রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে : বোরো চাষের জন্য বর্ষার জমা পানি কলারোয়ার ক্ষেত্রপাড়া খাল দিয়ে কপোতাক্ষ নদে নিষ্কাশন হওয়ায় সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত কালভার্ট ও দু’ভেন্টের স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে এক কাজ শুরু করা না গেলে এক কাজের বরাদ্দকৃত টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরৎ পাঠানো হবে বলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে হুঁশিয়ারি দেওয়ায় এ নির্মাণ কাজে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সাতক্ষীরা শাখা সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাড়া খালের উপর একটি কালভার্ট, একটি দু’ভেন্টের স্লুইস গেট ও ক্ষেত্রপাড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির ভবন নির্মাণের জন্য এক কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়। এ জন্য গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে ১৭ মে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এএইচ ট্রেডিং কর্পোরেশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ক্ষেত্রপাড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ও জয়নগর ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা, ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম, এমদাদুল হকসহ স্থানীয়রা জানান, সংযোগ খাল ক্ষেত্রপাড়ার মধ্যদিয়ে ক্ষেত্রপাড়া, গাজনা, বসন্তপুর, রামকৃষ্ণপুরসহ ছয়টি গ্রামের চারটি বিলের দু’হাজার একরের বেশি জমিতে আটকে থাকা বর্ষার পানি কপোতক্ষ নদে পতিত হয়। ২০০৯ সাল থেকে মৃতপ্রায় কপোতাক্ষে পানি টানতে না পারায় গ্রাম ও বিলগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে বোরো মৌমুসে সেচ দিয়ে চাষ করতে পারলে সেটাই হয় এলাকাবাসীর একমাত্র খাদ্যের অবলম্বন। তাই স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কপোতাক্ষ খননের পাশাপাশি ক্ষেত্রপাড়া খালের উপর একটি কালভার্ট, একটি স্লুইস গেট নির্মাণ ছিল এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। তারা আরো জানান, ক্ষেত্রপাড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির পরামর্শ মতো সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পশ্চিমপাড়ায় ক্ষেত্রপাড়া খালের উপর কালভার্ট নির্মাণের জন্য আড়াআড়ি বাঁধ দেয়া হয়। খালের তলদেশে ড্রেজিং শেষ না হতেই বর্ষা শুরু হয়ে যায়। জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচতে এলাকাবাসী ক্ষেত্রপাড়া খালের উপর থেকে আড়াআড়ি বাঁধ অপসারণ করে দেয়। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পশ্চিমপাড়ায় ক্ষেত্রপাড়া খালের উপর আবারো আড়াআড়ি বাঁধ দেয়া হয়। বোরো চাষের সুবিধার্থে কৃষক ও মাছ চাষিদের অনুরোধে কয়েকটি বিলে সৃষ্ট মাছের ঘেরের পানি কপোতাক্ষে ফেলার জন্য বাঁধের পাশ দিয়ে পানি সরানোর জন্য বড় আকারের নর্দমা তৈরি করা হয়। এমতাবস্থায় বাঁধের ভেতরে পানি ভরে যাওয়ায় কালভার্টের জন্য বেস ঢালাই এর কাজ করা সম্ভব হয়নি। তারা অভিযোগ করে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কালভার্ট, স্লুইস গেট ও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির ভবন নির্মাণের ব্যাপারে এলাকায় এসে কোনো প্রকার আলোচনা করেননি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদুর রহমান। উপরন্তু পানি নিষ্কাশন করে বিলে বোরো ধান চাষের সময় চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণ কাজ শুরু না করলে বরাদ্দকৃত টাকা ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে চিঠি দেয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএইচ ট্রেডিং কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী শফিউর রহমান জানান, ক্ষেত্রপাড়া খালের উপর চলতি বছরের জুনের মধ্যে কালভার্ট, স্লুইস গেট ও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির ভবন নির্মাণে জটিলতা দূরীকরণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সাতক্ষীরার প্রধান প্রকৌশলীর প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ায় গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সহায়তা কামনা করে একটি চিঠি দেন। জেলা প্রশাসকের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা এমদাদুল হক শেখ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে অনুযায়ী গত ৬ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় তিনি ক্ষেত্রপাড়া পশ্চিমপাড়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে ক্ষেত্রপাড়া পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জয়দেব সাহা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সাপেক্ষে বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধ কেটে দিয়ে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পানি সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ৬ জানুয়ারি বিকেল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বাবুসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সহায়তায় আড়াআড়ি বাঁধের দু’পাশ কেটে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম করা হয়েছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেই যথাযথভাবে বাঁধ দিয়ে জমাকৃত পলি মাটি কেটে কালভার্টের জন্য বেস ঢালাই দেয়া হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী কর্মস্থলে মজুত রাখার পাশাপাশি দেখভালের জন্য জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। সমিতির জন্য জায়গা বরাদ্দ পেলে সকলের সহায়তা নিয়ে নির্ধারিত সময় আগামী জুন মাসের মধ্যে তিনি প্রকল্পের সকল কাজ শেষ করে দেবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরর সাতক্ষীরা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদুর রহমান বলেন, ক্ষেত্রপাড়া খালের উপর নির্ধারিত কালভার্ট ও স্লুইস গেট নির্মাণের সুবিধার্থে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ না করলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যদি খালের উপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে দিনরাত নির্মাণ কাজ করে তা হলে দ্রুত কাজ শেষ হওয়ার পাশাপাশি জনদুর্ভোগ কমবে। বরাদ্দকৃত টাকা ফেরৎ রোধে প্রকল্পের মেয়াদ জুন মাস পর্যন্ত হলেও ঠিকাদারকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাজ দেখিয়ে বর্ষা মৌসুমের আগে মার্চের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।