Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তৈরি হবে শিল্পজাত পণ্য ও উচ্চমানের কাপড়

আনারস পাতা ও কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স. ম. জাহাঙ্গীর আলম, ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) থেকে : পর্তুগিজ শব্দ ‘এনান্যাস’ থেকে আনারস শব্দের উৎপত্তি। বৈজ্ঞানিক নাম এনান্যাস সেটাইভাস। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ফল হলেও আনারসের আদিনিবাস ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে। আনারস স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। যারা একবার মুখে দিয়েছেন নাম শুনলেই তাদের জিহ্বায় পানি আসবেই। রেড ইন্ডিয়ানদের ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম উপকরণ রসালো এই আনারস। ১৯৪২ সালে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ইদিলপুরের গারো মহিলা দয়াময়ী সাংমা ওরফে মিজিবুড়ি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গাছোয়াপাড়া গ্রাম থেকে প্রথম আনারস চারা নিয়ে আসেন। মধুপুরের ইদিলপুরের উঁচু জমিতে আনারস আবাদ শুরু হয়। সেই  থেকে বিস্তৃত হয়ে বর্তমানে মধুপুর ছাড়াও গড় এলাকার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়ীয়া ও ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার একরে আনারস আবাদ হয়। এ ছাড়া এ গড়ে প্রায় ১৫ হাজার একরে কলার আবাদ হয়। বাগান হতে ফল সংগ্রহের পর বিপুল পরিমাণ আনারস, কলার পাতা ও কা- বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয়। গো-খাদ্য হিসেবে পাতার কিছু ব্যবহার থাকলেও বস্তুত বাকি অংশ কোনো কাজে আসে না। তবে এই ফলজাত বর্জ্য নিয়ে এখন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে। প্রযুক্তিগতভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্পদে পরিণত করার মধ্য দিয়ে সে সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হচ্ছে। এর উদ্ভাবন ও বিকাশের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের পথও খুলে যেতে পারে। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’ সম্প্রতি ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ ও ‘শিল্প মন্ত্রণালয়’-এর আর্থিক সহায়তায় ‘বাংলাদেশ ইন্সস্পায়ার্ড’ নামক প্রকল্প তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে। মধুপুর উপজেলার গড় এলাকাকে এর ফোকাস পয়েন্ট হিসেবে বাছাই করেছে। এ এলাকার উৎপাদিত আনারসের পাতা ও কলাগাছের বর্জ্য হতে আঁশ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত এবং উৎপাদিত আঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কৌশল, দক্ষতা অর্জন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নসহ পণ্য বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা-জ্ঞান লাভ এ প্রশিক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য। “কৃষিজ বর্জ্য হতে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক আঁশ থেকে উৎপন্ন পণ্যের মান উন্নয়নের মাধ্যমে নারীদের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন” নামের এ প্রকল্প বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিডব্লিউসিসিআই) পরিচালনা করছে। মধুপুর উপজেলার জলছত্র কার্যালয়ের উৎপাদন কেন্দ্রে নির্বাচিত ৫০০ গ্রামীণ নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণকালীন বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্য যেমন হাত ব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ, গহনার বাক্স, ওয়াল ম্যাট, টিস্যু বক্স, কলমদানী, হ্যাট, নারীদের বিভিন্ন ধরনের অলংকার ইত্যাদি তৈরি করছে। এছাড়া এ জাতীয় কৃষিজ বর্জ্য থেকে প্রাকৃতিক আঁশ ও সুতা উৎপাদন করে পরিবেশ সম্মত পোশাক ও হস্তশিল্প উৎপাদনের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, মূলত আনারস ও কলাগাছের আঁশ প্রকল্পের কাঁচা পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মধুপুর গড়ে আনারসের পাশাপাশি প্রায় ১৫ হাজার একরে কলার বাণিজ্যিক আবাদ হয়। আনারস ও কলার বর্জ্য থেকে সুতা ও কাপড় তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আঁশ উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা গেলে বিদেশ থেকে সুতা আমদানি হ্রাস পাবে। গার্মেন্ট খাতে নতুন পোশাক তৈরিতে অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে। এমনকি এসব বর্জ্য থেকে জৈবিক সার তৈরি করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করা যাবে। প্রকল্পের মধুপুর ইউনিট ম্যানেজার এস এম আজাদ রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এটি শীঘ্রই সফল প্রকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। মধুপুর ছাড়াও নরসিংদী ও গাইবান্ধায় প্রায় দুই হাজার নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু হস্তশিল্প সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও বিপণন সহজতর হলে পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন এই খাতের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