হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মুনশী আবদুল মাননান : ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীন তার দেয়া বাঁধের কার্যক্রম চালু করায় ভারতের উদ্বেগ ও বিচলনের অবধি নেই। পিটিআইয়ের খবর মোতাবেক, ভারতীয় সীমান্ত থেকে ওই বাঁধের অবস্থান সাড়ে পাঁচশ কিলোমিটার দূরে। ভারত এই ভেবে শঙ্কিত যে, প্রকল্পটি চালুর ফলে শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রে পানির সংকট দেখা দেবে। আবার অসময়ে বাড়তি পানি ছেড়ে দেয়া হলে ভারতে বন্যার তীব্রতা বাড়বে। ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহারের ফলে অরুণাচল প্রদেশে ব্রহ্মপুত্রের ওপর অবস্থিত প্রকল্পগুলো, বিশেষ করে আপারর সিহা ও লোয়ার ধানসিঁড়ি প্রকল্প ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
চীনের সঙ্গে ভারতের এই পানির মামলায় ভারত বাংলাদেশকে তার পাশে চাইছে বলে জানা গেছে। কেন চাইছে, এটা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ব্রহ্মপুত্র একটি আন্তর্জাতিক নদ, যা চীনের তিব্বত থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহমান। এ নদের ওপর চীনের বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে বা প্রবাহ হ্রাস পেলে ভারতের মতো বাংলাদেশেও তার বিরূপ পড়তে পারে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ যদি ভারতের সঙ্গে হাত মেলায় তাহলে তার মামলাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অধিকতর গ্রাহ্যতা পাবে। চীনের বিপরীতে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হবে। ভারত তাই বাংলাদেশকে কাছে টানতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানির মামলায় বাংলাদেশের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা, তাতে বাংলাদেশ কি করবে বা কি করা উচিত, সেটা অবশ্যই গভীর বিচার-বিবেচনার বিষয়।
ভারতের মতো চীন বাংলাদেশকে নিয়ে কোনোরূপ টানাটানি করছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। ভারতের অভিযোগ, চীন নাকি ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে কোনো সমঝোতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার চেষ্টা করছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ কথা জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। পত্রিকাটি বলেছে, ‘ব্রহ্মপুত্রের পানির অংশীদারিত্ব পেতে ভারতের বিরুদ্ধে চীন বাংলাদেশকে উৎসাহিত করতে চেষ্টা করছে।’ এর আগে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস-এ বলা হয়, ‘এটা বোধগম্য বিষয়, ভারত ড্যাম নির্মাণ ও হাইড্রোলজিকাল ডাটা প্রাপ্তির বিষয়ে চীনের সঙ্গে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে চাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় একই ধরনের অধিকার সংরক্ষণ করে।’ বলাবাহুল্য, এ বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক ও প্রনিধানযোগ্য। এ কথার মধ্যে চীনের বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার কোনো আভাস-ইঙ্গিত নেই। ব্রহ্মপুত্রের পানির অংশীদারিত্ব পেতে চীন বাংলাদেশকে উৎসাহিত করছে, এ কথার মধ্যে সেটাও প্রতীয়মান হয় না। উল্লেখ করা দরকার, ভারত অভিন্ন নদীর উজানে যত ড্যাম বা বাঁধ নির্মাণ করেছে, সেগুলোর নির্মাণগত তথ্য ও হাইড্রোলজিক্যাল ডাটা বাংলাদেশকে কখনই সরবরাহ করেনি। ভারত যখন ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীনের নির্মিত ড্যাম ও হাইড্রোলজিক্যাল ডাটা চাইছে তখন যুক্তির খাতিরে চীনের তরফে এ কথা বলা হয়েছে। এখানে বাংলাদেশকে উসকানো হয়নি। শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আচরণটা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্রের উজানে তিব্বতে চীন যে বাঁধ নির্মাণ করেছে, তা জাংমু ড্যাম নামে পরিচিত। ২০০৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ২০১৪ সালে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এর উচ্চতা ৩৮১ ফুট, দৈর্ঘ্য ১২৭৬ ফুট এবং বেজমেন্টের প্রশস্ততা ২৪৯ ফুট। এর রিজার্ভারের সংরক্ষণ সক্ষমতা প্রতিদিন ৮ কোটি ৬৬ লাখ কিউবিক মিটার। প্রায় ১ লাখ ৫৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা এ প্রকল্পের আওতাধীন। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এই প্রকল্প থেকে চীন প্রতিবছর ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
