ্ধামহলও মনে করেন, দেশের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে চলমান প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে অবশ্যই ভাববার রয়েছে।
শাস্তি বা দ- মূলত আইন বাস্তবায়নের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেয়া হয়। শাস্তি প্রদানের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজকে অপরাধ মুক্ত রাখা। এ কারণে শাস্তির প্রকারভেদ রয়েছে। অপরাধকে লঘু ও গুরু বিবেচনাতেই শাস্তির বিধান করা হয়েছে। শাস্তির বিধান নিয়ে বর্তমান বিশ্বে গুরুতর মতভেদ রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ক্যাপিটাল সাজা হিসেবে যেখানে মৃত্যুদ-ের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে বিশ্বের অনেক দেশই মনে করে, কোনো অপরাধের সাজারই মৃত্যুদ- সঠিক নয়। সাজা হিসেবে মৃত্যুদ- বাতিলের জন্য আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বিশেষ করে ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বিশ্বব্যাপী জনমত সংগঠিত করছে। এ প্রসঙ্গে তাদের সুনির্দিষ্ট যুক্তি রয়েছে। তাদের যুক্তি যাই হোক, এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, যে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা যেহেতু সাক্ষী-প্রমাণ নির্ভর সে কারণে একে কতটা নির্ভুল বলা যাবে সে প্রসঙ্গ থেকেই যায়। মৃত্যুদ- কার্যকর হবার দীর্ঘসময় অতিবাহিত হবার পর গ্রীসের আদালত মনে করেছে, মনীষী সক্রেটিস নির্দোষ ছিলেন। এ কথা বোধ হয় নতুন করে বলার আর কোনো প্রয়োজন নেই যে এর ফলে মনীষী সক্রেটিসের বিচার প্রভাবান্বিত করার যে বিশ্ব জনমত ছিল তার স্বীকৃতি দেয়া হলো। এ প্রসঙ্গ এ কারণে উল্লেখ করা যে, হয়ত নতুন করে যারা এই মনীষীকে জানবেন তারা এটাও জানবেন যে তাকে প্রকৃতই অসত্য অভিযোগে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল। এ ধরনের অভিযোগ থেকে বর্তমানকালের আদালতগুলোও বাইরে নয়। সক্রেটিস নেই। তিনি জানার জন্য যে আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই অমিয়বাণী আজো আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি। এখনো যে নিজেকে জানার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়নি সে কথা স্মরণ করি। তিনি যে একজন মহান দার্শনিক এবং পথ প্রদর্শক ছিলেন সে কথা সে যুগে স্বীকৃত না হলেও বর্তমান যুগে এ নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। তিনি রাজরোষে পড়েছিলেন। এর কারণ যাই হোক, যুগ যুগ পর তাকে নির্দোষ প্রমাণের মধ্যদিয়ে গ্রীসের আদালত সেই অবিচারের পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। এখন সঙ্গত বিবেচনা থেকেই বলা যায়, এই মনীষী সক্রেটিস যদি সেদিন রাজরোষের শিকারে না হতেন তা হলে বিশ্ব কতটাই না উপকৃত হতে পারত ! অনুমানে কোনো ফয়সালা নেই। সে কারণেই এটা বলা যায়, যারা বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় গুরুশাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করছেন তাদের পক্ষে অন্তত এটুকু বলা যায়, প্রকৃতই সত্যাসত্য যাচাইয়ের অরো একটু সুযোগ উচিৎ। আইনমন্ত্রী যেভাবে যে ভাষায় সমাজকে দেখার চেষ্টা করেছেন সেদিকে আসার আগে এ বলে রাখা দরকার, সক্রেটিসের মৃত্যু কিন্তু সেই সমাজকে একাত্ববাদের দর্শন বিমুখ করতে পারেনি। তার সার্থক উত্তরাধিকাররা তার মতবাদকে তুলে ধরেছেন। এখনো তার মতাদর্শ টিকে রয়েছে।
