পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : নাগরিক সেবার মান বাড়াতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ১৬টি ইউনিয়নকে যুক্ত করা হয়েছিল। দীর্ঘ ছয় মাসেও ডিসিসির সাথে যুক্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়নি। বরং ইউনিয়ন না সিটি করপোরেশন এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের গ্যাড়াকলে পদে পদে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার ১৬ ইউনিয়নের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। ভুক্তভোগীদের মতে, ইউনিয়ন থাকাকালে চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সামান্যতম হলেও দায়বদ্ধতা ছিল। এখন তারা দায় এড়িয়ে দু’হাতে টাকা কামানোর ধান্ধায় ব্যস্ত। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি। গত বছরের ৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করা হয়। ২৮ জুন সরকার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় ঢাকা মহানগরের আয়তন ১২৯ বর্গকিলোমিটারের থেকে বেড়ে হয় ২৭০ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৬ ইউনিয়নের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ। কিন্তু বাস্তবে এ সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাথে যুক্ত হওয়া ১৬ ইউনিয়নের ৩৬টি ওয়ার্ডের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ইউনিয়নগুলো আছে আগের মতোই। বহাল আছেন আগের জনপ্রতিনিধিরাই। যদিও অনেক আগেই তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটিতে অন্তর্ভূক্তির অপেক্ষায় থাকা এই ইউনিয়নগুলোর সমস্যা আছে আগের মতোই। বরং আগে যেমন টুকটাক রাস্তাঘাটের সংস্কার হতো, এখন তাও হয় না। বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে রাস্তাগুলো। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে কোনো কোনো ইউনিয়নে। কোথাও কোথাও রাস্তাঘাট এখনো অন্ধকারে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, বিদায়ী চেয়ারম্যানরা এখন নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। জনগণের খবর তারা আর রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না। বাড্ডা ইউনিয়নের বাসিন্দা জুনায়েদ হোসেন বলেন, বাড্ডার প্রায় সবগুলো রাস্তাই খানাখন্দে ভরা, কর্দমাক্ত। বর্ষাকালে থৈ থৈ করে পানি। হাঁটু সমান কাদাপানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়। বর্ষা মৌসুম সামনে। সেই ভোগান্তির কথা মনে করলে এখনই দম বন্ধ হয়ে আসে। বেরাইদ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, বর্ষার সময় এ ইউনিয়নের কয়েকটি মহল্লার মানুষের একমাত্র ভরসা নৌকা যোগাযোগ। নানা সমস্যার বেরাইদ ইউনিয়নের প্রধান কয়েকটি রাস্তা ব্যতিত অন্য রাস্তাগুলো খুবই সরু। একত্রে দু’টি মাইক্রোবাস-টেম্পু-সিএনজি চলাচল করতে পারে না। এমনও রাস্তা রয়েছে যে রাস্তায় একত্রে দু’টি রিকশাও চলতে পারে না। ড্রেনেজ লাইন থাকলেও সেসব ড্রেনে সরাসরি পয়ঃবর্জ্য সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এলাকার নদী-খাল-ডোবা-নালায় পয়ঃবর্জ্যরে সংযোগ রয়েছে, যা এলাকার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দুষিত করছে। দক্ষিণখানের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, এখানকার রাস্তাগুলো বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই। পাকা সড়কগুলোর ৯০ ভাগেরই পিচঢালাই উঠে গেছে। ইট-খোয়া উঠে বেরিয়ে এসেছে মাটি। কাঁচা এবং পাকা সব রাস্তার চিত্র এখন একই রকম। উত্তরখানের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ লাইনে ছাড়া রাস্তা তৈরি করায় এই এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে যায়। পানিবদ্ধ রাস্তায় ভারি যানবাহন চলাচল করায় সড়কগুলোয় ফিটনেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইট-খোয়া, বালু-পাথর উঠে রাস্তাগুলোতেয় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। ওই সব রাস্তায় চলাচল করা এলাকাবাসীর জন্য খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাটারা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশান-বারিধারা