প্রকল্পটির পরিকল্পনা ও নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারত উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। এ নিয়ে চীনের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছে। জানিয়েছে, ভাটির দেশ হিসেবে ভারতে প্রকল্পটির বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশে পানির সংকট দেখা দেবে। চীন অবশ্য বরাবরই ভারতকে আশ্বস্ত করেছে এই বলে যে, প্রকল্পটির প্রভাব ভারতে অতি সামান্যই পড়বে। এটি কেবলমাত্র পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। পানি সংরক্ষণ কিংবা প্রত্যাহার কোনোটিই করা হবে না।
ভারত শুরু থেকেই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানতে চেয়েছে। কিন্ত চীনের সঙ্গে তার এ সংক্রান্ত কোনো সমঝোতা ও চুক্তি না থাকায় এ তথ্য পায়নি। ফলে চীনের বক্তব্য যাচাই করার উপায় তার নেই। এ কারণেই চীনের কথায় ভারত আস্থা স্থাপন করতে পারছে না। ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীনের এ ধরনের আরো বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য প্রক্রিয়াও চলছে। ভারতের আশঙ্কা, চীনের বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো কার্যকর হলে ব্রহ্মপুত্রে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হবে। এতে ভারত পানি থেকে বঞ্চিত হবে। আর যদি এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ ও পানি প্রত্যাহারের বিষয় যুক্ত হয় বা থাকে তবে পানি নিয়ে ভারত বড় ধরনের সংকটে পড়ে যাবে। ব্রহ্মপুত্রে ভারত যেসব বিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প গড়ে তুলেছে সেগুলো অকার্যকর হয়ে পড়বে।
ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে ভারতের এই উদ্বেগ শঙ্কার প্রেক্ষাপটে তার যুক্তি ও বক্তব্য হলো, উজানের দেশ হিসেবে চীন ভাটির দেশ ভারতকে না জানিয়ে, সম্মতি বা চুক্তি না করে এ ধরনের প্রকল্প বা স্থাপনা গড়ে তুলতে পারে না। এটা আন্তর্জাতিক প্রথা-বিধির লঙ্ঘন। গত প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল ধরে ভারতের কাছে বাংলাদেশ ঠিক একথাটিই বলে এসেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর প্রত্যেকটিতেই ভারত বাঁধ নির্মাণ করেছে। এসব বাঁধের মাধ্যমে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের নদী, প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি, উৎপাদন ব্যবস্থা ইত্যাদিকে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ শুরু থেকেই বলে আসছে, উজানের দেশ হিসেবে ভারত এভাবে বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। ভারত কখনোই বাংলাদেশের এ কথায় কান দেয়নি। নির্মম পরিহাস এই যে, বাংলাদেশ এতদিন ভারতকে যা বলে এসেছে, ভারত এখন তাই চীনকে বলছে। ভারত চীনের কাছে বাঁধের তথ্য ও হাইড্রোলজিকাল ডাটা চাইছে। বাংলাদেশও ভারতের কাছে একই তথ্য ও ডাটা চেয়েছে। ভারত তা দেয়নি। বাংলাদেশ অভিন্ন সবগুলো নদীর পানি বণ্টনে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছে। গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে অসম একটি চুক্তি ছাড়া ভারত আর কোনো নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তি করেনি। চুক্তিতে রাজি হয়নি। তিস্তার পানি নিয়ে চুক্তি করার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও করেনি। তিস্তার পানি চুক্তি এখন হিমাগারে। অথচ এই ভারতই এখন চীনের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে চুক্তি করতে চাইছে।