অপরাধ প্রবণতা মানুষের চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্র। মানুষ তো ভুলের মধ্যেই রয়েছে। এই ভুলের নানা প্রকৃতি রয়েছে। কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ভ্রান্তি কিছুতেই ঘোচেনা। ...দ্বিতীয় ভ্রান্তির পাশে পরিবার জন্য চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠে।’ তিনি ভ্রান্তির যে সংজ্ঞাই দিয়ে থাকুন না কেন, কথাতো এটাই সত্যি যে, মানুষ বারবার ভুল করে। এই ভুল ধরিয়ে দেয়াই আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া যাতে সে ভুল না করে। এখানেই শাস্তি বা বিচার বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই বিচারকদের বিবেকের রায়কেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর্গুমেন্ট পাল্টা আর্গুমেন্ট যা কিছু আছে তা তো থাকছেই, একজন বিচারক তার বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থাকতে চান। এর দুটো কারণ। প্রধানত একজন বিচারক যিনি ধর্মে বিশ্বাসী তিনি তার ¯্রষ্টার কাছে সমর্পিত। তিনি যদি জ্ঞানত কোনো ভুল করেন তা হলে অবশ্যই তার জন্য তাকে তার ¯্রষ্টার কাছে কোনো না কোনোভাবে জবাবদিহি করতে হবে। এখন যদি কেউ এমন থেকে থাকেন যে, তিনি পরমসত্তায় বিশ্বাসী নন তা হলে তিনি প্রচলিত নিয়মের অর্থাৎ যে সংবিধানের বিধানমত বিচার করছেন তার প্রতি দায়বদ্ধ। প্রতিটি সংবিধানই মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের অনুবর্তী। সে বিবেচনায় তিনি যদি মানুষের কল্যাণচিন্তাকে অগ্রধিকার দেন তাহলে অবশ্যই তার রায় হবে মানুষের কল্যাণের নিমিত্তে। সে কারণই বোধকরি বলা হয়েছে, আইনের হাত লম্বা কিন্তু আদালত অন্ধ। সুতরাং একটি সমাজকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে আইন ও তার প্রয়োগের বিষয়টিকেই বড় করে দেখার বিষয়টি রয়েছে। তা সত্ত্বেও এটা বাংলদেশে দৃশ্যমান যে, যেসব অপরাধের প্রতিদিন বিচার হচ্ছে এমনকি গুরুসাজাও হচ্ছে আবার তা পুনরায় আরো অধিক বেগ নিয়ে ঘটছে। অন্য যে দিকটি রয়েছে, তা হলে এসব সাজা মানুষকে অপরাধ সংঘটনে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই গুরুতর ভাবনার। দেশে হয়ে যাওয়া দু’একটি গুরুতর অপরাধ ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা যেতে পারে। আলোচিত একটি হত্যাকা- ছিল সালেহা হত্যাকা-। প্রতিভাবান চিকিৎসক ডাঃ ইকবাল সালেহার সাথে পরিণয়ে আবদ্ধ হয়েছিলেন অনেকটা যৌতুকের মধ্যদিয়ে। কার্যত সেই যৌতুকের সূত্র ধরেই সমস্ত ঘটনা আবর্তিত হয়েছিল। উত্তেজনার মাথায় ডাঃ ইকবাল তার স্ত্রী সালেহাকে মাথায় আঘাত কারার পর যখন সে মারা যায় তারপর একে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে সে তার গলায় ছুড়ি চালিয়েছিল। আদালত এই ছুরি চালানোকেই গুরুতর অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে ইকবালের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান দিয়েছিল। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, সমাজ থেকে যৌতুক বা স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা কি বন্ধ হয়েছে? সোজা-সাপটা জবাব দেয়া যায় এর অবসান তো হইনি বরং আরো বাড়ছে। দেশে রাষ্ট্রে যৌতুকবিরোধী আইন রয়েছে। এই আইনে বহু লোকের বিচারও হচ্ছে, তবু মানুষ এ থেকে ফিরছে না কেন। সে বিষয়টি নিয়ে কি আমরা কেউ ভেবে দেখেছি? সমাজ-সংস্কৃতির শেকড়ে একশ্রেণির মানুষ কেন যৌতুককে গ্রহণ করে আছে অথবা এটি যে ঘৃণ্য সে কথাও হয়ত তাদের জানা নেই। কেবল অশিক্ষিত শ্রেণির মধ্যেই যৌতুক রয়েছে তা নয়, শিক্ষিত উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতিক, পেশাজীবী সকলের মধ্যেই এর মারত্মক সংক্রমণ রয়েছে। এর কারণ আমরা অনুসন্ধান না করে অথবা কোনো উদাহরণ সৃষ্টি না করেই সমজের একেবারের নিম্নশ্রেণির কাউকে কাউকে সাজা দিয়ে দিয়ে আমরা সমাজকে যৌতুকবিহীন করতে চাচ্ছি। এটা কি আদৌ সম্ভব? কোন বিবেচনাতেই নয়। ব্যাপারটি শুধু যৌতুক নিয়েই নয়, সমাজে খুন, হত্যা, ব্যভিচারের বিচার হচ্ছে। বাস্তবে এসব অপরাধ কমছে না বরং দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। এর মূলে যে সংস্কৃতি তা রোধ করা না গেলে কেবলমাত্র সাজার বিধান বা সাজা কার্যকর করে, নিরোধ করা অসম্ভব। এসব তো কার্যত সামাজিক অপরাধ। এক হিসেবে এগুলো বর্তমন সময়ের গর্হিত অপরাধের বিবেচনায় নস্যি।
