রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : প্রায় ২ যুগ ধরে লক্কর-ঝক্কর পুরোনো ট্রেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের যাত্রীরা। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি মাত্র লোকাল ট্রেন বরাদ্দ থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ রেল লাইনে ধীর গতিতে আসা-যাওয়া করছে সে ট্রেনটি। তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেল পথের টগরাইহাট রেল স্টেশনের কাছে জোতগোবরধন এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার রেল সেতুর ওপর রেল লাইন ঠিক রাখার জন্য কাঠের স্লিপারে বাঁশের ফালি লাগানো হয়েছে। বাঁশের ফালি লাগানো হয়েছে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সংলগ্ন মুক্তারাম ত্রিমোহনী এলাকায় একটি বক্সকালভার্টের ওপর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনের চালকরা বরাবরই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ লাইনে ট্রেন নিয়ে আসতে চায় না বলেই রেল যোগাযোগে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ট্রেন যোগাযোগ সচল রাখেতে তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেল পথের বিভিন্ন স্থানে রেল সেতুর ওপর কাঠের স্লিপার বাঁশ দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। রেল লাইনের উভয় দিকে গাছের সরু ডাল দিয়ে ঠেস দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এই উপায়ে রেল লাইন সচল রাখা হয়েছে বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ। তবে তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রেল পথ সংস্কার কাজ চলছে বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে কুড়িগ্রামের রমনা থেকে ঢাকা ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর ট্রেন চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি নামে একটি সংগঠন। তাদের দাবির মুখে একটি ট্রেন ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে তিস্তা থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা স্টেশন পর্যন্ত আসা-যাওয়া করছে। এমন ট্রেনে উঠেন না বেশির ভাগ যাত্রী। এ ট্রেনে শুধু দিনমজুর শ্রেণির মানুষ টাকা ছাড়াই যাতায়াতের জন্য উঠে থাকেন। গণকমিটির দাবি তিস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত রেল পথ সংস্কার করার। অন্যদিকে কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার রেল লাইনে ৭টি স্টেশনের অবস্থা একেবারেই নাজুক। এ স্টেশনগুলো কোন রকমে সংস্কার করা হলেও অনেক স্টেশনে নেই টিকিট কাউন্টার। পাশাপাশি ট্রেনে চেকার না থাকায় টিকিট কেটে ট্রেনে ওঠেন না বেশির ভাগ যাত্রী। কুড়িগ্রাম রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ নলেজ জানান, আমাদের এ গণকমিটির দীর্ঘদিন ধরে রমনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর ট্রেন চালু, চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ প্রস্তাবিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতুতে রেল লাইন সংযোগোরের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের দাবির মুখে রেলের মহাপরিদর্শক আকতারুজ্জামান গত ৫ ডিসেম্বর রেল পথ পরিদর্শনে আসেন। তিনি রেল পথ সংস্কারসহ আন্তনগর ট্রেন চালুর বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা দাবি করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত রেল পথ সংস্কারসহ আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হোক। এতে করে পিছিয়ে পড়া এ জনপদের মানুষের যাতায়াতের পথ সুগম হবে। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে সর্বক্ষেত্রে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৫৭ কিলোমিটার রেল লাইনের বেশির ভাগ স্লিপার নষ্ট এবং রেল লাইন অনেক পুরোনো ও ব্যবহার অনুপযোগী। এই রেল লাইনের সংযোগ স্থলের অনেক জায়গায় প্রয়োজনীয় নাট-বল্টুও নেই। এ অবস্থায় রেল লাইনে বাঁশ ও গাছের ডাল ব্যবহার করায় ট্রেন যোগাযোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রেনের চালক জানান, তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার রেল লাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এ রেল পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন নিয়ে আসতে চাই না। কিন্তু উপরের নির্দেশে আসতে হচ্ছে। রেল সেতুতে বাঁশের ফালি ও লাইনে গাছের ডাল লাগোনো সর্ম্পকে জানতে চাইলে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, রেল লাইনে গাছের ডাল ও সেতুতে বাঁশ ব্যবহার করায় কোন সমস্য নেই। আমরা সাধারণত বড় বা মেজর সেতুতে কাঠের স্লিপার যাতে স্থানচ্যুত না হয় সেজন্য লোহারপাত ব্যবহার করি। কিন্তু তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেল পথের সেতুগুলো মাইনর সেতু হওয়ায় সেগুলোতে বাঁশের ফালি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়া না যাওয়ায় আমরা স্থানীয়ভাবে এটা করেছি। তিনি রেল লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কয়েক বছর যাবৎ এই পথে ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করছে। রেল লাইন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে কয়েক দফায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি লেখা হলেও কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এজন্য রেল লাইন সোজা রাখার জন্য গাছের ডাল দিয়ে ঠেস দেয়া হয়েছে। তবে রেল পথ সংস্কার হলে কোন সমস্যা থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।