ব্রহ্মপুত্র শুধুমাত্র বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ নদ নয়, এটা একটা বিশাল অববাহিকা। তিব্বতের মানস সরোবরের পূর্বাংশের চেমায়দহ হিমবাহ থেকে এর উৎপত্তি। তিব্বতে এর নাম ইয়ারলাং সংপু। তিব্বতেই এর নাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন নাম হয়েছে ডিহং। এ নামেই সাদিয়া নামক স্থানে ভারতের আসামে প্রবেশ করেছে। আসামে এর নাম ব্রহ্মপুত্র। প্রায় বিপরীত দিক দিয়ে ঘুরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র কুড়িগ্রামের মহিজিয়ালি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গাইবান্ধা, বগুড়া, পাবনা, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও ঢাকার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যুমনা নামে গোয়ালন্দে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশে এর একটা বড় অংশ যমুনা নামে অভিহিত। আগে ব্রহ্মপুত্র জামালপুর ও ময়মনসিংহের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরব বাজারের কাছে মেঘনায় পতিত হতো। এখন এ ধারাটি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। চীন থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত এ নদের দৈর্ঘ্য ২৬৭০ কিলোমিটার। চীনে ১৪৪৩ কিলোমিটার, ভারতের আসামে ৮২০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশে ৪২৫ কিলোমিটার। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের দৈর্ঘ্য এ হিসাবে মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।
পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, ইয়ারলাং সংপু থেকে ব্রহ্মপুত্রে যে পরিমাণ পানি আসে তা মোট পানির ২০ শতাংশের মতো। ৮০ শতাংশ পানি আসে ভারতের ডিবাং, লোহিতসহ উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্বের অন্তত ৪৫টি উপনদী থেকে। আসাম বিশ্বের অন্যতম বৃষ্টিবহুল এলাকা হওয়ায় ব্রহ্মপুত্রে পানির কোনো সমস্যা হয় না। উপনদীগুলো বৃষ্টির পানি বয়ে এনে ব্রহ্মপুত্রে ঢেলে দেয়। এই হিসাবে বলা যায়, চীন মোট প্রবাহের ২০ শতাংশের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পানি সরিয়ে নিলেও ভারতের বড় রকমের কোনো সংকটে পড়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু ভারত ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে যে খেলা খেলছে, তাতে বাংলাদেশের শুকিয়ে মরার ভয়াবহ আশঙ্কা বিদ্যমান। পানি বিশেষজ্ঞ এসআই খানের তথ্য অনুযায়ী বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্র ও তার উপ-নদীগুলো দিয়ে বাংলাদেশে পানি আসে মোট পানির ৫১ শতাংশ। আর শুকনো মৌসুমে আসে ৯০ শতাংশ। তাই ব্রহ্মপুত্রের পানি ভারত ছিনতাই বা সরিয়ে নিলে বাংলাদেশ কি ভয়ঙ্কর অবস্থায় পড়বে, সেটা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশে পানি আসে সাধারণত তিনটি অববাহিকা থেকে। এগুলো হলো : গঙ্গা অববাহিকা, পদ্মা অববাহিকা ও মেঘনা অববাহিকা। পানির অপর গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো বৃষ্টি। তিনটি অববাহিতকার নদীর উৎসস্থল ভারতে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। এগুলোতে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এ পর্যন্ত এসব নদীতে তিন হাজার ৬শ বাঁধ দিয়েছে ভারত। আরও এক হাজার বাঁধ নির্মাণের কাজ অব্যাহত আছে। এসব বাঁধের মাধ্যমে সে সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় যেসব বিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প সে গড়ে তুলেছে তাতে এই দুই অববাহিকা থেকে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ হয়ে এসেছে। শুকনো মৌসুমে পদ্মা ও শাখা নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও তিস্তায়ও পানি থাকে না। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে একই দশা দাঁড়াবে মেঘনা ও তার শাখা নদীগুলোর।