আদালতের বিবেচনায় সর্বোচ্চ অপরাধ হচ্ছে সংবিধান লঙ্ঘন। সংবিধানের আলোকে আদালত জনস্বার্থ নিশ্চিত করে। এই প্রেক্ষিতে যদি আইনমন্ত্রীর আলোচনাকে নিয়ে আসা যায় তা হলে বোধকরি আইনের কার্যকারিতা এবং এর অকার্যকারিতার প্রসঙ্গটিকে খতিয়ে দেখা যায়। সংবিধান মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি উচ্চতর আদালত থেকে দেয়া ইনডিমিনিটি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে কিছু কথা বলা আছে। বলা হয়েছে, এ নিয়ে ইনডিমিনিটি দেয়া যায় না। দায় মুক্তির ব্যাপারটি অবশ্যই গভীর বিবেচনার দাবি রাখে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের রাজনীতিকরা কি এ ব্যাপারটি অনুভব করছেন? প্রতিদিন মানুষ হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে। এর বাইরেও গুরুতর বিষয় হচ্ছে, সংবিধান লঙ্ঘন। অনেক দূরে না গিয়ে ২০০৭ সালের আলোচনাই করা যাক। সে সময়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনারা একযোগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে যে বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল তার সূত্র ধরেই দেশে এক অনির্বাচিত সরকার গেড়ে বসে। উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই সেই সরকারকে নির্বাচন দিতে হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় থাকার সময়ে ওই সরকার দেশের প্রধান রাজনীতিকদের গ্রেপ্তার করে। দেশের বহু ব্যবসায়ীর টাকা মেরে দেয় । তাদের দুঃশাসনে দেশের বহু রাজনীতিকের মৃত্যু হয়। বহুজনের জীবন বিপন্ন হয়। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে। সংবিধান বহির্ভূত ক্ষমতায়ন এবং সে সময়ের অনাচারের জন্য কোনো বিচার কিন্তু হয়নি। আবার ওই সরকার একশ্রেণির রাজনীতিকের কাছে মৌখিক দায় মুক্তি লাভ করে- যার পরিণতি ঐ সময়ে বিচার না হওয়া। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রভাব সমাজদেহে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। কোথাও কিছু হোক বা না হোক সাধারণ মানুষ এটা দেখছে এবং বুঝছে যে, আইন সবার জন্য এক নয়। সংবিধান লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধের কোনো সাজা না মোটেও সমর্থনীয় হতে পারে না, একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনে বহুল আলোচিত র্যাংগস ভবন ভেঙে দেয়া হয়েছে তখন অথচ এই ভবনের যে অংশ বৈধভাবে নির্মিত হয়েছে অর্থাৎ যারা এই অনুমতি দিয়েছিল তাদের কিন্তু কিছুই হয়নি। সেই সরকারের করা অনেক অনিয়মের একটি গাড়ির ফিটনেসের সময় আয়কর নেয়া। এখনো সেটি নেয়া হচ্ছে। ওই সরকারের আমলে দায়ের করা মামলা এখনো বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চললেও আওয়ামী লীগরা মুক্ত হয়েছেন। আরো কাছের কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। এখন সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের অফিস বসানো হয়েছে। এর লক্ষ্য সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিধান করা। এতে খানিকটা উপকারও হচ্ছে। অনেকেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে সাহস পাচ্ছে না। