Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জুয়েল মাহমুদ : প্রতিষ্ঠার প্রায় আড়াই দশক পর আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। ১৭ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবর্তন উপলক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এবং স্নাতকদের ডিগ্রি প্রদান করবেন প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। গত ৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ১৯৯৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে উত্তীর্ণ স্নাতকদের মধ্যে চার হাজার ৯৩২ জন নিবন্ধনকৃত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করবেন, যাদের মধ্যে তিন হাজার ১৩৭ জন ছাত্রী এবং এক হাজার ৭৯৫ জন ছাত্র। অনুষ্ঠানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য আটজন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। এদিকে সমাবর্তন উপলক্ষে ডকুমেন্টারি তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাস ও বিভাগীয় শহরের ছয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরে এই প্রথম সমাবর্তন আয়োজন করায় এটিকে স্মরণীয় করে রাখতে গত ১২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা শহর ও ছয়টি বিভাগীয় শহরে একই সময় অভিন্ন ব্যানারে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’র আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রাটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজের বিপুলসংখ্যক ছাত্র-শিক্ষক-কলেজের প্রিন্সিপাল ও কর্মকর্তাদের এক ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি-অনিয়ম-অবৈধ নিয়োগ, দুর্বিষহ সেশনজট ইত্যাদির ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকে থাকাই ছিল দায়। বর্তমানে সে অবস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনেকটা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হয়েছে। সেশনজট আর নেই বললেই চলে। ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এর প্রথম সমাবর্তন। এ সাফল্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন।’ ইউসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ বছরে কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান প্রশাসন ১৭ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো সমাবর্তন আয়োজন করছে। এর মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দাঁড়াবে এবং আশা করি, এরপর থেকে নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। শোভাযাত্রায় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, ট্রেজারার অধ্যাপক নোমান উর রশীদ, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, ডিন অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, ড. মোবাশ্বেরা খানম, সিন্ডিকেট সদস্য ড. মশিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সমাবর্তন ঘিরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ লক্ষ করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও তাদের দাবি পূরণ হওয়ায় তারা আনন্দিত।
কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক তৈরির প্রত্যয় নিয়ে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও কোনো সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল বলে অনেক শিক্ষার্থী জানান। তারা আরও দাবি করেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও যেন নিয়মিত সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।
এদিকে কর্মপরিসর ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে বর্তমানে এটি দেশের সর্ববৃহৎ এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সারা দেশে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কলেজের পাঠদান-প্রক্রিয়া ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ৫০০ কলেজে পড়ানো হচ্ছে অনার্স কোর্স। শিক্ষার্থী প্রায় ১৫ লাখ। কোনোরকম সরকারি অনুদান কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থ বরাদ্দ ছাড়াই কেবল শিক্ষার্থীদের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে এর সব কার্যক্রম। এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
গত ৭ আগস্ট ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন-ক্যাম্পাস বিশেষ মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালুর মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নবযাত্রার প্রথম পর্যায়ে পা রাখল। একাডেমিক কার্যক্রমে এখানে যুক্ত হলো নতুন ভুবন ও উদ্যম। প্রতিষ্ঠা পেল প্রাণময়তা। বিশেষ করে কলেজের শিক্ষকদের থিসিসভিত্তিক মাস্টার্স কোর্স সম্পাদনের মধ্যদিয়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ শিক্ষক সমাজ তৈরি করাই এর লক্ষ্য। পাশাপাশি যারা শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করতে চান, তাদেরও প্রশিক্ষিত ও সক্ষম ভবিষ্যতের মানুষ গড়ার কারিগর করে তোলা এ কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য। এটি সম্পূর্ণভাবে মৌলিক গবেষণাভিত্তিক ডিগ্রি। এসব গবেষণা জাতীয় উন্নয়নে এবং রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। সরকারিভাবে শিক্ষকদের কিছু প্রশিক্ষণ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও বিশেষায়িত এ শিক্ষক তৈরির কার্যক্রম দেশে এটাই প্রথম। কাজেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান কর্তৃপক্ষ জাতীয় উন্নয়নে এবং কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তার জন্য সব সচেতন মহল থেকে সাধুবাদ পাওয়ার দাবি রাখে।
সমাবর্তন প্রসঙ্গে মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক মো. গোলাম ওয়াদুদ বলেন, সমাবর্তন না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যতাযথ মূল্যায়ন হয় না। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন আয়োজন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে তিনি সাধুবাদ জানান। একান্ত আলাপচারিতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদের দূরদর্শিতা ও যোগ্য নেতৃত্বে; বিশিষ্ট সমাজচিন্তক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. আসলাম ভূঁইয়া, তরুণ প্রযুক্তিবিদ প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর, প্রখ্যাত শিক্ষাপ্রশাসক ট্রেজারার প্রফেসর মো. নোমান উর রশীদ, স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ডিন ড. সায়েদা বানু, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেনের আন্তরিক ও সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টায় এবং সকল পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অল্প সময়ের মধ্যেই লিডিং পজিসনে আসবে। ইতোমধ্যে সেশন জট দুর হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। সমাবর্তনের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। স্বপ্ন-পরিসরের যে শুভসূচনা হলো, তা আরো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রসারিত হবে। যোগ্য নেতৃত্বের মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নের পথে পা বাড়াল এ বিশ্ববিদ্যালয়। ভবিষ্যতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসটি গবেষণাভিত্তিক ক্যাম্পাসে রূপান্তর করা হবে বলে আশাবাদী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