ব্রহ্মপুত্রে চীনের বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার অনেক আগেই ভারত ব্রহ্মপুত্র ও তার পানির উৎস গুলোর ওপর নানা প্রকার প্রকল্প নির্মাণ করেছে। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক নদী সংকোশের পানি গঙ্গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সংকোশ ব্রহ্মপুত্রের পানির অন্যতম বড় উৎস। অন্য এক প্রদায়ক নদী রাঙ্গার ওপর ভারত বাঁধ নির্মাণ করেছে। আসামের পাগলা দিয়াতেও একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ। এছাড়া ব্রাহ্মপুত্রের পানির উৎস লাংপি, রাইডাক, কপিলি, সুবানসিঁড়ি, ডায়াং প্রভৃতি নদীতে নানা প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্রের পানি সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বলা যায়, ভারত অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ বিরোধী পানিনীতি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশকে শুকিয়ে ও ডুবিয়ে মারার ভারতীয় পানিনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারিভাবে মোটেই সোচ্চার নয়, প্রতিকার-প্রতিবিধানের ব্যাপারেও যথেষ্ট সক্রিয় নয়। বর্তমান সরকার তো ভারত তোষণে এতই ব্যস্ত ও মগ্ন যে, পানির ব্যাপারে টুঁ শব্দ করতেও যেন নারাজ। তিস্তার পানি চুক্তি করে কৃতিত্ব হাসিলের মওকাও এখন সরকারের হাতছাড়া। ভারতের সঙ্গে সরকারের এত মধুর সম্পর্ক অথচ যৌথ নদী কমিশনের একটি বৈঠকে বসতে পর্যন্ত ভারতকে রাজি করাতে পারেনি। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ইদানীং অভিন্ন নদীতে ভারতের গড়ে তোলা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরকার বিদ্যুৎ আমদানির প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করছে। এর মাধ্যমে বস্তুত এই বাঁধ, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং পানি প্রত্যাহারকেই মেনে নেয়া হচ্ছে।
দেশ, জাতির ভবিষ্যৎ ও অস্তিত্বের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে পানির মামলায় কোনোরূপ ছাড় দেয়ার অবকাশ থাকতে পারে না। আজ যেমন চীনের বিরুদ্ধে ভারত দাঁড়িয়ে গেছে, ভারতের বিরুদ্ধেও তেমনি বাংলাদেশকে দাঁড়াতে হবে। ভারত যে দাবি, যুক্তি ও ভাষা ব্যবহার করছে বাংলাদেশকেও সেই দাবি, চুক্তি ও ভাষা ব্যবহার করতে হবে আগের চেয়ে আরো জোরালোভাবে। চীনের বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে দাঁড়ানোর আগে বাংলাদেশকে বলতে হবে, অভিন্ন নদীসমূহে যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা ভেঙে দিতে হবে, পানি প্রত্যাহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে, নদী প্রবাহকে সর্বপ্রকার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে হবে। অতঃপর কোনো প্রকল্প নিতে হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা ও এক্যমত্যের ভিত্তিতে নিতে হবে।
বাংলাদেশেরই নয়, ভারতের বিশেষজ্ঞরাও বহুবার বলেছেন, পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ ও পানির বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে অববাহিকাভিত্তিক চুক্তি করা দরকার। অববাহিকাভিত্তিক আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হলে সংশ্লিষ্ট সকল দেশই প্রভূত পরিমাণে লাভবান হতে পারবে। পরিতাপজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ভারতের অনীহার কারণেই এটি এখন পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। ভারত দ্বিপাক্ষিক পানি চুক্তি ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খুবই আগ্রহী, বহুপাক্ষিক, আঞ্চলিক বা অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠায় মোটেই উৎসাহী নয়। এখন কি এ ব্যাপারে ভারত রাজি হবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।