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। সড়কে দেখা যায়, এমন অনেকেই রয়েছে যাদের বরং ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তোয়াক্কা করে। ফলে দেখা যায়, অনিয়মের সাজা সমভাবে প্রযোজ্য নয়। কিছুদিন আগে ট্রাফিক পুলিশের রিভিউতে দেখা গেছে, ভিআইপিরাই রাস্তায় আইন ভাঙ্গছেন বেশি। এখনো এটি প্রতিদিনের চিত্র যে সাধারণ মানুষ যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক সিগনালে নাকাল তখন ভিআইপি নামে নানাজনে উল্টো দিক দিয়ে চলে যাচ্ছেন। তা হলে আইন সাধারণ মানুষ কেন মানবে, সে বিষয়টি কিন্তু অবশ্যই ভাববার রয়েছে।
কথা এর বাইরেও রয়েছে। একটি সমাজকে সভ্য করতেই আইন। প্রকৃত অর্থে আইন হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত। মানুষ সেই আইনের নানা সংযোজন-সংশোধন করে প্রয়োগ করছে। করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। আবার তা পরিবর্তন করছে। আইনের একটি বড় বিষয় হচ্ছে জনগণের মান্য করার বিষয়টি। যে আইন মানুষ মান্য করে তার জন্য কোনো বাহিনীর প্রয়োজন হয় না। আইন প্রয়োগকারী বাহিনী দিয়ে কখনো আইন মান্য করানো সম্ভব নয়। এটা আইনের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। এ কারণেই যখন আইন অমান্য আন্দোলন হয় তখন তা রাজনৈতিক রূপ নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বলা যায়, আইন মান্য করা বিষয়টি এক রকম নয়। সে বিবেচনায় আইনমন্ত্রী যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তা নিয়ে ব্যাপকভাবে ভাববার রয়েছে। কেন আইন মানুষ মানছে না অথবা সাজার পরও কেন অপরাধ দমন হচ্ছে না সেটা ভালো করে খতিয়ে দেখা দরকার। বলা হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র রয়েছে অথচ বিরোধীদল বিএনপি বা দেশে যারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে তাদের সভা করার অনুমতি পর্যন্ত দেয়া হয় না। মানুষ দেখছে যে, জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি করিয়ে একদল জনসভা করছে আরেকদল বারবার ধর্ণা দিয়েও অনুমতি পাচ্ছে না। বৈষম্যমূলক আইন কখনই মানুষের মনে আশার সঞ্চার করতে পারে না। তাকে আরো আশাহত করে। এটাই হচ্ছে মূল কথা। আজকের বিবেচনায় প্রকৃতই আইনের প্রয়োগিক বিষয় নিয়ে ভাবতে হলে এর জনকল্যাণের বিষয়টি ভাবতে হবে। মানুষকে শৃঙ্খলিত করার বিধি-বিধান মুক্তির পথ হতে পারে না। একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরে যেসব অনিয়ম স্থান করে নিয়েছে তার বিষফল এখন নানা ক্ষেত্রে ফলতে শুরু করেছে। আইনের ফল না পাওয়ার যে বিষয়টি তার মূলে রয়েছে আইনের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি। একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করতে চাই। যারা আল্লাহকে ভয় করেন তারা শ্রেষ্ঠ মানুষ। এই মানুষগুলো দুনিয়ার সমাজে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন না বরং শান্তি প্রতিষ্ঠায় রত। দেশের আলেম সমাজ বলে, রাসূলের সুন্নত মোতাবেক চলাচল করুন। আর কারো মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি থাকলে কোনো কোনো পুলিশ তাকেই বেশি সন্দেহ করে। সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়ার বিষফল এটি। মানুষকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে হলে যারা রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক তাদেরও মূল্যবোধের অনুবর্তী হতে হবে। জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে হলে নিজেদের সততা ও আস্থাশীলতার প্রমাণ রাখতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।