সংলগ্ন ভাটারা এলাকা এখনো চরম অবহেলিত। কিছু এলাকায় এখনো অজোপাড়া গ্রামের চিত্র। রয়েছে কাঁচা সড়ক, গড়ে উঠেনি ড্রেনেজ সিস্টেম, দখল-ভরাট হয়ে যাচ্ছে সড়ক-ফুটপাত। সামান্য বৃষ্টিতে ভাটারা ইউনিয়নের রাস্তাগুলোতে পানি জমে থাকে। অভিজাত গুলশান-বারিধারার খুবই কাছে অবস্থিত সাতারকুল ইউনিয়নে নাগরিক সেবার অবস্থা মফস্বল জেলার যে কোনো ইউনিয়েন চেয়ে খারাপ। এলাকাবাসীর মতে, রাক্ষসের মতো ভয়ালরুপে সাতারকুলে আবির্ভূত হয়েছে কয়েকটি আবাসান কোম্পানি। তারা গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় কৃষিজমি, জলাধার, ডোবা-নালা ভরাট করে প্রায় জলাধার শূন্য করে ফেলেছেন। ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম তিনটি খাল প্রায় গিলে ফেলেছে দখলদাররা। ডুমনি ইউনিয়নের এক বাসিন্দা জানান, ডুমনির সব ধরনের সড়কেরই এখন বেহাল দশা। বালু নদী বেষ্টিত ডুমনি ইউনিয়নে এখনো পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সিস্টেম গড়ে উঠেনি। পৌঁছেনি গ্যাস ও পানি সরবরাহ লাইন। ২০ ভাগ এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে এখনো বঞ্চিত।
দনিয়া ইউনিয়নে গত বছর কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হলেও ২০ ভাগ রাস্তা এখনো কাঁচা। ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা। দনিয়া গোয়ালবাড়ি মোড়ে ড্রেনের পানি উপচে রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই রাস্তার উপর আনোয়ার উলুম মসজিদের মুসল্লিরা ড্রেনের নোংরা পানি পেরিয়ে নামাজ আদায় করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ রাস্তাটি সংস্কার না করা পর্যন্ত মুসল্লিদের ভোগান্তি দূর হবে না। ভুক্তভোগিরা জানান, বর্ষার মৌসুমে পানির নিচে থাকে দনিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা। অলিগলি-প্রধান সড়ক-ফুটপাত এবং বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে যায়। শ্যামপুরের চিত্র খুবই নাজুক। নূন্যতম নাগরিক সেবাও পাচ্ছেন না ওই এলাকার বাসিন্দারা। পাকা-আধপাকা সড়কগুলোর ইট-পাথর-বালু উঠে মাটি বেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্তও তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো সড়ক এখনো কর্দমাক্ত অবস্থায় রয়েছে। এসব সড়কে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে। সারুলিয়ার ইউনিয়নের রাস্তগুলো আগের মতোই ভাঙাচোরা। আবর্জনার ছড়াছড়ি যত্রতত্র। রাস্তায় বাতি নেই। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নালাগুলো হয়ে যাচ্ছে ভরাট। সরকারি খাসজমি-সড়ক-খাল দখল করে গড়ে উঠছে স্থাপনা। মাতুয়াইলে আবর্জনায় ভরাট হচ্ছে খাল-ডোবা-নালা। দখলবাজরা সড়ক-খাল এবং সরকারি খাসজমি দখল করে গড়ে তুলছে অবৈধ স্থাপনা। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দুর্বল অবকাঠামোর ওপর গড়ে উঠছে অট্টালিকা। ফ্রি স্টাইলে এসব অনিয়ম চললেও এসব দেখার যেন, কেউই নেই। সড়কের উপর, ডোবা-নালায় যত্রতত্র আবর্জনা ফেলছে এলাকাবাসী। মান্ডা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাকারিয়া বলেন, এখানকার রাস্তাগুলো অত্যন্ত সরু। একটি-দুটি ছাড়া সবগুলোর অবস্থা একই ধরনের। জনগণ নূন্যতম সেবা থেকেও বঞ্চিত। খিলগাঁও থানাধীন নাসিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দারা নূন্যতম নাগরিক সেবা থেকেও বঞ্চিত। ওই এলাকার শতভাগ সড়কেরই বেহাল দশা। বছরের পর বছর এই অবস্থা চলমান থাকলেও ওই এলাকার সড়ক সংস্কারে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো গরজ নেই। গ্যাস-পানি-বিদ্যুত সংযোগ সর্বত্র পৌঁছেনি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ, যাগাযোগ, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, মশক নিধনসহ সব ধরনের মৌলিক নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত ডেমরার বাসিন্দারা। ইউনিয়নের ৭০ ভাগ সড়ক এখনও কাঁচা। সুবজাবাগ থানার অন্তর্গত দক্ষিণগাঁও ইউনিয়ন রাজধানীর পেটের মধ্যে হলেও এখানকার বাসিন্দারা নূন্যতম নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।